প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ওপর নানা গবেষণা করে দেখা যায়, প্রায় সবকিছুর দিক থেকে মিশরীয় সভ্যতা এগিয়ে ছিল। এমনকি চিকিৎসাক্ষেত্রেও।
আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ বছর আগের কথা। মিশরে পেসেশেত নামে এক নারী চিকিৎসক খুব সকালে তার থলেতে মধু, রসুন, জিরা, বাবলা গাছের পাতা এবং সিডার তেল, সঙ্গে কিছু কাপড়, ছুরি আর কাঁচি নিয়ে বের হন। উদ্দেশ্য রোগীদের চিকিৎসা করবেন। কিন্তু কীভাবে?
পেসেশেত প্রথমেই এক দিনমজুরের কাছে যান, যিনি কাজ করতে গিয়ে নিজের হাত ভেঙে ফেলেন। পেসেশেত একটি কাপড় দিয়ে লোকটির হাত শক্ত করে বেঁধে দেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি যান এক কিশোরের কাছে, যার হাতে একটি বিষাক্ত পোকা কামড় দিয়েছিল। পেসেশেত এতেও নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন। জখম দেখেই তিনি বুঝতে পারেন, ছেলেটির হাতে যেকোনো ধরনের বিছে কামড় দিয়েছে। এরপর তিনি মন্ত্র পড়তে পড়তে একটি ছুরি দিয়ে তার হাতের জখম থেকে বিষ বের করে ফেলে দেন।
শুধু পেসেশেতই নন, তার মতো এমন আরও শত শত চিকিৎসকের নিষ্ঠার মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা। বর্তমানে মেডিকেল কেয়ার বলতে যা বোঝানো হয়, তার গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ অব্দে। তবে তা বর্তমান থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল।
প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ রোগের কারণ হিসেবে বিভিন্ন দেবদেবীর অসন্তুষ্টি এবং আধ্যাত্মিক কারণকে দায়ী করলেও এই তত্ত্বের মাধ্যমে চিকিৎসকরা রোগের সঙ্গে মানবদেহের যোগসূত্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে গবেষকদের ধারণা।
এদিকে খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে মিশরের রাজসভার প্রধান চিকিৎসক হিসেবে ‘মেরিতাহ’ নামের এক নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনিই বিশ্বের সর্বপ্রাচীন নারী চিকিৎসক। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে নিম্ন মিশর অঞ্চলে ‘নাইথের’ মন্দিরে আরেকজন নারী চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া গেলেও তার সঠিক কোনো নাম জানা যায়নি। মূলত মেরিতাহের পর মিশরেরে সবচেয়ে বিখ্যাত নারী চিকিৎসক হিসেবে আবির্ভূত হন ‘পেসেশেত’।
তথ্যসূত্রে, মিশরের চিকিৎসকরা সবসময় স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অপরিষ্কার খাদ্য এবং কাঁচা মাছ খেতে নিষেধ করতেন। এ ছাড়া মিশরেই সর্বপ্রথম হাড় ভাঙা, পা মচকানোর চিকিৎসা এবং জখমে সেলাই করানোর প্রচলন শুরু হয়। সেখানকার দন্ত চিকিৎসকরা দাঁত তোলা এবং বাঁধাইয়ের কাজ করতে পারতেন।
অনুমান করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে মিশরীয়রাই দাঁতের মাজন আবিষ্কার করেছিলেন। শুধু নিজের দেশেই নয়, বিভিন্ন দেশের রাজারাও মিশরে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতেন।
এরপর চিকিৎসার জ্ঞান প্রসার ও উন্নতমানের চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে ‘বুবাস্তিস’ ও ‘আবিদোস’সহ মিশরজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করে। পেশাজীবী ডাক্তাররা House of Life নামক শিক্ষাকেন্দ্রে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতেন। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নারী-পুরুষ সবার জন্যই ছিল উন্মুক্ত।
এ ছাড়া ১৫৭০ খ্রিস্টপূর্বে লিপিবদ্ধ করা ‘বার্লিন প্যাপিরাস’ নামক একটি পাণ্ডুলিপিতে গর্ভকালীন বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। হৃদ্রোগ, ভেষজ চিকিৎসা এবং ডিপ্রেশনসহ মানসিক রোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ পাণ্ডুলিপির নাম ‘ইয়ার্স প্যাপিরাস’, যেটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দে লিখা হয়েছিল। শল্য চিকিৎসা পদ্ধতির প্রাথমিক জ্ঞান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের’ গায়ে।
যদিও মিশরীয়দের চিকিৎসা পদ্ধতির বেশির ভাগই ভুল ছিল; কিন্তু আধুনিক যুগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দীর্ঘ সফরে পেসেশেতের মতো ডাক্তারদের অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতি অগ্রদূত হিসেবে দেখিয়েছে সঠিক পথটি।
এমনকি ফারাওদের আমলেও হত মাথার অস্ত্রোপচার! পিরামিড থেকে মমি, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নিয়ে এখনও বিস্ময়ের শেষ নেই মানুষের। সেই প্রাচীন মিশরের এক প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি এই সময়েও বাঁচাতে পারে হাজার হাজার প্রাণ!
কেমব্রিজের এক দল গবেষকের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মাচরণ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ভাবে ছিদ্র করা হত মাথায়। কিছুটা সেই পদ্ধতিতেই বাঁচানো যেতে পারে বহু মানুষের প্রাণ।
বিজ্ঞানী পিটার হাচিনসনের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি বলছে, ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রেনিয়েকটমি’ নামক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যে রোগীদের চিকিৎসা হয়, তাঁদের বাঁচার আশা সাধারণ প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে চিকিৎসা হওয়া রোগীদের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ বেশি। মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে, অনেক সময় মাথার ভিতর তরল জমে যায়। আর এই তরল সঞ্চিত হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে চাপ পড়ে। রক্তসঞ্চালনও ব্যাহত হয়। চিকিৎসা না হলে এর ফলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে স্মৃতিভ্রংশ ও পক্ষাঘাতের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুও।
বিজ্ঞানী পিটার হাচিনসনের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি বলছে, ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রেনিয়েকটমি’ নামক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যে রোগীদের চিকিৎসা হয়, তাঁদের বাঁচার আশা সাধারণ প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে চিকিৎসা হওয়া রোগীদের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ বেশি। মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে, অনেক সময় মাথার ভিতর তরল জমে যায়। আর এই তরল সঞ্চিত হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে চাপ পড়ে। রক্তসঞ্চালনও ব্যাহত হয়। চিকিৎসা না হলে এর ফলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে স্মৃতিভ্রংশ ও পক্ষাঘাতের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুও।
বিজ্ঞানী পিটার হাচিনসনের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাটি বলছে, ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রেনিয়েকটমি’ নামক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যে রোগীদের চিকিৎসা হয়, তাঁদের বাঁচার আশা সাধারণ প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে চিকিৎসা হওয়া রোগীদের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ বেশি। মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে, অনেক সময় মাথার ভিতর তরল জমে যায়। আর এই তরল সঞ্চিত হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে চাপ পড়ে। রক্তসঞ্চালনও ব্যাহত হয়। চিকিৎসা না হলে এর ফলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে স্মৃতিভ্রংশ ও পক্ষাঘাতের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুও।
এসডব্লিউএসএস /১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ