কোনো ইলেকট্রন-বন্দুক দিয়ে দেয়ালের দিকে একটা ইলেকট্রন ছুড়ে দিলে কী হবে? এ ক্ষেত্রে এমন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটবে, যা আমাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, অতিপারমাণবিক কণারা স্রেফ দেয়াল ভেদ করে চলে যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে এটা অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবে কোয়ান্টাম কণাদের পক্ষে এটা সম্ভব। এই ঘটনার নাম কোয়ান্টাম টানেলিং।
কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটতে কতটা সময় লাগে, এটা নিয়ে এত দিন বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তিন বছরের দীর্ঘ এক গবেষণার পর ২০১৯ সালে এর জবাব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। হাইড্রোজেন থেকে নির্গত একটি ইলেক্ট্রনের টানেলিং করে দেখেছেন তাঁরা। বলতে গেলে ঘটনাটা প্রায় চোখের পলকেই ঘটে যায়। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন অ্যাটোক্লক নামে একধরনের অপটিক্যাল গণকযন্ত্র।
যন্ত্রটি দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গের আয়নিত আলো ব্যবহার করা হয়। এই আলো ইলেকট্রনের নড়াচড়া অ্যাটোসেকেন্ডে মাপতে পারে। ১ অ্যাটোসেকেন্ড খুবই ক্ষুদ্র সময়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ১ অ্যাটোসেকেন্ড। বিজ্ঞানীরা করলেন কী, অ্যাটোক্লকের আয়নিত আলো দিয়ে একটা হাইড্রোজেনকে গোসল করালেন। আর এই কাজে তাঁরা প্রতি সেকেন্ডে ১০০০টি আলোর পালস ব্যবহার করেছেন।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, অতিপারমাণবিক কণারা স্রেফ দেয়াল ভেদ করে চলে যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে এটা অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবে কোয়ান্টাম কণাদের পক্ষে এটা সম্ভব। এই ঘটনার নাম কোয়ান্টাম টানেলিং
এই ঘটনায় হাইড্রোজেন পরমাণুটিও আয়নিত হয়ে গেল। ফলে হাইড্রোজেনের কক্ষপথ থেকে একটা ইলেকট্রন টুপ করে বেরিয়ে এসে দেয়ালের ভেতর দিয়ে পালিয়ে গেল। বিজ্ঞানীরা কিন্তু বসে বসে এমনিতে সেটাকে পালাতে দেননি। তাঁরা দেয়ালের ওপারে বসিয়ে রেখেছিলেন একটা রিয়্যাকশন মাইক্রোস্কোপ, যেটা ইলেকট্রনটি নির্গত হওয়ার সময় তার ভরবেগ মেপে নিয়েছিল।
সঙ্গে আলোর পালসের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার পর ইলেকট্রনটির শক্তির পরিমাণও মাপার কাজে নিযুক্ত ছিল ডিটেক্টরটি। কণাবিদ্যায় কণা শনাক্ত করা হয় এই শক্তির মাত্রা হিসাব করেই। এটার একক হচ্ছে ইলেকট্রনভোল্ট। তবে তড়িৎ আধানের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। ইলেকট্রনটির শক্তির মাত্রা পরিমাপ করে ইলেকট্রনটির টানেলিং করতে কত সময় লাগতে পারে, তা বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে সক্ষম হলেন।
গবেষকেরা বললেন যে টানেলিং হতে ১ দশমিক ৮ অ্যাটোসেকেন্ডেরও কম সময় লাগার কথা! চোখের পলকেও বললে কম হয়ে যায়। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল হওয়ায় তাঁরা একটা সরল পরমাণু হাইড্রোজেনকে ব্যবহার করেছিলেন, যার কক্ষপথে কেবল একটা ইলেকট্রন রয়েছে।
কেননা, টানেলিং নিয়ে আগের পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, ভারী পরমাণুর একাধিক মুক্ত ইলেকট্রন একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার ফলে এটা টানেলিংয়ের সময়ের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে নির্ভুলভাবে টানেলিংয়ের সময় নির্ণয় করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষকদের দাবি হচ্ছে, অন্য কণাদের টানেলিংয়ের সময় মাপতে এই পরীক্ষা বেঞ্চমার্ক হয়ে থাকবে।
আপনার মতামত জানানঃ