বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা থেকে সরে গেছে তিনটি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো আরমাডা স্পিনিং মিলস, কিংসওয়ে এনডেভরস এবং ইউনিগ্লোবস বিজনেস রিসোর্সেস।
গত জুন মাসেই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি করে দেয় এবং তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিদের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেনামে এসব কোম্পানির সুবিধাভোগী ছিল ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপ।
কোম্পানিটি আজ সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, উল্লেখিত তিনটি কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যাংকটির পরিচালক পদে থাকা প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানি তিনটির হাতে থাকা ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণও কমে গেছে। জুন শেষে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশে। গত মে মাসেও উদ্যোক্তা–পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারের অংশীদারি ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংক জানিয়েছে, তিনটি কোম্পানি ব্যাংকটির পরিচালক পদ বা মালিকানা থেকে সরে যাওয়ায় উদ্যোক্তা–পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ারের অংশীদারি ৯ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর আরমাডা স্পিনিং মিলসের পক্ষ থেকে নিযুক্ত প্রতিনিধি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
মালিকানা হাতবদলের সময় আরমাডা স্পিনিং মিলস ছিল ব্যাংকটির অন্যতম বৃহৎ শেয়ারধারী কোম্পানি। সর্বশেষ আরমাডার প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।
এ ছাড়া গত জুন মাসে ব্যাংকটির পরিচালক পদ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া আগে কিংসওয়ে এনডেভরসের হাতে ছিল ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ শেয়ার। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক ছিলেন সেলিম উদ্দিন। একইভাবে পরিচালক পদ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার আগে ইউনিগ্লোবসের হাতে ছিল ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ার।
এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন। প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির মালিকানা থেকে সরে যাওয়ায় তাদের পক্ষে নিযুক্ত পরিচালকদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক দিনেও শেয়ারবাজারে ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ারের হাতবদল হয়েছে। শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা গ্রুপের নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসব শেয়ারের হাতবদল হয়।
গত বুধবার ও গত রোববার—এই দুই দিনে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের ১৪৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। তবে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় মূল বাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের খুব বেশি লেনদেন হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারের এ হাতবদলের ফলে পরিচালনা পর্ষদে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
গত কয়েক দিন ধরেই ব্লক মার্কেটে ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ার হাতবদল হয়ে। সবশেষ রোববার ব্লকে ২ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার বিক্রি হয় ৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকায়। প্রতি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩২ টাকা ৬০ পয়সা ধরে বিক্রি হয়।
গত ৫ জুলাই ‘ব্লক মার্কেটে’ আরো ১ কোটি ৮৫ লাখ শেয়ার বিক্রি হয় ৬০ কোটি টাকা। ওইদিনও শেয়ার দর ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা।
এ দর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেয়া ফ্লোর প্রাইস।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেনামে এসব কোম্পানির সুবিধাভোগী ছিল ব্যাংকটির মালিকানায় থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপ।
গত মাসে মে মাসেও কোম্পানির শেয়ারের ৫০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। সেটি কমে জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশে।
ছয় মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৫৫ দশমিক ০৬ শতাংশ ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের। এভাবে ছয় মাসে ব্যাংকটিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কমল ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
এসডব্লিউএসএস২১০৫
আপনার মতামত জানানঃ