![](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2022/11/xBanking-GOLN-01-1024x536.jpg.webp.pagespeed.ic.5kqMKsLATG.webp)
কোনো ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বা অবনতির আশঙ্কা থাকলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয় গত বছরের জুলাইয়ে, বর্তমান গভর্নরের যোগদানের পর থেকে।
পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন সভায় যোগদানের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক তদারকি করে আসছেন। এরপরও গত এক বছরে বিশেষ তদারকিতে থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
দেশের এক–চতুর্থাংশ বা ১৫টি ব্যাংক এখন এমন বিশেষ তদারকির আওতায় রয়েছে। এই তদারকির কাজে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বাড়তি ভাতাও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তদারকির আওতায় থাকা একাধিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো তারল্য জমা রাখছে না, বন্ধ হয়নি এদের ঋণের অনিয়মও।
এসব ব্যাংকের বাইরে আরও তিনটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও কিছু বেসরকারি ব্যাংক অনিয়মের কারণে সংকটে পড়েছে। কিন্তু এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিশেষ তদারকির আওতায় আনছে না। এসব কারণে ‘তদারকি মডেল’ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। ফলে এসব ব্যাংক কোন উপায়ে সঠিক পথে ফিরবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া ব্যাংক খাত সঠিক পথে ফিরবে না। কারণ, এসব ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে জড়িত ও বড় গ্রাহকদের অনেকে প্রভাবশালী ও সরকারঘনিষ্ঠ। তাঁদের অনেকে সরকারের পদেও রয়েছেন। ফলে তাঁদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো নীতি প্রয়োগ করছে না। এর ফলে অনেক ভালো ব্যাংক দিন দিন খারাপ হয়ে পড়ছে। আমানতকারীদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
দুর্বল ব্যাংক আরও দুর্বল হচ্ছে
তদারকিতে থাকা ১৫ ব্যাংকের মধ্যে ৭টি চলছে সমন্বয়ক দিয়ে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে ৮ ব্যাংকে—সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
এসব ব্যাংকের মধ্যে গত এক বছরে (জুলাই ২০২২-জুন ২০২৩) ১২টিতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আবার নতুন নতুন ঋণ অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। আর খেলাপি ঋণ কমেছে শুধু বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণ করতে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক তা পালন করতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী এ নিয়ে বলেন, পর্যবেক্ষক-সমন্বয়ক দিয়ে ব্যাংকগুলোর খুব বেশি উন্নতি ঘটানোর সুযোগ নেই। কারণ, তাঁদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। ফলে তাঁরা ভূমিকাও রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক সত্যিকার অর্থে এসব ব্যাংকের উন্নতি চাইলে নিয়মনীতি পরিপালনে বাধ্য করলেই যথেষ্ট। এ জন্য কার ব্যাংক, কারা গ্রাহক—এসব বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। গুণগত পরিবর্তন আনতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সক্রিয় হতে হবে। এতেই আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে পারবে
মুস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, এসব ব্যাংকের মালিক ও গ্রাহকদের বেশির ভাগ সরকারঘনিষ্ঠ। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, এটা বড় প্রশ্ন। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক খাত ভালো করতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পর্যবেক্ষক-সমন্বয়ক দিয়ে ব্যাংকগুলোর খুব বেশি উন্নতি ঘটানোর সুযোগ নেই। কারণ, তাঁদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। ফলে তাঁরা ভূমিকাও রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক সত্যিকার অর্থে এসব ব্যাংকের উন্নতি চাইলে নিয়মনীতি পরিপালনে বাধ্য করলেই যথেষ্ট।
পুরো খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণ
এদিকে তদারকির বাইরে থাকা ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নানা ধরনের ছাড় দিয়েও ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে সফল হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ফলে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। অর্থাৎ ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। এই সময়টা ছিল ঋণখেলাপিদের জন্য সুবর্ণ সময়। তাদের জন্য বছর বছর নানা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও তারা ঋণ শোধ করেনি; বরং নতুন নতুন ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ