দূরের গ্রহ ইউরেনাসের চতুর্থ বৃহত্তম চাঁদের নাম এরিয়েল। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এরিয়েল সম্পর্কে নতুন তথ্যের খোঁজ দিয়েছে। জেমস ওয়েবের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, ইউরেনাস গ্রহের একটি চাঁদে লুকানো এক মহাসাগর থাকতে পারে।
সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ কিছু লক্ষণ ইউরেনাসের চাঁদে খুঁজে পেয়েছে জেমস ওয়েব। ইউরেনাসের চাঁদ এরিয়েলে তরল পানি থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইউরেনাসের চাঁদ এরিয়েলে সমুদ্রে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করছেন। এমনিতেই মনে করা হয় এরিয়েলের পৃষ্ঠে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড বরফ রয়েছে। ইউরেনাস ও তার চাঁদ এরিয়েলের দূরত্ব সূর্য থেকে অনেক দূরে।
পৃথিবীর চেয়ে সূর্য থেকে ২০ গুণ বেশি দূরে অবস্থিত ইউরেনাস ও এরিয়েল। দূরত্বের কারণে সেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসে পরিণত হয়ে মহাকাশে হারিয়ে যায়। জেমস ওয়েবের তথ্যের কারণে এরিয়েলের পৃষ্ঠে ভিন্ন কিছু আছে বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিদেরা।
আগে মনে করা হতো, ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডল ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে আটকে থাকা চার্জযুক্ত কণার কারণে অণু ভেঙে যায় আর তখন কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত হয়। দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে ইউরেনাসের চাঁদের বর্ণালি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
নতুন তথ্য বলছে, এরিয়েলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উৎস বাইরে থেকে নয়; বরং অভ্যন্তরীণ অংশ থেকে আসতে পারে। সম্ভবত চাপা পড়ে থাকা কোনো মহাসাগর থেকে আসছে। এরিয়েল থেকে আসা আলোর বর্ণালি সংগ্রহ করে এমন তথ্য জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বর্ণালি বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, সৌরজগতে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড রয়েছে সেখানে। এরিয়েলের যে অংশ ইউরেনাসের দিকে স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে, সেখানে ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বরফ আছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এরিয়েলে কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতিও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস অ্যাপ্লাইড ফিজিকস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী রিচার্ড কার্টরাইট বলেন, কার্বন মনোক্সাইডের সেখানে থাকার কথা নয়। কার্বন মনোক্সাইডের স্থিতিশীল হওয়ার আগে মাইনাস ৪০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকতে হবে। এরিয়েলের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে বেশি।
এরিয়েলের পৃষ্ঠের বেশির ভাগ কার্বন-অক্সিজেন যৌগ বরফের নিচে আটকে থাকা তরল মহাসাগর থেকে তৈরি হচ্ছে। বর্ণালি বিশ্লেষণে কার্বনাইট খনিজ পদার্থের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রায় চার দশক আগে সর্বশেষ ভয়েজার-২ থেকে ইউরেনাস ও তার চাঁদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয় নাসার অ্যাপ্লাইড ফিজিকস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী ইয়ান কোহেন বলেন, সৌরজগৎ কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা জানতে ইউরেনাসের চাঁদের মহাসাগরের উপস্থিতি নতুন সুযোগ তৈরি করছে। ইউরেনাস সম্পর্কে জানতে ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য অপেক্ষায় আছি আমরা।
আপনার মতামত জানানঃ