ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর। যা নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই মোদির প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। নানা কারণে তাঁর এই সফর বেশ আলোচিত। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগে প্রায় এক দশক ধরে মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে মোদি লাল গালিচা সংবর্ধনা পেলেও তার সামনে পুরোনো ক্ষত নতুন করে জেগে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবারই দেশটি সফরে গেছেন। তবে এবার বাইডেনের বিশেষ আমন্ত্রণের কারণে মোদির এ সফরটি যুক্তরাষ্ট্রে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফর হয়ে উঠেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ সফরের শুরুতেই সামনে আসছে মোদি ও মানবাধিকার প্রশ্ন।
ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারণে মানবাধিকার বিষয়ে মোদিকে ঘিরে বিতর্ক তাকে মহাসমাদরে বরণ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর বটে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে সরব। তবে বৈশ্বিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য কিছুটা শিথিলতার ইঙ্গিত ইতিমধ্যে স্পষ্ট।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের মাঝেই মার্কিন মুলুকে ভারতের মুসলমানদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নেতা এ প্রশ্ন তুলেছেন।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। মোদির ওই সফরের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ইলহান ওমর সহ কয়েকজন মার্কিন আইনপ্রণেতা, সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের অভিযোগে মোদির বক্তৃতা বয়কট করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়ে বলা হয়েছেঃ বারাক ওবামা ভারতের ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে সরব হয়ে বলেছেন, যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য জাতিদের মানবাধিকার রক্ষা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভারত ভাগ হয়ে যেতে পারে।
বাইডেনের উচিৎ এ বিষয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা করা মন্তব্য করে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেতাম, তবে আমি তার কাছে ভারতের মুসলমানদের সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করতাম’।
এই গোটা বিতর্কের মধ্যেই যখন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মোদি উপস্থিত হন, তখন এক সাংবাদিক তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘সারা বিশ্বের নেতারা গণতন্ত্র রক্ষার সংকল্প নিয়েছেন। তাহলে আপনি এবং আপনার সরকার মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য কী করছেন’?
এ প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেছেন, গণতন্ত্র আমাদের শিরায় রয়েছে। জাতি এবং ধর্মের ভিত্তিতে কারও প্রতি বৈষম্য করার প্রশ্নই আসে না। আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ নীতিতে চলে৷ ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে কোনও বৈষম্যের প্রশ্নই নেই।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন, যেখানে তাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানানো হয়। ‘মোদি-মোদি স্লোগানে’ মুখরিত হয় অধিবেশন মঞ্চ। তবে, এরই মধ্যে অনেক মার্কিন আইনপ্রণেতা ভারতে সংখ্যালঘু এবং বিশেষ করে মুসলমানদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ