পৃথিবীর বাইরে পানির অস্তিত্ব থাকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল এবং অনুসন্ধানের শেষ নেই। কারণ পানির সঙ্গে প্রায় অনিবার্যভাবে জড়িয়ে থাকে প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়টি। এ পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে কোথাও কোথাও প্রাচীনকালে তরল পানির ধারা বা বরফের সম্ভাব্য অস্তিত্বের আভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। সম্প্রতি ফ্রান্স আর জার্মানির বিজ্ঞানীরা প্লুটোর চাঁদে পানির অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন।
এর আগে সৌরজগতের অন্য গ্রহ আর চাঁদসমূহে কীভাবে পানি বিস্তৃত থাকতে পারে সে বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা সৌরজগতের গ্রহগুলো আর চাঁদগুলো সম্পর্কে মানুষের ধারণা আরও স্বচ্ছ করে। প্রফেসর হিদেকি তানাকা এই গবেষণা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন। তাদের এই গবেষণা দ্য প্লানেটারি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। প্রফেসর হিদেকি তানাকা দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর বাইরে গ্রহ আর চাঁদসমূহে পানির অস্তিত্ব নিয়ে কাজ করছেন। প্লুটো গ্রহের চাঁদেও পরিবেশ নিয়ে রয়েছে তার অনবদ্য কাজ।
এবার পৃথিবী থেকে বেশ কাছেই অবস্থিত একটি তারকা সিস্টেমে পানির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ওই তারকার চারদিকে এখনও গ্রহগুলো কেবলমাত্র তৈরি হচ্ছে। শিশু এই তারকা সিস্টেমটির নাম পিডিএস ৭০। এটি আমাদের থেকে ৩৭০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
সিএনএন জানিয়েছে, বিজ্ঞানীরা এই নক্ষত্র থেকে পানির বাষ্প উড়তে দেখেছেন। ফলে তাদের বিশ্বাস, এই নক্ষত্রের চারদিকে যেসব গ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে তাতে একদিন প্রাণ ধারণ সম্ভব হবে। পিডিএস ৭০ মাত্র ৫৪ লাখ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এটি আমাদের সূর্য্যের থেকে বেশ ঠাণ্ডা। এর চারদিকে দুইটি দৈত্যাকৃতির গ্যাসের পিণ্ড ঘুরছে। এগুলো ভবিষ্যতে গ্রহে পরিণত হবে। সেখানে আরও একটি গ্রহ থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এই নক্ষত্রেই পানির বাষ্পের সন্ধান পেয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। পিডিএস-৭০ থেকে ১৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরেই এই বাষ্পের সন্ধান পাওয়া গেহচে। পৃথিবী ও সূর্য্যের মধ্যেকার দূরত্ব হচ্ছে ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার। অর্থাৎ, এই নক্ষত্রটিতে যেসব গ্রহ গড়ে উঠছে তাতে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারবে।
এর আগে একদল গবেষক বেশ নিশ্চয়তা দিয়ে দাবি করেছেন, ‘পানি দিয়ে ঢাকা’ দুটি গ্রহ আবিষ্কার করেছেন তারা। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমিতে’ বৃহস্পতিবার পানিসমৃদ্ধ গ্রহের সন্ধান পাওয়া নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
এসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আমাদের সৌরজগৎ থেকে প্রায় ২১৪ আলোকবর্ষ দূরের এক সৌরজগতে কেপলার-১৩৮সি এবং কেপলার-১৩৮ডি নামের এই দুটি গ্রহ অবস্থান করছে।’ উল্লেখ্য, এক আলোকবর্ষ দূরত্ব হচ্ছে আলো এক বছরে যতটা পথ ভ্রমণ করে সেই দৈর্ঘ্য।
বিজ্ঞানীরা এর আগে এমন ধারণা করলেও তেমন কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি। তবে এবার তারা বেশ জোরালো প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছেন।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থার (নাসা) হাবল এবং স্পিটজার টেলিস্কোপ এই গ্রহ দুটির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের নেতৃত্বে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণাকাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ক্যারোলিন পিয়াউলেট।
মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণাকর্মের সহলেখক অধ্যাপক বিয়র্ন বেনেকি বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখিয়েছি, গ্রহ দুটি প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন। এদের আয়তনের একটি বড় অংশ পানি দিয়ে গঠিত। এটি এখন পর্যন্ত পানির সন্ধান পাওয়ার বড় প্রমাণ।’
অধ্যাপক বেনেকি আরো বলেন, ‘আগে আমরা মনে করতাম, পৃথিবীর চেয়ে আকারে কিছুটা বড় গ্রহগুলো নিছক পাথর কিংবা ধাতব বল।’
গবেষণায় অবশ্য বলা হয়েছে, বিপুল পানির জগিট সাগরের মতো কিছু না-ও হতে পারে। উত্তপ্ত বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ানো বড় জলীয়বাষ্পের স্তরও হতে পারে তা।
এসডব্লিউএসএস০৭১০
আপনার মতামত জানানঃ