যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা যখন অস্থির, তখন মার্কিন জনগণ মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে হাজির হচ্ছেন। এই নির্বাচন ঘিরে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্ড, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন সম্পদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নির্বাচনী ফলাফলের অপেক্ষায়, যা মার্কিন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এই নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসের মধ্যে যিনিই বিজয়ী হোন না কেন, এর ফলে মার্কিন কর ও বাণিজ্যনীতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভিন্নধর্মী প্রভাব পড়তে পারে। ভোটের ফলাফল মার্কিন ডলার ও বন্ড মার্কেটসহ বিশ্বের আর্থিক বাজারেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ভোটের শুরুতেই দেখা গেছে যে, দেশজুড়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট কাউন্টির ভোট গণনায় প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে রাতের আগ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
বস্টন পার্টনার্সের গ্লোবাল মার্কেট রিসার্চ বিভাগের পরিচালক মাইক মুলেনি বলেন, এটি আমার কর্মজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। ট্রাম্প ও হ্যারিসের বিজয়ের ওপর নির্ভর করে মার্কিন নীতি ভিন্ন ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে শক্তিশালী অর্থনীতি, কর্পোরেট মুনাফা ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর ফলে মার্কিন স্টক মার্কেট উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এস অ্যান্ড পি ৫০০ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নির্বাচনের জন্য নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। তবে মঙ্গলবার মুদ্রাবাজারে রাতভর অস্বাভাবিক মূল্য ওঠানামার ঝুঁকি মোকাবিলায় বিনিয়োগকারীদের রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
বাজারের বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতির প্রভাবেই বাজারে দরের ওঠানামা হয়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্ক বৃদ্ধি এবং কর কমানোর প্রভাবের জন্য মেক্সিকান পেসো, ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ারের মতো ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ওঠানামা দেখা গেছে। এছাড়া, আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোতেও শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার, নির্বাচনি জরিপে হ্যারিস সামান্য এগিয়ে থাকার ফলে বাজারে কিছু অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। জন হ্যানকক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ম্যাট মিসকিন বলেন, আগামী সপ্তাহে নিশ্চিত ফলাফল পেলে হয়তো বাজারের এই অবস্থান শক্তিশালী হবে, নয়তো নতুন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হবে।
হ্যারিসের বিজয়ে বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চতর করনীতি নিয়ে আশা করা হচ্ছে। যা কর্পোরেট আমেরিকাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। তবে ডেমোক্র্যাটদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের সম্ভাবনা খুবই কম।
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের বিশ্লেষকদের মতে, হ্যারিস বিজয়ী হলেও, তিনি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটের মুখোমুখি হবেন। যা তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলোকে অনেকাংশে ব্যাহত করবে।
বিনিয়োগকারীরা ২০০০ সালের নির্বাচনের অনিশ্চয়তার কথা স্মরণ করছেন। ওই সময় ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনার ফলে এক মাসের জন্য ফলাফল স্থগিত ছিল। সেই সময়ে এস অ্যান্ড পি ৫০০ প্রায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। এই বছরও অনিশ্চিত ফলাফলের সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের চিন্তিত করছে।
মিলার টাবাকের প্রধান বাজার কৌশলবিদ ম্যাট ম্যালি বলেন, নির্বাচনের অনিশ্চয়তা একটি বড় সমস্যা, কারণ ২০০০ সালের নির্বাচনে আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি দেখেছিলাম।
এস অ্যান্ড পি ৫০০ এর সাম্প্রতিক দরপতন, মেগাক্যাপ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মিশ্র আয়ের রিপোর্ট এবং নির্বাচনি উদ্বেগ মিলে বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি করছে। ওয়াল স্ট্রিটের ভয় সূচক হিসেবে পরিচিত ভিআইএক্স সূচক এখন ২২ এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও সতর্কতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ