খোলা জায়গায় রেখে দেওয়া আঙুর যেমন ক্রমশ শুকিয়ে যায়, তেমন অবস্থা চাঁদেরও। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহের আয়তন কমে ক্রমশ ছোট হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
জোয়ার-ভাঁটায় এখনও পর্যন্ত কোনও হেরফের নজরে পড়েনি বিজ্ঞানীদের। কর্তব্যে কোনও ফাঁকি দেবে না চাঁদ। এপ্রিলে বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণও যথাযথ ভাবেই সম্পন্ন হবে বলেই জানাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কত দিন? অতি সম্প্রতি ইউএসএ-র মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র নাসার বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতির উপগ্রহ চাঁদের আয়তন ক্রমশ কমছে।
আর তার জের নিয়ে চিন্তায় নাসা। চলতি বছরেই নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানো নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। তার কারণও রয়েছে।
অত্যন্ত ধীর গতিতে হলেও কমছে। নাসার হিসেব, গত কয়েক লক্ষ বছরে চাঁদের ব্যাস ৫০ মিটারের কাছাকাছি কমে গিয়েছে। নিষ্প্রাণ। মহাকাশে ভাসমান এবং হিমাঙ্কের বহু নীচে তাপমাত্রা হওয়ার জন্য প্রকৃত অর্থেই চাঁদ ‘জমে কাঠ’ হয়ে যাওয়া একটা পাথরের খণ্ডমাত্র। নিতান্ত দৈবগতিকে পৃথিবীর টানে বাঁধা পড়ে গিয়েছে বলেই আমরা তার অস্তিত্ব জানতে পেরেছি। চাঁদ সম্পর্কে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এমনটাই ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের।
চাঁদ ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। কারণ কয়েক লক্ষ বছর ধরে চাঁদের অন্তঃস্থল ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। যত ঠান্ডা হচ্ছে ততই চাঁদ যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫০ ফুট ছোট হয়েছে চাঁদের পরিধি। আর এই ছোট হয়ে যাওয়ার জের পড়ছে চাঁদের মাটির ওপর।
চাঁদের মাটিতে ক্রমশ চন্দ্রকম্প বাড়ছে। মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় বড় বড় ফাটল তৈরি হচ্ছে। চাঁদের উপরিভাগের মাটি একে অপরকে ধাক্কা মারছে।
চাঁদের ছোট হতে থাকা চাঁদে চন্দ্রকম্পও বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যা নাসার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
২০২৪ সালেই নাসা তার আর্টেমিস ৩ মিশন চাঁদে পাঠানোর কথা ভাবছে। যা মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাবে। চাঁদের মাটিতে মানুষের এই পা রাখার জন্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এই অংশই নভশ্চরদের চাঁদে পা রাখার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এখন সেই দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে।
চন্দ্রকম্পের জেরে সেসব ফাটল শুধু তৈরিই হয়নি, এখনও তৈরি হচ্ছে যখন তখন। এই অবস্থায় সেখানে মানুষের পা রাখা তাঁদের বড় বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
তাই এই মিশন নিয়ে এখন নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অনেকগুলি ফাটল দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তাঁরা খতিয়ে দেখেন ৫০ বছর আগে চাঁদে যে ভয়ংকর চন্দ্রকম্প হয়েছিল, তার জেরেই এই ফাটলগুলি তৈরি হয়েছিল। এখন বিজ্ঞানীরা চাঁদের মানচিত্র নির্মাণ ও সেখানকার কম্পনপ্রবণ স্থানগুলিকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিতকরণ শুরু করে দিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ