অবৈধ ও বকেয়ার কারণে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮৪টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পাওনা আদায়ের কথাও জানিয়েছে তিতাস।
তবে এখনো ৬ হাজার ৭০১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বকেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে। তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও রাজস্ব আহরণসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিতাস জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্যাসের বিল ছিল ২ হাজার ৩৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫২৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এখনো ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তিতাসের গ্যাসের বিল ও বকেয়া ছিল ৩১ হাজার ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, এখন ৫ হাজার ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রয়েছে।
অবৈধ সংযোগের কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তিতাস গ্যাস বিক্রি ও বকেয়ার বাইরে বাড়তি ১ হাজার ৭৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত এ অর্থ আদায় ও বকেয়ার তথ্য।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তিতাস এখনো ৫ হাজার ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা পাবে। এ অর্থ আদায়ে তিতাস কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ। অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের বিষয়ে জানানো হয়, তিতাসের আওতাধীন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে অভিযান চালিয়ে মোট ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
গত এক বছর আট মাসে মোট ২৮ হাজার ৩৯৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৬৬৮ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প খাতেও অভিযান চালানো হয়।
২৫০টি অবৈধ সংযোগসহ ৪০০টি শিল্প-কারখানার, ৪৬৬টি বাণিজ্যিক, ৫৫টি শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ) ও ১০টি সিএনজি স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা খরচ করে তিতাসের এসব অভিযানে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ও ৯১ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
তিতাসের বকেয়া বিলের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, দেশে যে গ্যাস সরবরাহ হয় তার ৫৫ শতাংশই বিক্রি হয় তিতাসের মাধ্যমে। আর তিতাসের ৪০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। তাদের বিল পেলে বকেয়া অনেক কমে যায়।
কেননা সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ১ হাজার ৫৮ কোটি ও বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে বকেয়া আছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। কিন্তু বকেয়া আদায় করতে গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে তো দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে।
তিতাসের সিস্টেম লসের বিষয়ে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা জোনগুলোয় মিটার বসিয়েছি। তবে এখনো আলাদা করতে পারিনি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুরনো গ্যাস লাইন পরিবর্তনের কাজ চলছে। এজন্য ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে আরেক দিন সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
অবৈধ সংযোগের সঙ্গে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই জড়িত এমন অভিযোগ তোলেন সাংবাদিকরা। তাদের বিষয়ে তিতাসের কী পদক্ষেপ এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সংযোগে তিতাসের লোক জড়িত নন। আমাদের সব কাজ করেন ঠিকাদাররা। তবে কিছু কিছু অভিযোগ সত্য। অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিতাসে তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। গত দুই বছরে ২২৮ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আটজনকে করা হয়েছে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত। আর ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২৮টি বিভাগীয় মামলা চলমান। তিতাসের ৫৫-৬০টি ঠিকাদারেরও লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ