পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অসহায়দের আশ্রয় দেবে, আইনি নিরাপত্তাসহ তাদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করবে পুলিশ, এমনি কথা ছিল আইনে। সম্প্রতি সরকার জরুরি পুলিশি সহায়তা পেতে জাতীয় জরুরি সেবার জন্য ৯৯৯ ডিজিটের নম্বরও চালু করেন। এতে ফোন করে যেকোনো পরিস্থিতিতে আইনি সেবা নিতে পারবে মানুষ। কিন্তু দেখা গেছে যে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ উল্টো অভিযোগকারীকেই হয়ারানি করে। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের এক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন অভিযোগকারী নিজেই, তাকেই ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এমনি অভিযোগ তোলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নোয়াখালী জেলার সভাপতি বেলায়েত হোসেন। গতকাল সোমবার(১৮ জানু) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব কারণেই পুলিশের ওপর থেকে মানুষের ভরসা দিনদিন লোপ পাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বেলায়েত হোসেন জানান, গত ১২ জানুয়ারি নোয়াখালীতে তার বাড়ির অদূরে জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে ১৫-২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর অবস্থানের তথ্য পান। প্রতিবেশী এক যুবক ফোন করে তাকে বিষয়টি জানায়। এরপর তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানান। ৯৯৯ থেকে তাকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। ওই থানার এএসআই শাহিন তার কাছে জানতে চান, এক ঘণ্টা পর পৌঁছালে সন্ত্রাসীদের পাওয়া যাবে কি-না? জবাবে তিনি জানান, পাওয়া যাবে। এরপর পুলিশ এসে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে বেলায়েত হোসেনকেই থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে সারারাত তাকে আটকে রাখা হয়। প্রস্রাব করতে চাইলে তাকে শৌচাগারেও যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে সকালে তাকে আদালতে চালান দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় পুলিশ। তবে নানামুখী তদবিরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে তিনি স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী সবুজের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী ১৩ সন্ত্রাসীকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। অথচ এই সন্ত্রাসীদের খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ তাকে হয়রানি করে। এ ঘটনায় তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, যে-বাড়িতে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের কাল্পনিক তথ্য দিয়েছিলেন বেলায়েত, সেই বাড়ির মালিকের সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ কারণে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে তিনি পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানোর ব্যবস্থা করেন। এর আগেও তিনি একাধিকবার এমনটা করেছেন। অন্যান্যবারের মতো এবারও সেখানে কোনো সন্ত্রাসী পাওয়া যায়নি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে হয়রানি করায় তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুরো ঘটনা অবহিত আছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের সখ্যতা গড়ে ওঠার রেওয়াজ এদেশে পুরনো। ইদানিং এটা এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে পুলিশ আর সন্ত্রাসীদের আলাদা করে ভাবার সুযোগটুকুও অবশিষ্ট নেই। এমনকি পুলিশের বড় একটা অংশই জড়িয়ে আছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। সন্ত্রাসীরা যেভাবে জমি দখল, হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় ও মানুষের ওপর জোরজবরদস্তি করে বিভিন্ন কৌশলে টাকা ছিনিয়ে নেয়, পুলিশের অনেক সদসই এসব কাজে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতাসহ নিজেরাও করে থাকেন। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেও পুলিশের সহায়তা পায় না। উল্টো ফেঁসে যেতে হয় নিজেকেই। একারণে মানুষ দিনদিন পুলিশের ওপর থেকে বিশ্বাস সরিয়ে নিচ্ছে। মামলা করার মতো ঘটনা নিয়েও থানায় যেতে আগ্রহ দেখান না, নীরবে চেপে থাকেন পুলিশের হয়রানির ভয়ে। এমনকি স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীরাও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না। ক’দিন আগেও যশোরে এক আওয়ামী নেতাকে পুলিশ পিটিয়ে আহত করলে এখন তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মানুষ সন্ত্রাসদের হাত থেকে মুক্তি চাইলেও এখন সন্ত্রাসীদের পাশে পুলিশ বসায় তাদের হাত থেকেও মুক্তি চাইছেন। পুলিশ থেকে নিরাপদে থাকাটাও এখন আতঙ্কের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। মানুষ এখন আর পুলিশে ভরসা বিশ্বাস রাখতে চাইছে না। পুলিশের একেরপর এক বিশ্বাসভঙ্গের নজির মানুষকে এক অসহায় খাঁদে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করেন তারা। তারা মনে করেন, জরুরি সেবা পেতে সরকার যে ডিজিট চালু করেছেন, পুলিশের এহেন দায়িত্বে অবহেলা ও হয়রানির কারণে মানুষ আর ফোনে পুলিশের সেবা পেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে সমাজে বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/ডিএস/কেএইচ/১৪১৪
আপনার মতামত জানানঃ