পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সমাধি বা স্মৃতিসৌধের মধ্যে পিরামিড অন্যতম। এটি প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যার অনন্য নিদর্শন। পিরামিডের ভিত্তি সমচতুর্ভূজ। এর ওপরের দিকে চারপাশ ক্রমশ ছোট হতে হতে ত্রিভুজ আকারের হয়ে এক বিন্দুতে গিয়ে মিশেছে। নির্মাণ বিস্ময়ের কারণে মিশরের পিরামিডের অজানা রহস্য বটে!
পিরামিড ধারণার জনক ‘ইমহোটেপ’কে পৃথিবীর প্রথম জিনিয়াস বা অসাধারণ সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পিরামিড ছাড়া প্রাচীন মিশরের আরো যে দুটি জিনিস এখনও মানুষের মনে বিস্ময় জাগায় সেগুলো হলো ভাস্কর্য (স্ফিংস) ও মমি।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি স্তরের মানুষ এবং আর্কিওলজিস্ট এর প্রথম আকর্ষণের বিষয় হলো মিশরের পিরামিড। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি যে মিশরের পিরামিড হল একটি রহস্যময় স্থাপনা। যেটার মধ্যে যে কতটা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এটা বৈজ্ঞানিকরা এখনো সঠিক ভাবে জানেনা।
এটা অনেকেই মনে করেন যে মিশরের বিখ্যাত সব পিরামিড ক্রীতদাসদের দিয়ে বানানো হত। তাঁদের অক্লান্ত শ্রমকে কাজে লাগানো হত। কিন্তু তা সত্য নয়।
সকলে মনে করে যে এই পিরামিড তৈরি করা হয়েছে ৫ হাজার বছর পূর্বে। বেশির ভাগ মানুষ মনে করত যে এই বিশাল বিশাল পিরামিড গুলি তৈরি করা হয়েছে কেবলমাত্র নিচু শ্রেণীর ক্রীতদাসীদের মাধ্যমে। কিন্তু এটা খুবই সাধারন ভাবে বুঝতে পারা যায় যে যদি ক্রীতদাসীদের দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হয়ে থাকে। তাহলে হাজার হাজার ক্রীতদাসীদের দিনরাত এক করে কোনরকম ছুটি না নিয়ে কাজ করতে হত।
১৯০০ শতকের গবেষকরা মনে করতো যে এই বিশাল বিশাল পিরামিডগুলো সেই সময় কিছু উচ্চ শ্রেণীর গোষ্ঠী ক্রীতদাসীদের মাধ্যমে তৈরি করেছে। কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটা প্রমাণ হয়েছে যে বিশাল বিশাল পিরামিডগুলো কেবলমাত্র ক্রীতদাসদের মাধ্যমেই কোনভাবেই তৈরি করা সম্ভব নয়।
মিশর নিয়ে সারা বিশ্বের পর্যটকদেরই একটা কৌতূহল রয়েছে। সকলেই চান একবার অন্তত মিশরটা ঘুরে দেখতে। আর মিশরের সবচেয়ে বড় টানের নাম পিরামিড। সেইসব পিরামিড তৈরি করা মুখের কথা ছিলনা। প্রবল শ্রমের প্রয়োজন পড়ত। অনেকে মনে করেন এই শ্রমসাধ্য কাজ ক্রীতদাসদের দিয়ে করিয়ে নেওয়া হত।
কিন্তু ক্রীতদাসরা পিরামিড বানাতেন না। বরং গবেষকেরা দাবি করছেন পিরামিড তৈরি করা হত দক্ষ কারিগরদের দিয়ে। তাঁরাই এই পিরামিডের ডিজাইন করতেন। তারপর তা বানাতেন।
এজন্য কারিগরদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক প্রদান করা হত। সহজ কথায় ক্রীতদাস দিয়ে নয়, খরচ করে দক্ষ মানুষদের দিয়েই পিরামিড তৈরি হত মিশরে।
তবে এঁদের কাজে সাহায্য করার জন্য ক্রীতদাসদের ব্যবহার হয়তো কিছুক্ষেত্রে করা হলেও হয়ে থাকতে পারে। তবে শ্রমিকও কিন্তু পারিশ্রমিকের বদলেই নেওয়া হত। এমনটাই দাবি করছেন একদল গবেষক।
তাই এটা মনে করার কারণ নেই যে ক্রীতদাসদের বলপূর্বক একাজ করানো হত। বরং মিশরে ক্রীতদাসদের প্রধানত বাড়ির পরিচারকের কাজে নিয়োগ করা হত। এছাড়াও কিছু শ্রমসাধ্য কাজ তাঁদের দিয়ে করানো হত।
তবে পিরামিড তৈরিতে ক্রীতদাসদের ভূমিকা কিন্তু বিশেষ থাকত না। মিশরের অনেক পিরামিডে পাওয়া নানা তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনার পরই গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন। হয়তো দক্ষ মানুষদের মাধ্যমে এইসব স্থাপত্য জন্ম নিয়েছে বলেই আজও তা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক বিস্ময় হয়ে থেকে যেতে পেরেছে।
আপনার মতামত জানানঃ