জসিম মুহাম্মদ রুশনী : বলছি একটি ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বসম্পন্ন মহাসড়কের কথা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত জনপদের নাম হাটহাজারী। চট্টগ্রাম মহানগরের সাথে লাগোয়া এই মফস্বল উপজেলাতেই অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। একটি সরকারি কলেজ, সরকারি স্কুল, অনেকগুলো আধাসরকারী ও বেসরকারি ছোট বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এই উপজেলার উপর দিয়েই রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরের সাথে দু’টো পার্বত্য জেলার সড়ক যোগাযোগ। তারপরও জনপদটি যথেষ্ট অবহেলিত। ২০১৩ সালে মহানগর থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত চার লেনের ডিভাইডার বিশিষ্ট সড়ক হলেও হাটহাজারীর উত্তরাঞ্চলের জনদুর্ভোগ কমেনি, বরং বেড়েছে। বাড়ার কারণ হলো – মহানগর থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো সদর পর্যন্ত একটি স্বাচ্ছন্দ্য গতিতে ধেয়ে এসে হাটহাজারী সদর থেকে উত্তরের দিকের মহাসড়কে সঙ্কীর্ণতর রাস্তায় এলেই খেই হারিয়ে ফেলে। ঘটে যায় নানান অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট।
স্থানীয় সংবাদকর্মীদের লেখালেখি ও সামাজিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৌঁড়ঝাপের সুবাদে ২০১৮ সালে হাটহাজারী সদর থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ১০ মাইলের রাস্তাটি বর্ধিতকরণের প্রকল্প পাস হয়। স্থানীয় সাংসদ ঘটা করে সেই প্রকল্পটির উদ্বোধনও করেন। কিন্তু মূল কাজের শুরুটা দেখতে উৎসুক জনতাকে অপেক্ষা করতে হয় আরও একবছর। অবশেষে ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে সড়কোন্নয়নের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়।
সংস্কার ও বর্ধিতকরণের এই কাজটি সম্পর্কে তৎকালীন মিডিয়া নিউজ ছিলো – “চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী সদর থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত অংশকে চারলেনে উন্নিতকরণের কাজ শুরু।” সেই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ও সড়ক জনপথ বিভাগ মহাসড়কের দুইপাশকে অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজও সম্পন্ন করে। অথচ সেই চারলেনের কাজটি এখন তিনলেনেরও হচ্ছে না। পুরো দশমাইল রাস্তায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। কাটা হচ্ছে গাছ। ভাঙা হচ্ছে দোকানপাট ও পুল কালভার্ট।
হাটহাজারী নাজিরহাট মহাসড়কটি এখন জনদুর্ভোগ ও গণবিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। টানা দুইবছর ধরে কাঙ্খিত উন্নয়নের আশায় কষ্ট সহ্য করে আসা মানুষ এখন সড়কের কথা তুললেই ক্ষোভ ঝাড়ছে। বিক্ষুব্ধ জনতার প্রশ্ন হলো – “সড়ক বর্ধিতকরণের কথা বলে অবৈধ দখল উচ্ছেদের নামে হাজার হাজার ক্ষুদে দোকানিদের পথে বসানো হলো, চারলেনে উন্নীতকরণের বাহারি কথা বলে সংসদ, মিডিয়া সরগরম করলেন, এখন সেই চারলেনের প্রজেক্টটি কোথায় গেলো? কেন ঘোষণার তিন বছর পরে এসে আমাদেরকে উন্নয়নের কাঁচকলা দেখানো হচ্ছে?”
বিস্তীর্ণ জনপদের অধিবাসীদের মনে প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর দেয়ার গরজবোধ করছে না কেউ। সাংসদ উপজেলা চেয়ারম্যান আর ইউপি চেয়ারম্যানরা আছেন একে অন্যের পিঠ চুলকোচুলকিতে। কোনও প্রতিনিধিই এই বিষয়ে কথা বলেন না। রাস্তাটি হওয়ার কথা ৪৮ ফুট চওড়া কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোথাও ৩৬ ফুট, কোথাও তারচেয়েও কম। এই তুঘলকির ব্যাখ্যাটা কী?
এই বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের মতামত চাইতে গেলে বিষ্ময়ে হতবাক হতে হয়। সরকারি দলের একাধিক ত্যাগী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেছেন – “কাজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে দায়িত্বশীল মহল মধুর সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে কাজ নিয়ে কোনও তদারকি করছে না। সবরকমের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে ওরা দিনের বেলায় ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা ব্লক রেখে কাজ চালাচ্ছে। হাঁটাচলার উপায়ও নেই। সড়কোন্নয়নের অজুহাতে পুরো জনপদটাই এখন বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপ যেন! সিরিয়াস পজিশনের রোগীকে হসপিটালে নেয়ার পথেই ঘটে যাচ্ছে অঘটন।রাস্তাটিকে চলাচলের অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে শহর ও সদরের ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের সরবরাহের বেলায়ও গড়িমসি দেখাচ্ছে।”
সমস্যার অন্ত নেই যেন! উন্নয়ন কর্মসূচি লাগামহীন ও বেওয়ারিশ হয়ে যাওয়ার ফলে একটি বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ আজ অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছে। তারা এখন সড়ক সংস্কারের সাথে প্রজেক্টের মিলামিল খোঁজা বাদ দিয়ে সড়কটি কখন চলাচলোপযোগী হবে সেই পথটার দিকেই চেয়ে আছে।
আপনার মতামত জানানঃ