প্রথম ‘সোলার স্পট’ ১৬১২ সালের দিকে নথিভুক্ত করেছিলেন আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক ইতালির গ্যালেলেও গ্যালিলি। গ্যালিলি ও তার অনুসারীরা বলেছেন ওই স্পট সূর্যের চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে।
সম্প্রতি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের রহস্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব– এমন এক রহস্য, যার কারণ উদঘাটনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ভাবিয়েছে। নতুন গবেষণা বলছে, ‘আমাদের তারা’র পৃষ্ঠের তুলনামূলক কাছাকাছি স্থান থেকে এ রহস্যের সামাধান শুরু হয়।
পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টিতে এর গুরুত্ব এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও সূর্য সম্পর্কে অনেক কিছুই বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও রহস্যময় হয়ে আছে। যার মধ্যে রয়েছে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং এটি ঠিক কোথা থেকে এসেছে।
সূর্যপৃষ্ঠে প্রথম ‘সোলার স্পট’ ১৬১২ সালের দিকে নথিভুক্ত করেছিলেন আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক ইতালির গ্যালেলেও গ্যালিলি। গ্যালিলি ও তার অনুসারীরা বলেছেন ওই স্পট সূর্যের চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে। কিন্তু গবেষকরা যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন সেটি হচ্ছে, এই চৌম্বক ক্ষেত্র কোথা থেকে এল।
আগে গবেষকরা বিশ্বাস করতেন, চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্যের গভীরেই রয়েছে এবং এর শুরু সূর্যপৃষ্ঠের প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার কিমি গভীর থেকে।
তবে, নতুন গবেষণা বলছে, চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্যপৃষ্ঠের ৩২ হাজার কিলোমিটার নিচ থেকেই শুরু হতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণার এইসব ফলাফল বিজ্ঞানীদের আরও সঠিকভাবে বিভিন্ন এমন শক্তিশালী সৌর ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলে রাতের আকাশে আলোকচ্ছটার দেখা মেলে।
এইসব ঝড় ধ্বংসের কারণ হতে পারে। যেমন– এটি পৃথিবী-প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করতে পারে, ঝামেলা পাকাতে পারে বিদ্যুতের গ্রিড ও রেডিও সংযোগে। তাই এ ধরনের ঘটনা কখন ঘটবে তা জানার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য আগে থেকে প্রস্তুত করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট৷
“গ্যালেলেওর পর থেকে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণ বের করা একটি উন্মুক্ত ধাঁধা হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন সৌর কার্যক্রমের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ; যেমন– পৃথিবীতে আঘাত হানার মতো সৌর ঝড়,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সেস ও ফলিত গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড্যানিয়েল লেকোয়েনেট।
“সৌর গতিবিদ্যার অনেক দিক রহস্যের জালে মোড়ানো থাকলেও আমাদের এ গবেষণাটি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রাচীনতম বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যার মধ্যে চিড় ধরানোর জন্য বড় ধরনের অগ্রগতি করেছে এবং ক্ষতিকর সৌর কার্যকলাপের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করতে আরও ভাল পথ খুলে দেবে।”
পৃষ্ঠে থাকা সোলার স্পট ও বিভিন্ন শিখা সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে চালিত হয়, যা সূর্যের ভেতরে ‘ডায়নামো অ্যাকশন’ নামের এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। এ সম্পর্কে আরও জানতে, সৌর চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুকরণের জন্য অত্যাধুনিক মডেল তৈরি করেছেন গবেষকরা।
যেখানে দেখা যায়, সূর্যের পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অতি-উষ্ণ আয়নযুক্ত গ্যাসের (প্লাজমা নামে পরিচিত) প্রবাহের বিভিন্ন পরিবর্তন একই অঞ্চলে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এর বিপরীতে গবেষকরা বলেছেন, তাদের তৈরি মডেলের গভীর স্তরের বিভিন্ন পরিবর্তন কম বাস্তবসম্মত সৌর ক্ষেত্র তৈরি করেছে, যা বিষুবরেখার পরিবর্তে সূর্যের মেরুতে কেন্দ্রীভূত হয়।
এইসব মডেল দেখিয়েছে, কীভাবে সূর্যের চৌম্বকীয় কার্যকলাপের সঙ্গে বিভিন্ন সোলার স্পটের সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন সিমুলেশনে দেখা নিদর্শনগুলোতে গ্যালেলেও’র সময় থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সোলার স্পটের অবস্থান ও সময়কাল মিলে যায়।
“আমার ধারণা গবেষণার এইসব ফলাফল বিতর্কিত হতে পারে,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র গণিত বিভাগের গবেষণা বিজ্ঞানী কিটন বার্নস।
আপনার মতামত জানানঃ