গণতন্ত্র সূচকে গতবারের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭৫তম। আর বাংলাদেশে এখনো ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশ করা ২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে (ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এ সূচক প্রকাশ করেছে ইআইইউ।
সূচকে প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছে ইআইইউ। সেগুলো হলো পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিকদের স্বাধীনতা—এ পাঁচটি ধাপে প্রাপ্ত নম্বর বা স্কোরের ওপর ভিত্তি করে সূচকে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার হালনাগাদ অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
২০২২ সালের ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ ৭৩তম অবস্থানে ছিল। আর ২০২৩ সালের সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ এখন ৭৫তম অবস্থানে।
ইআইইউ বলছে, সর্বশেষ ২০০৬ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধরন ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গণতন্ত্র টানা ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ তকমা পেয়ে আসছে।
হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বলতে ইআইইউ এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এ শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের ওপর সরকারের চাপ থাকে। বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয়। সাংবাদিকদের চাপ দেওয়া ও হয়রানি করা হয়।
দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ এমন শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এবারের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৮৭। পাঁচটি ধাপের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর করেছে নাগরিক স্বাধীনতা (৪ দশমিক ৭১) ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে (৫ দশমিক ৫৬)। সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদে (৭ দশমিক ৪২)।
সূচকে সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও আইসল্যান্ড।
২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে তলানিতে (১৬৭তম) রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ২৬। এর ওপরের দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার (১৬৬তম) ও উত্তর কোরিয়া (১৬৫তম)।
এবারের তালিকায় যুক্তরাজ্য ১৮তম ও যুক্তরাষ্ট্র ২৯তম অবস্থানে রয়েছে। রাশিয়ার অবস্থান ১৪৪তম। আর গণতন্ত্রের সূচকে চীন ১৪৮তম অবস্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের অবস্থান ৪১তম। শ্রীলঙ্কার ৭০তম। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরে রয়েছে ভূটান (৮১তম), নেপাল (৯৮তম) ও পাকিস্তান (১১৮তম)।
ইআইইউ জানিয়েছে, এবারের সূচকে ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ২৪টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। ৫০টির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশসহ ৩৪টি দেশ ও অঞ্চলে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। আর সবচেয়ে বেশি ৫৯টির শাসনব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি দেশের মধ্যে ৮টিতে (বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) চলতি বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিংবা হতে যাচ্ছে। এর অর্ধেক দেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নয়। সেই সঙ্গে সেখানে বাক্স্বাধীনতাসহ গণতন্ত্রের কয়েকটি পূর্বশর্ত অনুপস্থিত।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে ইআইইউ বলেছে, এসব দেশের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রীয় দমন–পীড়নের শিকার হয়েছে, হচ্ছে। আর এসব দেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারে পরিবর্তন কিংবা পূর্ণ গণতন্ত্রের সুযোগ নেই।
আপনার মতামত জানানঃ