মানুষ নিজেদের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীর খোঁজে রয়েছে শত শত বছর ধরে। অন্য কোনো গ্রহে আর কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয়রান হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এখন এই সন্ধানের পথে এক আলোর দিশা পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গাতেই রয়েছে আমাদের মতো অনেকগুলো সভ্যতার অস্তিত্ব, যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি। অনেকগুলো মানে কতগুলো? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ছায়াপথে ভিনগ্রহবাসী প্রাণীর তৈরি এমন অন্তত ৩৬টি সভ্যতা রয়েছে।
, ছবি – সৌজন্যে – উইকিমিডিয়া কমনস
আমাদের নিজস্ব ছায়াপথেই রয়েছে কমপক্ষে ৩৬টি বুদ্ধিমান সভ্যতা। ঠিক মানবসভ্যতার মত। পৃথিবীর মত এমন ৩৬টি জায়গা রয়েছে যেখানে বুদ্ধিমানদের বসবাস।
কিন্তু তারা কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে উঠতে পারছেন না। কারণ দূরত্ব। কম করে ১৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে দূরে অবস্থান করছে তারা। ফলে তাদের পক্ষে কারও সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করাই সম্ভব হচ্ছেনা। এমনই দাবি করলেন গবেষকরা।
ফোর্বস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের সৌরজগতের বাড়ি যে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে, সেখানে ১০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে এবং নক্ষত্র প্রতি একটি করে এক্সোপ্ল্যানেট বা পৃথিবীসদৃশ গ্রহ থাকতে পারে। আমাদের সৌরজগতের সব গ্রহ সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা এ রকম গ্রহগুলোকে এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়।
মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রাণি বা পৃথিবীর মত এমন গ্রহ আরও রয়েছে। সেখানে সভ্যতাও রয়েছে। তা অনেক আধুনিক সভ্যতা। হয়তো পৃথিবীর চেয়েও আধুনিক। এমন ধারনা অনেকদিন আগে থেকেই রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
এমনকি এসব কথা মাথায় রেখে এলিয়েন, সসার, অন্য গ্রহের যান এমন না না বিষয় মাঝেমধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে। এবার সেই দাবিকেই আরও শক্তিশালী করল গবেষকদের এই নয়া তত্ত্ব।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক সহ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, একটি বুদ্ধিমান সভ্যতা তৈরি হতে সময় লাগে কম করে ৫ বিলিয়ন বছর বা ৫০০ কোটি বছর।
এর মধ্যেই এই সভ্যতাগুলি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কেন এমন মনে হচ্ছে যে আরও বুদ্ধিমান সভ্যতা রয়েছে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের মত ধাতু যুক্ত নক্ষত্র থাকা এমন সভ্যতা সৃষ্টি হওয়ার খুব বড় একটা শর্ত। সূর্যের মত ধাতু রয়েছে এমন নক্ষত্র ছায়াপথে যে কটি পাওয়া গিয়েছে তার থেকেই মনে করা হচ্ছে যে ৩৬টি মানুষের মত বুদ্ধিমান সভ্যতা থাকতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে তারা ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে শেষও হয়ে গেছে। সে তত্ত্বও নেহাতই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও অন্য কোনোখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব কি না—দীর্ঘদিনের এসব প্রশ্নের একটা দিশা মিলল এই গবেষণায়। তাঁরা অনুমান করছেন, অন্যান্য গ্রহে যেমন বুদ্ধিমান জীবনের উদ্ভব হয়েছিল, ঠিক তেমনই আমাদের গ্রহেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। পৃথিবীতে যেমন বুদ্ধিমান জীবন গঠনে প্রায় পাঁচ শ কোটি বছর সময় লেগেছিল, অন্যান্য গ্রহেও তেমনই সময় লেগেছিল। এ ছাড়া হিসাব করে দেখা গেছে, আমাদের পৃথিবীর মতোই একটি প্রযুক্তিগত সভ্যতা কমপক্ষে ১০০ বছর স্থায়ী হয়।
সর্বোপরি পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত সভ্যতার উত্থানের আগে বিবর্তনের জন্য ৪৫০ কোটি বছর লেগেছিল এবং এরপর যোগাযোগ করতে সক্ষমতা দেখা দিয়েছিল। অন্যান্য সভ্যতার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটতে পারে। উন্নত সভ্যতার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে যোগাযোগ সক্ষমতাকে ধরে নেওয়া হয়।
সহযোগী গবেষক ব্রিটেনের নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কনসেলিস বলেছেন, ‘মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া বুদ্ধিমান প্রাণীর উন্নত সভ্যতা আর কতটি রয়েছে, তার একটা আন্দাজ এই প্রথম পাওয়া গেল।’
১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন বিখ্যাত সমীকরণ ‘ড্রেক ইকুয়েশন’। এই সমীকরণের সমাধানের জন্য সাতটি মাত্রা বেছে নিয়েছিলেন ড্রেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কোনো গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে বছরে গড়ে কতগুলো নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে, একটি সভ্যতার অন্য বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সংকেত তৈরির দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় সময় কিংবা কোনো সময়সীমার মধ্যে ভিনগ্রহীদের পাঠানো সংকেত আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে পারে। ড্রেক কথিত এই সাতটি বিষয়ের মধ্যে খুব কম বিষয়ই রয়েছে, যেগুলো গণনাযোগ্য।
আপনার মতামত জানানঃ