শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ভূরাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সত্ত্বেও বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু ইস্যুতে টানাপোড়েন বেড়েছে।
পলাতক শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগ নেতাদেরকে আশ্রয় দেয়া, ভারতীয় মিডিয়ায় ক্রমাগত মিথ্যা খবর ছড়িয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা এবং আঞ্চলিক আধিপত্য নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ভারতকে রুখতে চীন কি বাংলাদেশের পাশে থাকবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের বড় একটি অংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। সামরিক প্রযুক্তিতে চীনের সহায়তা বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের এই ভূমিকা কেবল সামরিক সহযোগিতা নয়, বরং ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল।
তারা মনে করেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভিত্তি শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক সহযোগিতাতেও দৃঢ়। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে।
অন্যদিকে, আমেরিকা বাংলাদেশে চীনের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে কখনোই আপত্তি জানায়নি। তবে তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। আমেরিকা এবং চীনের বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যা ঢাকার জন্য একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জও।
চীনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভারত-বিরোধী মনোভাব চীনের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে চীন তার সামরিক ও অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায়। তবে, চীনের এই সমর্থন বাংলাদেশকে কতটা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা দিতে পারবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, চীন, ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে নিজের স্বার্থ রক্ষা করাই বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর দক্ষ কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই জটিল ভূরাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশ সফল হতে পারে তাদের মত।
আপনার মতামত জানানঃ