প্রথম থেকেই পিরামিডের উপর একচ্ছত্র আধিপত্য মিশর ও দক্ষিণ আমেরিকার৷ মিশরের বালুরাশিতে নাক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পিরামিড৷ দক্ষিণ আমেরিকাতেও পিরামিড আছে৷ শুধু তার আকার আলাদা৷
কিন্তু এবার মিশরের সেই অহংকারে সম্ভবত থাবা বসাল বাহামা তীরের ২টি পিরামিড৷ সেখানেই মিলেছে রহস্যজনক পিরামিডের সন্ধান৷
তবে এটি সত্যি পিরামিড কিনা, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ কিন্তু বস্তুটির আকার আকৃতি পিরামিডের দিকেই নিশানা করছে৷ ইউটিউব চ্যানেলে এই নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে সিকিওর টিম ১০৷
গুগল আর্থের সাহায্যে এই পিরামিড জাতীয় বস্তুর হদিশ পেয়েছে তারা৷ তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিউ প্রভিন্স আইল্যান্ডের কাছে সমুদ্রে এর সন্ধান পেয়েছে তারা৷ জায়গাটি ফ্লোরিডা থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷
পিরামিডের লাইনগুলো খুব সহজেই ধরা পড়ে৷ এটা প্রমাণ করে এর সবচেয়ে কাছের দ্বীপে অ্যাজটেকের মতো বা ওই ধরনের কোনও এক প্রাচীন মানুষের বাস ছিল৷
যে ছবিগুলি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি দেখতে নিঃসন্দেহে প্রাচীন পিরামিডের মতো৷ সমুদ্রের মধ্যে কোনও কিছুই নষ্ট হয় না৷ কারণ এখানে খোলা বাতাস নেই৷ ফলে মরচে ধরা বা ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না৷
তবে এই পিরামিড দুটির আকৃতি একই নয়৷ এর মধ্যে একটি গিজার পিরামিডের মতো, অন্যটি মায়া সভ্যতার চিচেন ইত্জার মতো৷
এই প্রথমবার কোনও বস্তুকে পিরামিডের মতো দেখতে বলা হল, তেমন নয়৷ ২০১২ সালে মেরেল ভেরলাগ নামে এক বিজ্ঞানী ক্রিস্টাল পিরামিড আবিষ্কার করেছিলেন৷ গিজার পিরামিডের থেকে এটি ৩ গুণ বড়৷ সমুদ্রতল থেকে এটি ৬ হাজার ৫০০ ফিট উঁচু৷
এক পক্ষের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এগুলো অতি প্রাচীন কোনো মানব সভ্যতার নিদর্শন। অনেক প্রাচীন আমলে ওই এলাকায় মানব বসতি ছিল। সে জাতির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অনেকটা চতুর্দশ শতক থেকে ষোড়শ শতকের মধ্য-আমেরিকান অ্যাজটেক জাতিদের মতো।
সিকিউরটিম-টেনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন স্কট ওয়ারিং পিরামিড দু’টির অস্তিত্ব দাবি করেন।
তিনি ৩ডি ভিউয়ার ‘গুগল আর্থ’ ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এসময় পিরামিড আকৃতির অস্বাভাবিক কাঠামো দু’টি নজরে পড়ে তার।
ভিডিও প্রতিবেদনে ওয়ারিং বলেন, আমি বাহামাসের নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপের কাছে সমুদ্রের তলদেশে পিরামিড দু’টির অস্তিত্ব খুঁজে পাই। জায়গাটা ফ্লোরিডা থেকে খুব দূরে নয়। পিরামিড দু’টির অবস্থান বলে দিচ্ছে, এর আশেপাশের দ্বীপগুলোতেও প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি বসতি স্থাপন করেছিলো।
প্রতিবেদনের উপস্থাপক টেইলর গ্লকনার বলেন, সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করার কারণেই কাঠামোগুলো এখনো পর্যন্ত টিকে আছে। কারণ পানির নিচে থাকা কোনো ভবনে সহজে মরচে পড়ে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি থেকেও তা অনেক বেশি নিরাপদে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আবিষ্কৃত পিরামিড দু’টি পৃথিবীর বুকে এখনও টিকে থাকা সবচেয়ে পুরনো যেকোনো কাঠামোর চেয়েও অনেক বেশি প্রাচীন। এতোদিন ক্ষয় হতে হতে পিরামিডগুলো ইতোমধ্যেই ধূলিকণায় পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, পিরামিড দু’টির আকৃতি দু’রকমের। একটা পিরামিডের আকৃতি অবিকল মিশরের পিরামিডগুলোর (যেগুলোর সবচেয়ে প্রাচীনটি খ্রিস্টপূর্ব ২৬৩০ থেকে ২৬১১ অব্দে তৈরি হয়েছিল) মতো। অপরটি মধ্য-আমেরিকার মায়া সভ্যতার (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-২৫০ অব্দে বিকাশ ঘটে) মন্দিরগুলোর মতো ধাপ বিশিষ্ট।
পিরামিড দু’টি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অধিকাংশই বলছেন, পিরামিড দু’টি মায়া ও ইনকা সভ্যতার (আন্দিজ পর্বতমালা ঘেঁষে পেরুতে গড়ে ওঠা সভ্যতা।
হাজার বছরের প্রাচীন এ সভ্যতা পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত টিকেছিল) সঙ্গে মিশরীয় সভ্যতার মেলবন্ধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, প্রাচীনকালের নাবিকরা সমুদ্রপথ চিহ্নিত করার জন্য এগুলো তৈরি করছিলেন। অনেকে আবার প্রতিবেদনটি নির্ভুল তথ্য পরিবেশন করছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
২০১২ সালে মেয়ার ভারলাগ নামে একজন বিজ্ঞানী আটলান্টিক মহাসাগরের কল্পিত ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ অঞ্চলে একটি পিরামিড আবিষ্কারের দাবি করেন। বলা হয়েছিল, আবিষ্কৃত পিরামিডটি মিশরের ‘গ্রেট পিরামিড অব গিজার’ চেয়েও তিনগুণ বড় এবং তা সমুদ্রের প্রায় দুই হাজার মিটার গভীরে অবস্থিত। তবে এই বিজ্ঞানী তার দাবির পক্ষে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন।
তবে ২০১৬ সালে একদল গবেষক প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে একটি পিরামিড আকৃতির কাঠামো খুঁজে পান। একই বছরের মে মাসে আর্জেন্টিনার গবেষক মার্সেলো ইগাযুস্তার তত্ত্বাবধানে অনুসন্ধান চালিয়ে এই পিরামিডের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে রহস্যময় এ পিরামিডটি অবস্থিত। সেজন্য সিকিউরটিম-টেনের সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া পিরামিড সম্পর্কিত দাবি একেবারেই ফেলে দিচ্ছেন না অনেকেই।
সিকিউরটিম-টেন নামক ইউটিউব চ্যানেলটি প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার উপর ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এই চ্যানেলের সংশ্লিষ্টরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এলিয়েন ও ইউএফও (বহির্বিশ্বের মহাকাশযান) সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর নিয়মিত অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
সবসময় এলিয়েন ও ইউএফওর সন্ধানে পৃথিবী চষে বেড়ানো সিকিউরটিম-টেন আবার নতুন খুঁজে পাওয়া পিরামিডগুলোর সঙ্গে এলিয়েনেরও সম্পর্ক খুঁজতে চেষ্টা করছে। স্কট ওয়ারিং মনে করেন, এতো প্রাচীন আমলে পিরামিডের মতো বৃহদাকার ও বিস্ময়কর কাঠামো নির্মাণ একমাত্র এলিয়েনদের পক্ষেই সম্ভব। তবে এলিয়েনের সঙ্গে সম্পর্ক থাক বা না থাক, রহস্যময় পিরামিডগুলো নিয়ে পেশাদারী অনুসন্ধান চালানোর প্রয়োজন আছে বলে বলে মনে করছেন অনেকে।
এসডব্লিউএসএস১০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ