যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর অসামান্য বীরত্বের সাক্ষ্য দেয় ইতিহাস। শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে বীরত্ব দেখিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যাও কম নয়। সাধারণ নারী থেকে প্রতিশোধের নেশায়ও তাদের কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন প্রবল পরাক্রমশালী।
আদিকাল থেকেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে সংসারের গন্ডিতে আবদ্ধ করে গৌরবের সকল ক্ষেত্রে একাই আধিপত্য করে গেছে। বিশেষ করে প্রাচীন যুদ্ধকলায় যোগ্যতা, সামর্থ্য, বীরত্ব ছিল পৌরুষের অপর নাম। নারীদের নমনীয় শারীরিক গঠন ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধিকাংশ সময়ই তাদেরকে দুর্বল প্রতিপন্ন করা হয়। অথচ তলোয়ার চালানো বা তীর-ধনুকে লক্ষ্যভেদ করার কথা কল্পনা করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ইতিহাসের বইয়ে দেখা কোনো বীরের ছবি।
তারপরও যুগে যুগে এমন কিছু সাহসী নারীর আবির্ভাব ঘটেছে যারা সম্মুখ সমরে পরাজিত করেছেন বহু বীরকে। যাদের নেতৃত্ব তাক লাগিয়ে দিয়েছিল প্রাচীন বিশ্বকে। কালের স্রোতে তারা নিজেদের অমর করে রেখেছেন। অহংকারী পুরুষেরা অনেক সময় তাদেরকে হেয় করেছেন আর পরিণতিতে অবধারিতভাবেই পতন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
এবার এরই যেন প্রমাণ পাওয়া গেল। বৃটেনের উপকূলে ২,০০০ বছরের পুরনো সমাধিক্ষেত্রে এক প্রাচীন যোদ্ধার দেহাবশেষ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভ্রান্ত। তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ওই দেহাবশেষ কোনো নারী যোদ্ধার। ১৯৯৯ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে বৃটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সিলি দ্বীপপুঞ্জগুলির মধ্যে একটি দ্বীপ ব্রাইহারে লৌহ যুগের নানা নিদর্শন রয়েছে। এই দ্বীপের সমাধিগুলিতে ঢাল, তলোয়ারের নমুনা মিলেছে যা ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ যোদ্ধার সাথে সম্পর্কিত জিনিসপত্র।
সেইসাথে একটি আয়নাও পেয়েছেন গবেষকরা, যা সাধারণত নারীদের সাথে সমাহিত করা হতো। জার্নাল অফ আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স রিপোর্টে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, দেহাবশেষের দাঁতের এনামেল পরীক্ষা করে গবেষকরা মনে করছেন ৯৬ % সম্ভাবনা এটি কোনো নারীর।
এই সমাধিক্ষেত্রগুলি প্রাচীন বৃটিশ জীবনযাত্রার ইতিহাস বহন করে চলেছে। ৬০ খ্রিস্টাব্দে রোমান উপনিবেশের বিরুদ্ধে একটি ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার আগে উপজাতীয় যোদ্ধা রানী বৌদিক্কার নেতৃত্বে নারীরা সামরিক অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলো।
হিস্টোরিক ইংল্যান্ডের একজন জীববিজ্ঞানী সারাহ স্টার্ক জানাচ্ছেন, ”আমাদের অনুসন্ধানগুলি প্রমাণ করে দেহাবশেষটি সিসিলির যুদ্ধের সময়কার কোনো নারী যোদ্ধার। যদিও আমরা কখনই সমাধিতে পাওয়া বস্তুর প্রতীক সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারি না, একটি তলোয়ার এবং একটি আয়নার সংমিশ্রণ থেকে বোঝা যায় যে এই নারী তার সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ছিল।
স্থানীয় যুদ্ধে, প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর উপর অভিযান পরিচালনা বা নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। “দেহটি এতটাই পচে গিয়েছিল যে ডিএনএ পরীক্ষা করা অসম্ভব ছিলো। খননের সময় মাটির কঙ্কালের কেবল একটি রূপরেখা দৃশ্যমান ছিল বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার বিশ্লেষণ কৌশলগুলির কারণে এই নমুনাগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্লেনডন পার্কার এক বিবৃতিতে বলেছেন-”দাঁতের এনামেল মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত এবং সবচেয়ে টেকসই পদার্থ।
এটিতে X বা Y ক্রোমোজোমের লিঙ্ক সহ একটি প্রোটিন রয়েছে, যার মানে এটি লিঙ্গ নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ”রোমান দখলের আগে বৃটেনে বসবাসকারী কেল্টিক লোকদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিলো বসতিগুলিতে হঠাৎ আক্রমণ।”
যোদ্ধাদের কাছে আয়নার প্রতীকী এবং ব্যবহারিক মূল্য উভয়ই ছিল: এগুলো মিত্রদের সংকেত দিতে এবং আক্রমণের সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি অতিপ্রাকৃত জগতের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হত। পশ্চিম ইউরোপে ব্রাহের কবরই একমাত্র যেখানে আয়না এবং একটি ঢাল উভয়ই রয়েছে। আইটেমগুলি সেন্ট মেরি দ্বীপের আইলস অফ সিলি মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ