এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটাকে বলা হয় ‘এপ্রিল ফুল’ ডে। এই দিনটি পরিচিতদের বোকা বানানোর ‘শুভ মহরৎ’। তত্ত্ব অনুসারে, পাঁচ শতক আগে শুরু হয়েছিল এপ্রিল ফুলস ডে।
অনেকের অনুমান, ১৬ শতকে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগারি জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারে পরিবর্তনের সময়কাল থেকেই এই ১ এপ্রিল উদ্যাপন হয়ে থাকে। ক্যালেন্ডার মাফিক, ১৫৮২ সালে প্রথমবার পয়লা জানুয়ারি থেকে নতুন বছর শুরু হয়। তার আগে, জুলিয়ান ক্যালেন্ডার মতে, ১ এপ্রিলকে বছরের প্রথম দিন ধরা হত।
অর্থাৎ জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সময়ে মার্চের শেষ পর্যন্ত মনে করা হত বছরের শেষ। আর বছরের শুরুর দিনটি হল এপ্রিলের প্রথম দিন। যদিও গ্রেগারি জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারে সেটি পাল্টে যায়। তবে গ্রেগারি জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনা হলেও, তা অনেকেই মেনে নিতে চাননি। অনেকেই ১ এপ্রিলকেই বছরের শুরুর দিন বলে মনে করতে থাকেন।
এরপর থেকে প্রচারিত হতে থাকে যে, যারা জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার না মেনে ১ এপ্রিলে নববর্ষ পালন করবে, তাদের ‘বোকা’ বলা হবে। তাদের নিয়ে হবে হাসি ঠাট্টা। গোটা ঘটনাই ইউরোপকে কেন্দ্র করে হতে থাকে। কারণ ফ্রান্সই প্রথম জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের স্বীকৃতি দিতে থাকে। সেই থেকেই ১ এপ্রিল থেকেই ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ পালিত হয়।
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে ‘বোকা বানাতে’ চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। তবে বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫ শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ।
তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোনো কোনো সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।’
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরি করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই। অন্যদিকে গুরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদ্যাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।’’
আপনার মতামত জানানঃ