বিশ্বে বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী আছে যারা স্ত্রী হিসেবে জন্ম নিলেও পরবর্তীতে পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক প্রাণী পুরুষ হিসেবে জন্ম নিলেও একসময় স্ত্রী প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়। এরকমই কয়েকটি চমক লাগানো প্রাণীর কথা চলুন জেনে নেয়া যাক।
ক্লাওন ফিশ
এরা অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের প্রবালপ্রাচীরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। জন্মের সময় এদের সবগুলোই পুরুষ হিসেবে জন্ম নেয়। জীবনের এক পর্যায়ে স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত হওয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে এদের। কিন্তু একবার পুরুষ থেকে স্ত্রীতে রূপান্তরিত হলে আর পুরুষে ফিরে আসতে পারে না।
দুটি পুরুষ সদস্য একত্রে মিলনের সময় আকারে যেটি বড় সেটি স্ত্রীতে পরিণত হয়। এদের দলে কোনো স্ত্রী মাছ যদি মারা যায় তাহলে অন্য একটি পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত হয়ে শূন্যস্থান পূরণ করে।
হক ফিশ
প্রবালপ্রাচীরের পাশে বসবাসকারী মাছের আরেকটি প্রজাতি হলো হক ফিশ। স্ত্রী হিসেবে জন্ম নিলেও এরা পরিণত বয়সে পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। সামুদ্রিক মাছের অনেক প্রজাতির মাঝে এমন রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও হক ফিশে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।
এদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকলে পুনরায় পূর্বের লিঙ্গে ফিরে আসতে পারে। জন্মের সময় স্ত্রী হয়ে জন্মানোর পর যদি তা পুরুষে রূপান্তরিত হয়, তবে প্রয়োজন অনুসারে তা আবারো স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত হতে পারবে।
মোরে ঈল
অধিকাংশ মোরে ঈল জন্মগতভাবে পুরুষ ও স্ত্রী আলাদা আলাদাভাবে জন্মায়। সেগুলো বাকি জীবন এভাবেই থাকে। তবে কিছু কিছু ঈল প্রজাতি উভলিঙ্গের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। যেমন জেব্রা এবং ড্রাগন মোরে ঈল। জীবনের কোনো পর্যায়ে যদি পুরুষ সদস্যের সংখ্যা কমে যায় তবে তারা পুরুষে পরিবর্তিত হয়।
নর্দান কার্ডিনাল পাখি
মাঝে মাঝে দুই লিঙ্গধারী কার্ডিনাল পাখিতেও দেখা যায়। এই পাখির একদিকের অর্ধাংশ স্ত্রী পাখির মতো বাদামী-ধূসর পালকে আবৃত থাকে আর বাকি অর্ধাংশ পুরুষ পাখির মতো উজ্জ্বল লাল বর্ণের পালক দ্বারা আবৃত হয়ে থাকে।
ব্যাঙ
গবেষণাগারে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ব্যাঙের লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বন্য পরিবেশেও পুরুষ ব্যাঙের, স্ত্রী ব্যাঙে রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। ফসলের আগাছা দমনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক অ্যাট্রাজিনের প্রভাবে পুরুষ ব্যাঙ, স্ত্রী ব্যাঙে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই রূপান্তরের পর স্ত্রী ব্যাঙ স্বাভাবিক ব্যাঙের মতোই সফলভাবে সন্তান উৎপাদন করতে পারে।
বেয়ার্ড ড্রাগন
অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা খুঁজে পান, বেয়ার্ডেড ড্রাগন লিজার্ড ডিমের ভেতরে থাকার সময়ই তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে। গবেষকরা আরো দেখেছেন অদ্ভুতভাবে যারা পুরুষ থেকে স্ত্রীতে পরিবর্তিত হয় তারাই ভালো মাতৃগুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকে।
গবেষণায় জানা যায়, ডিম ফোটানোর সময় তাপমাত্রা যখন বেশি হয় তখন অধিকাংশ স্ত্রী ড্রাগনের জন্ম হয়। তাপমাত্রার প্রভাবে অন্যান্য প্রাণীরও লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। যেমন- কুমির, লিওপার্ড গেকো, সামুদ্রিক সবুজ কচ্ছপ ইত্যাদি। তাই বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণেও এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ