যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মুরফি বলেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে চলমান ইসরায়েলি হামলায় অনেক বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছে।
নির্বিচারে হামলা না চালিয়ে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু আরও সুনির্দিষ্ট করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মুরফি। তিনি মনে করেন, এতে বেসামরিক মৃত্যুর হার কমে আসবে।
ক্রিস মুরফি সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্য। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের এই বাসিন্দার দাবি, আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের আছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো তিনিও গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরোধী। তাঁর আশঙ্কা, যুদ্ধবিরতি হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে নিজেদের আরও সুসংগঠিত করতে পারবে হামাস।
তবে মুরফি মনে করেন, বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে ইসরায়েলের উচিত লক্ষ্যবস্তু সুনির্দিষ্ট করা।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সিনেটর বলেন, ‘আমি মনে করি, বেসামরিক নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। হামলার ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু সুনির্দিষ্ট করাটা গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যক।’
মুরফি আরও মনে করেন, ইসরায়েলের উচিত বিমান হামলা কমিয়ে স্থল অভিযান বাড়ানো। এতে বেসামরিক নিহতের সংখ্যা কমবে।
হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে মুরফি বলেন, হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে।
গাজায় বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মুরফি ও তাঁর ২০ জনের বেশি সহকর্মী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। ইসরায়েল যেন যুদ্ধের বিধিগুলো মেনে চলে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দুই দশক আগে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভুলগুলো করেছিল, তার থেকে যেন ইসরায়েল শিক্ষা নেয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে দেশটিতে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ যায়। ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এক মাসের বেশি সময়ে গাজায় নারী, শিশুসহ সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। ইসরায়েলি হামলা থেকে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, শরণার্থীশিবির—কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধাপরাধ করেছে
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই যুদ্ধাপরাধ করেছে।
ফলকার টুর্ক এখন পাঁচ দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে আছেন। এ সফরের অংশ হিসেবে তিনি গতকাল বুধবার গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংয়ের মিসরীয় দিক পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর। সেদিন ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
ইসরায়েল বলছে, হামাসের এ হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রেখেছে হামাস।
৭ অক্টোবর থেকেই গাজাকে অবরুদ্ধ করে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তারা গাজায় স্থল অভিযানও চালাচ্ছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১০ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি শিশু রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ফলকার টুর্ককে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ‘৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নৃশংসতা ছিল জঘন্য। তা ছিল যুদ্ধাপরাধ। যেমন যুদ্ধাপরাধ লোকজনকে জিম্মি করে রাখার বিষয়টি।’
ফলকার টুর্ক আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজনকে ইসরায়েলের সম্মিলিত শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিও একটি যুদ্ধাপরাধ। যেমনটা যুদ্ধাপরাধ বেসামরিক লোকদের বেআইনিভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা।’
আপনার মতামত জানানঃ