সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে, যাদের সংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখ। সেই হিসেবে দেশে প্রতি চারজনের একজনই তামাকে আসক্ত। এর মধ্যে ধোঁয়াযুক্ত তামাক সেবনে পুরুষ এবং ধোঁয়াহীন তামাক সেবনে নারী এগিয়ে।
ধোঁয়াযুক্ত তামাকে রয়েছে বিড়ি, সিগারেট, ই-সিগারেট। এবং ধোঁয়াহীন তামাকে রয়েছে তামাক জর্দা ও গুল। জর্দা ও গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন এবং চর্বণযোগ্য তামাক গ্রহণের প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। দিন দিন এ ধরনের তামাক গ্রহণের প্রবণতা আরও বাড়ছে। দেখা গেছে, প্রতি হাজারে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬৩, আর নারীর সংখ্যা ৩৭৯। তামাকবিরোধী কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য, নীতিনির্ধারকদের মাথায় ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ক্ষতির বিষয়টিই বেশি থাকে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিরুদ্ধে তাই প্রচারণা কম। দুটি কারণে চর্বণযুক্ত তামাকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কম বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বলেন, এই তামাক নারীরা গ্রহণ করেন; বিশেষত গ্রামীণ দরিদ্র নারী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) এক জরিপে দেখা যায়, ধূমপানে স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপারে গ্রামের তুলনায় শহুরে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেশি। শহরের ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক তামাক সেবন করে থাকেন। গ্রামে এই হার ৩৭ দশমিক এক শতাংশ। তবে তামাকের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা গ্রাম এবং শহর উভয় অবস্থানেই প্রায় সমান। গ্রামাঞ্চলে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ। তামাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষরা অসচেতন। পুরুষদের ৪৬ শতাংশই ধূমপায়ী। নারীদের মধ্যে এই হার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। তামাকসেবীদের মধ্যে ধূমপান করে পুরুষদের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। নারীর সংখ্যা এক্ষেত্রে ১ শতাংশের কম। শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য ধূমপানে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও ধোঁয়াবিহীন তামাকে পুরুষদের টেক্কা দিয়েছেন নারীরা। ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবী নারীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে পুরুষের সংখ্যা ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।
জাতীয় এবং বিভাগ ভিত্তিক এই জরিপ পরিচালনায় থানা প্রতি ১৫ বছর বয়সোর্ধদের প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে গণ নমুনার ভিত্তিতে করা হয়। এতে ১২ হাজার ৭৮৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের তামাক সেবনের ধরণ, অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাস্থ্য ঝুঁকির জ্ঞান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, ৩০ ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে তামাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তামাকসেবীদের মধ্যে হূদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসযন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যানসারসহ প্রধান সাতটি রোগের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। আর ক্যানসারের ক্ষেত্রে ১০৯ শতাংশ বেশি ঝুঁকি থাকে। ৩০ ও তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি লোক তামাকজনিত রোগে ভোগে। এদের মধ্যে ১৫ লাখের রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তামাকের প্রত্যক্ষ সংশ্লেষ রয়েছে। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী, ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশের চর্বণযোগ্য তামাক সেবনের অভ্যাস ছিল। আর পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা ২১ দশমিক ৪ শতাংশ।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ