এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের অস্তিত্ব খোঁজার মূল জায়গা হতে পারে শনি ও বৃহস্পতি গ্রহ প্রদক্ষিণকারী কয়েকটি উপগ্রহের মহাসাগর।
সৌরজগতে ছড়িয়ে থাকা বরফ কণায় এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।
গবেষকরা বলছেন, বরফের একটি ক্ষুদ্র কণাতেও এলিয়েনের চিহ্ন থাকতে পারে। সম্প্রতি নতুন এক অনুসন্ধানে ইঙ্গিত মিলেছে, আগামীদিনের বিভিন্ন টেলিস্কোপ আরও দ্রুত বাইরের জগতের প্রাণীদের চিহ্নিত করতে পারবে।
গবেষণা অনুসারে, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের অস্তিত্ব খোঁজার মূল জায়গা হতে পারে শনি ও বৃহস্পতি গ্রহ প্রদক্ষিণকারী কয়েকটি উপগ্রহের মহাসাগর।
গবেষকদের দাবি, শনি ও বৃহস্পতির ‘এনসেলাডাস’ ও ‘ইউরোপা’ উপগ্রহের বরফের কঠিন আস্তরণের নীচে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন মহাসাগর সৌরজগতের অন্যান্য জীবিত প্রাণীদের বাসস্থান হতে পারে।
এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের খুঁজে বের করতে গবেষকদের সেইসব উপগ্রহে থাকা মহাসাগরের পানিতে প্রাণের বিভিন্ন লক্ষণকে বিশ্লেষণ করতে হবে, যা করা বেশ কঠিন। কারণ এগুলো পৃথিবী থেকে অনেক দূরবর্তী গ্রহের বরফের কঠিন আবরণের মধ্যে লুকিয়ে আছে।
তবে, এক্ষেত্রে আশার সঞ্চালন ঘটাচ্ছে ওই বরফের কঠিন আবরণ থেকে বেরিয়ে আসা বরফগুলো, যা ‘প্লামস’ নামেও পরিচিত। এটি পরীক্ষা করার জন্য এরইমধ্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান পাঠিয়েছেন। আর এ বছর শেষে বিজ্ঞানীরা আরও একটি মহাকাশযান পাঠাবেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
গবেষণায় দেখা যায়, কীভাবে এসব ‘প্লাম’ থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় এলিয়েনের প্রাণের নানা লক্ষণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব, এমনকি তা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও।
“এই প্রথম আমরা দেখাতে পেরেছি, মহাকাশযানের ‘মাস স্পেকট্রোমিটার’ যন্ত্রের সাহায্যে কোষীয় উপাদানের ক্ষুদ্রাংশও শনাক্ত করা সম্ভব,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’-এর গবেষক ফ্যাবিয়ান ক্লেনার।
“এ গবেষণার ফলাফল আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে যে, আগামী দিনের বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে আমরা পৃথিবীর মতোই সৌরজগতের বিভিন্ন স্থানে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাব। আমাদের জোরালো বিশ্বাস, এগুলো থাকতে পারে বিভিন্ন এমন উপগ্রহতে, যেখানে মহাসাগর আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত ‘ক্যাসিনি’ নামের মিশনটি এরইমধ্যে শনির এনসেলাডাস উপগ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ফাটল খুঁজে পেয়েছে, যার সন্ধান মিলেছে মহাসাগর থেকে গ্যাস ও বরফের দানাযুক্ত বিভিন্ন ‘প্লাম’ বেরিয়ে আসায়।
চলতি বছরের অক্টোবরে ‘ইউরোপা ক্লিপার’ নামে আরেকটি মিশন চালু হতে পারে, যা বৃহস্পতির উপগ্রহ ‘ইউরোপা’তে এর পূর্বসূরির চেয়েও বেশি যন্ত্র নিয়ে এর চারপাশ পর্যবেক্ষণ করবে বলে উঠে এসেছে ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এতে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। ‘প্লাম’-এর নমুনা সংগ্রহের মূল প্রক্রিয়াটি অনুকরণ করা জটিল কারণ যানটির গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় ৫ কিলোমিটার। এর পরও যন্ত্রটির সহায়তায় পৃথিবীতে সফলভাবে এর নমুনা মডেল বানাতে পেরেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় তরল পানিকে প্রথমে ভ্যাকুয়াম বা বায়ুশূন্য একটি জায়গায় পাঠানো হয়, যেখানে পানি ছোট ছোট ফোঁটায় বিভক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ফোঁটাগুলো সক্রিয় করতে গবেষকরা একটি লেজারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেন্সরও ব্যবহার করেছেন, যা মহাকাশযানে থাকা যন্ত্রের মতোই অনুকরণ করতে পারে।
এভাবে গবেষকরা দেখেছেন, ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশন পরিচালনার লক্ষ্যে তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র সেইসব ‘প্লাম’ থেকে সেলুলার উপাদান খুঁজে পেতে পারে। এমনকি তা কয়েক লাখ বরফের কণার মধ্যে একটি হলেও।
“নাসার ‘ইউরোপা ক্লিপার’ মহাকাশযানে থাকা ‘সারফেস ডাস্ট অ্যানালাইজার’ যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন বরফের উপগ্রহে প্রাণ বা প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার বিষয়টি আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও সহজ হতে পারে,” বলেন এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ও ‘ফ্রি ইউনিভার্সিটি বার্লিন’-এর ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স’ বিভাগের অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক পোস্টবার্গ।
“সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকলে তা নিশ্চিতভাবেই ভূপৃষ্ঠের জলাধারের মতো পরিবেশ থেকে বরফের কণায় আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।”
এ গবেষণার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘হাও টু আইডেন্টিফাই সেল ম্যাটেরিয়াল ইন এ সিঙ্গল গ্রেইন ইমিটেড ফ্রম এনসেলাডাস অর ইউরোপা’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেলস’এ।
আপনার মতামত জানানঃ