পৃথিবীর এত কাছে অবস্থান। কিন্তু দর্শন মেলে শুধু রাতেই। তবে চাঁদকে ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই। যে কারণে মহাশূন্যের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে সবার আগে চাঁদের বুকেই পা পড়েছিল মানুষের।
আরও একবার চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মানুষবিহীন মহাকাশযান পাঠানোর কাজও চলছে জোরকদমে। তবে আগামী দিনে উপগ্রহকে নিয়ে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মানুষকে চাঁদে পৌঁছানোর পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুটি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দুটি দেশের প্রকল্পগুলো বেশ বড় এবং বেশ জটিল, যা তাদের এনে দিতে পারে ভালো কিছু ফলাফল। উভয়েরই লক্ষ্য চাঁদ এবং আদি পৃথিবী সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া বাড়ানো। এছাড়া মহাকাশ অনুসন্ধান এবং পৃথিবীতে ব্যবহারের জন্য নতুন প্রযুক্তির বিকাশ, সেইসঙ্গে মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অনুসন্ধানের মঞ্চ তৈরি করা।
চাঁদের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত সম্প্রতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ২০৩২ সাল থেকে শুরু হবে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম।
এক সংবাদ সম্মেলনে নাসার জনস্টোন স্পেস সেন্টারের রকেট বিশেষজ্ঞ গেরাল্ড স্যান্ডার্স বলেন, এতদিন মহাকাশে কেবল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সংক্রান্ত অভিযান পরিচালনা করেছে নাসা। সে সব অভিযানের বিপরীতে এই মিশনটি হবে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক অনুসন্ধানী অভিযান।
এই মিশনে চাঁদের খনিজ সম্পদ, মাটি, পানি পাওয়ার সম্ভাবনা ও সম্ভাব্য অন্যান্য সম্পদগুলো যাচাই করে দেখা হবে। সামনের দিনে চাঁদের অভিযানগুলোতে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করাই এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য।
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদে দ্বিতীয়বার মানব নভোচারী পাঠাতে চায় নাসা। সেই দলে প্রথমবারের মতো অন্তত একজন নারী এবং একজন ট্রান্সজেন্ডার নভোচারী রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।
এছাড়াও সামনে সৌরজগত ও মহাকাশে আরও কয়েকটি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আগামী দিনে চাঁদের বুকে খননকার্য চালানো এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত সম্পদ পৃথিবীতে তুলে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র।
গোটা বিষয়টিই এখনও পর্যন্ত ভাবনাচিন্তার স্তরে রয়েছে যদিও, তবে ২০৩২ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে খননকার্য শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে নাসা-র। তার জন্য আগে চাঁদের মাটি থেকে কী কী পাওয়া যেতে পারে, তা জানতে পৃথক গবেষণা শুরু হচ্ছে।
নাসা-র জনসন স্পেস সেন্টারের রকেট বিজ্ঞানী জেরাল্ড স্যান্ডার্স সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, “আপাতত অনুসন্ধানের উপর জোর দিচ্ছি আমরা। কী কী সম্পদ রয়েছে, তা তুলে আনা সম্ভব কিনা, তুলে আনা গেলেও কী কাজে লাগতে পারে, বোঝার চেষ্টা করছি।”
চাঁদের মাটিতে প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ, খনন এবং সর্বোপরি আমদানি, গোটা বিষয়টিই অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে মোটা টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে, মহাশূন্যে এত টাকা কেউ বিনিয়োগ করতে চাইবেন কিনা, ত নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের মাটি থেকে সম্পদ তুলে আনা গেলে, তাতে লাভবানই হবে পৃথিবী। পণ্য উৎপাদন, সার্বিক জীবনের মানোন্নয়নের কাজে লাগতে পারে ওই সম্পদ। তবে সবেমাত্র মাটি আঁচড়ানো শুরু হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়িতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্যান্ডার্স।
তবে নাসা বিষয়টি এখনই খোলসা করতে নারাজ যদিও, তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট বলছে, চাঁদে খননকার্য চালাতে বাণিজ্যিক রকেট সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে আপাতত অক্সিজেন এবং জ্বালানি সংগ্রহই মূল লক্ষ্য।
এর আগে ২০১৫ সালে নাসা জানিয়েছিল যে, চন্দ্রাভিযান থেকে বিপুল প্রাপ্তিযোগ রয়েছে পৃথিবীর। তাদের দাবি ছিল, চাঁদে মূল যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, তা হল- জল, হিলিয়াম এবং বিরল পার্থিব ধাতু। সেই জলকে রকেটের জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। হিলিয়াম শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে। আর Scandium এবং Yttrium নামের যে দুই ধাতুর খোঁজ মিলেছে, তাতে বৈদ্যুতিন শিল্পক্ষেত্রকে আরও উন্নততর করে তোলা যেতে পারে। এই বিরল দুই ধাতুতে চাঁদের পাথুরে অঞ্চলগুলি সমৃদ্ধ বলে জানায় নাসা।
শুধু তাই নয়, নাসা জানায়, চাঁদের ভর ৭৩ কুইন্টাল টন। প্রতিদিন যদি ১ মেট্রিক টন করেও তোলা হয়, তাহলেও ২২ কোটি বছরে তার ১ শতাংশই ক্ষয় হবে।
এসডভ্লিউ/এসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ