ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি, গুগলের বার্ড, মাইক্রোসফটের সিডনি মেশিন লার্নিংয়ের বিস্ময়কর রূপ। এসব এআই টুল প্রচুর পরিমাণ ডেটা থেকে নির্দিষ্ট ছন্দ তথা প্যাটার্ন খুঁজে বের করে।
এভাবে পরিসংখ্যানগতভাবে সম্ভাব্য আউটপুট তৈরি করতে শেখে এগুলো। একটা সময় মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বহুদিন ধরেই এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। শুধু পরিমাণগত দিকেই নয়, গুণগত দিকেও উন্নত হবে এআই। ভবিষ্যতে বুদ্ধিগত অন্তর্দৃষ্টি, শৈল্পিক সৃজনশীলতা এবং অন্যান্য মানবিক স্বতন্ত্র স্থানগুলোতে মানুষের চেয়ে ভালো করবে যন্ত্র।
এখন যে প্রোগ্রামগুলো আমাদের সামনে আসছে সেগুলো সেই অদূর ভবিষ্যতের দিগন্ত দেখতে পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো সেই দিন আসলেই আসবে যেদিন যন্ত্র মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখনও সে দিন আসেনি। যদিও এসব বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাড়িয়ে বলা খবর এবং অপরিমাণদর্শী বিনিয়োগ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠত্ব জাহির চলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ‘গডফাদার’দের একজন বলে যাকে মানা হয় সেই জেফ্রি হিন্টন গুগল থেকে ইস্তফা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে আর কিছুকাল পরই চ্যাটবটরা মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে। খবর বিবিসি।
মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া এক বিবৃতিতে ৭৫ বছর বয়স্ক ব্রিটিশ-ক্যনাডিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. হিন্টন গুগল থেকে তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে – তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দেন।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার জন্য তিনি অনুতাপ রোধ করেন।
মানব মস্তিষ্কের সমতুল্য সিস্টেম, যাকে বলে ‘নিউট্রাল নেটওয়ার্ক’, এবং এগুলোর মানুষের মতই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা যার নাম ‘ডিপ লার্নিং’ এ দুটি ক্ষেত্রে ড. হিন্টনের মৌলিক গবেষণা চ্যাট জিপিটির মত এআই সিস্টেম তৈরির পথ সৃষ্টি করেছে।
বিবিসিকে জেফ্রি হিন্টন বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে এমন কিছু বিপদ হতে পারে যা “রীতিমত ভয়ংকর।”
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে এরা আমাদের চাইতে বুদ্ধিমান নয়, কিন্তু শিগগীরই তারা তা হয়ে যাবে বলে আমার মনে হচ্ছে।
“বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জিপিটিফোরের মতো জিনিসগুলো সাধারণ জ্ঞানের পরিমাণের দিক থেকে একজন মানুষকে অনেকখানি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রিজনিং বা যুক্তিতর্কের ক্ষমতার দিক থেকে অবশ্য তারা ততটা ভালো নয়, কিন্তু তারা এখনই সাধারণ যুক্তিতর্ক করতে পারছে।”
“এখন যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে, তাতে খুব দ্রুতই এতে আরও উন্নতি হবে । সুতরাং আমাদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করতেই হবে।”
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে “খারাপ লোক”দের প্রসঙ্গ টেনে ড. হিন্টন বলেন, তারা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাকে “খারাপ কাজের” জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও উদাহরণ দেন।
তিনি বলেন, “এটা এমন একটি ব্যাপার যে ধরুন আপনার ১০ হাজার লোক আছে, এবং একজন লোক একটা তথ্য জানলেই বাকি সবাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা জেনে যাবে। এভাবেই একটি চ্যাটবট কোন একজন মানুষের চাইতে বেশি জেনে ফেলতে পারে।”
ড. হিন্টন বলেন, তিনি গুগলের সমালোচনা করতে চাননা এবং এই বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিটি খুবই দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।
হিন্টনের পদত্যাগের পর এক বিবৃতিতে গুগলে প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডীন বলেন, “এআইয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গী নিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, এবং আমরা সবসময়ই নতুন ঝুঁকিগুলোকে বুঝতে এবং সাহসের সঙ্গে নতুন নতুন আবিষ্কার করে যাচ্ছি।”
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সম্প্রতি গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বেশ কিছু নামী ব্যক্তি ও দেশ। মার্চ মাসেই একদল উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞ একটি খোলা চিঠিতে এআই প্রশিক্ষণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছে টুইটার ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক, অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং ডিপমাইন্ড ও ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউটের মত প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ গবেষকরা।
তারা বলছেন, এআই প্রযুক্তি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে । তারা বলেন, এতে ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো সিস্টেম তৈরি হতে পারে যা ‘সমাজ ও মানবতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে’।
ওই চিঠিতে আরও সতর্ক করা হয় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুয়া খবরের বন্যা বইয়ে দিতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এসে মানুষের চাকরির জায়গা দখল করে নিতে পারে।অবশ্য বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ আবার এ আশংকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সম্প্রতি গোল্ডম্যান স্যাক্স নামের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকের এক রিপোর্টে একই ধরনের আশংকার কথা বলা হয়। ওই রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে ভবিষ্যতে ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির জায়গা নিয়ে নিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
এসডব্লিউএসএস/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ