বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলের তৃণমূলে যে কোন্দল ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে, সেটি মেটাতে বিভাগীয় নেতাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভক্তি ঠেকাতে সামনের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
কিন্তু এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দলটি কি তার অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে সক্ষম হবে? হলেও সেটি কতটা? এমন সব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় সাতই জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলাই ছিল ক্ষমতাসীনদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
এমন প্রেক্ষাপটে দলটির মধ্যে যারা ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী, তাদের সবাইকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ। একই সাথে দল থেকেও প্রতি আসনে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর ফলে তৃণমূলে কোন্দল বাড়তে থাকে, যা অনেক জায়গাতেই সহিংসতায় রূপ নেয়।
এমন কী নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরে এসে এখনও বিভিন্ন জেলায় বিভেদ দৃশ্যমান হচ্ছে, বিশেষ করে যে সব আসনে নৌকার প্রার্থীরা একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতেই তৃণমূলের কোন্দল ও বিভক্তি নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
“দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী, দলীয় প্রার্থী- সব মিলিয়ে সেখানে কিছু কিছু মান অভিমান, অন্তর্কলহ ছিল, যার রেশ এখনো শেষ হয়নি কিছু কিছু জায়গায়”, নির্বাচনের পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভা শেষে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
“তো সে অবস্থায় সব বিভাগীয় কমিটিকে আমাদের নেত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, বিভিন্ন জেলার যে যে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো, এগুলো সংশিষ্ট সকলকে ঢাকায় ডেকে এনে এর সমাধান খুঁজে বের করা হবে এবং সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে”, বলেন মি. কাদের।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগীয় কমিটি রয়েছে। মূলত: এসব কমিটির মাধ্যমেই তৃণমূলের বিরোধ মেটানোর পরিকল্পনা করেছে দলটি।
কিন্তু তৃণমূলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির পক্ষে সেটি পুরোপুরি দূর করা কঠিন হবে।
ফলে দীর্ঘমেয়াদে দলটির ভেতরে বিভেদ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কীভাবে এমন পরিস্থিতি?
সাতই জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য আওয়ামী লীগ কৌশল ছিল, ভোটের মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়া। দলের এই সিদ্ধান্তের কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল – সর্ব স্তরের নেতারা এবার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান। এবারের নির্বাচনে অন্তত ২২০টি আসনে সাড়ে তিনশোর বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যার মধ্যে ২৬৯ জনই ক্ষমতাসীন দলের।
প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই নৌকার প্রার্থীদের সাথে তাদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। কিন্তু পরিস্থিতি আরও নাজুক হয় নির্বাচনের পর। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক শীর্ষ নেতা ও হেভিওয়েট নৌকার প্রার্থীও এবার হেরেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন কিন্তু জিততে পারেনি এমন পরিচিত নেতাদের মধ্যে আছেন বিগত সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
এছাড়াও হেরেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া , টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
পরাজয়ের পর তাদের কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন ভোটের ফলাফলে কারসাজির। নির্বাচনে অনিয়ম, কালো টাকা ও পেশিশক্তির কাছে হেরেছেন বলেও তাদের কেউ কেউ দাবি করেন। এরপর বাড়তে থাকে সহিংসতা।
নির্বাচনের পর গত এক সপ্তাহে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে।কোথাও কোথাও দোকান, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’র (এইচআরএসএস) হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পরবর্তী এক সপ্তাহে সারা দেশে শতাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
এতে অন্তত ১৫ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
নির্বাচনের পর সহিংসতার খবর বেশি পাওয়া গেছে মুন্সিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী, রাজশাহী, পিরোজপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, পটুয়াখালী-সহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায়।
এসব সংঘাত-সহিংসতার বেশিরভাগই ঘটেছে নৌকা প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে, যারা প্রায় সকলেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় সদস্য। মুন্সীগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা মৃণাল কান্তি দাস।
নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন মি. দাস। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় এই জেলায় একজন মারাও গেছেন। সেখানে এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্নপক্ষের বিরোধ স্পষ্ট। একই ভাবে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে ফরিদপুরে।
ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ছেন আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ।
নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মি. আজাদের সমর্থকরা আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না। ফরিদপুরের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় সম্প্রতি তাকে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সেই অনুষ্ঠানে মি. আজাদের সমর্থকদের ডাকা হয়নি। একই জেলার আরেক আসনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। তিনি এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো–চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমানের কাছে, যিনি নিক্সন চৌধুরী নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। কাজী জাফর উল্যাহর সাথে মি. চৌধুরীর দ্বন্দ্বের কথা অজানা নয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নিক্সন চৌধুরী এর আগে দুইবার বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং জিতেছেন।
একইভাবে, মানিকগঞ্জ-২ আসনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন তিনবারের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতেছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু।
নির্বাচনে হারার পর মিজ মমতাজও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। ফলে বিজয়ী প্রার্থীর সাথে তার দ্বন্দ্বও এখন চরমে পৌঁছেছে।
বিরোধ মেটাতে যে পরিকল্পনা
প্রাথমিকভাবে আটটি বিভাগীয় কমিটি দিয়েই তৃণমূলে বিরোধ মেটানোর পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারাই এসব কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন।
কোন এলাকায় কার সাথে কার বিরোধ, সেটি চিহ্নিত করাই হচ্ছে কমিটির প্রথম কাজ।নএরপর প্রতিটি সেসব জেলায় গিয়ে চিহ্নিত পক্ষগুলোর সাথে আলোচনা করে বিরোধ মেটাতে কাজ করবে কমিটি।
“ইতিমধ্যেই সবগুলো কমিটির কাছে নির্দেশনা
পৌঁছে গেছে এবং তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। মি. নাছিম নিজেও খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কমিটিতে রয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, কোন্দলে লিপ্ত পক্ষগুলোর সাথে বসার পরও যদি বিরোধ না মেটে, তাহলে তাদেরকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে বসানো হবে। এরপরও যদি তারা দলের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অমান্য করেন, সেক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনে বহিষ্কার’ করা হবে।
“আমরা আশা করছি সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে। তারপরও যদি কেউ অমান্য করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর হবো। প্রয়োজনে বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. নাছিম।
তৃণমূল কী বলছে?
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ‘মানসিক দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। এ অবস্থায় বিভাগীয় কমিটির পক্ষে বিরোধ মেটানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন তারা।
“এটা একটা মানসিক ব্যাপার। ইচ্ছা করলে এটি মেটানো যাবে না”, বিবিসি বাংলাকে বলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা।
তবে দল থেকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হলে মাঠ পর্যায়ের নেতারা বেশি দিন বিরোধ পুষে রাখবেন না বলে মনে করছেন তিনি।
এক্ষেত্রে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরাসরি বার্তা দেওয়া হলে দ্রুতই কোন্দল মিটে যাবে বলে মনে করছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. লুৎফর রহমান।
“কমিটি সবখানে বিরোধ মেটাতে পারবে না। দ্রুত সমাধান করতে হলে নেত্রী কিংবা অন্ততপক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদককে সবার সাথে বসতে হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. রহমান।
তবে তারা দু’জনই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
“এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাহলে বিরোধ আরও বেড়ে যেত”, বিবিসি বাংলাকে বলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা। ফরিদপুর-৩ আসনে হারার পর বিজয়ী প্রার্থী এ কে আজাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের।
বিবিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কেন্দ্র থেকে যে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হলে সেটি মেনে নিবেন বলে জানিয়েছেন মি. হক।
“এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব না। নেত্রী বললে অবশ্যই মেনে নিব”, বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
বিরোধ মিটবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে এবার তৃণমূলে আওয়ামী লীগের যে রেষারেষি ও কোন্দল দেখা যাচ্ছে, সেটি আগে থেকেই ছিলো।দল সবাইকে ভোটে লড়ার সুযোগ করে দেওয়ায় বিষয়টি এতটা প্রকাশ্যে এসেছে। “তাদের এই কোন্দলের ঐতিহাসিকতা আছে। কাজেই এটি সহসাই মিটবে না”, বিবিসি বাংলাকে বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন।
আওয়ামী লীগ টানা গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে। এবার নির্বাচনে জিতে আবারও পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনও সরকার একটানা এত লম্বা সময় ক্ষমতায় ছিল না।
“একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের কেউই আর কর্মী থাকতে চান না, সবাই নেতা হতে চান।” বলেন মিজ নাসরিন। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা যেমন ক্ষমতাবান হয়েছেন, তেমনি তাদের সম্পদের পরিমাণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখা গেছে।
“রাজনীতি করলে এখন ক্ষমতা ও অর্থ দু’টোই অর্জন করা যায়। সে কারণে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে চান”, বিবিসি বাংলাকে বলেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।
এ পরিস্থিতিতে দলের মধ্যকার বিরোধ পুরোপুরি মেটানো প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন তিনি। “দল চাপ দিলে দেখা যাবে সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বিরোধ থেকেই যাবে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. আহমেদ।
এছাড়া দলের নির্দেশ অমান্য করলে বহিষ্কার করার যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হচ্ছে, সেটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
“এই কৌশল তারা আগেও প্রয়োগ করেছে। এরপর বহিষ্কৃত নেতাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার নজিরও তাদের রয়েছে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
সব মিলিয়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে সেটি আওয়ামী লীগের ভেতরে বিরোধ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন ড. জোবাইদা নাসরিন।
“আমার তো মনে হয় না তারা সত্যিকার অর্থে কোন্দল নিরসন করতে সক্ষম হবে, বরং দিন দিন এটি আরও বেড়ে যেতে পারে”, বিবিসি বাংলাকে বলেন মিজ নাসরিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের ভেতরকার যে সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ এখন দৌড়ঝাপ শুরু করেছে, ক্ষমতায় আসতে তারা নিজেই সেটি তৈরি করেছে।
শেষ পর্যন্ত কীভাবে দলটি এই সংকট মোকাবেলা করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আপনার মতামত জানানঃ