আকাশের চাঁদ নিয়ে কতই না কাব্য! শৈশবে যার কাছে ‘টিপ দিয়ে যাওয়ার আবদার, যৌবনে তার জৌলুসেই প্রেমিকার মুখচ্ছবি ফুটে উঠতে দেখা। কিন্তু চাঁদ স্রেফ আকাশের শরীরে ঝুলে থাকা এক সুন্দর মহাজাগতিক বস্তু মাত্র নয়।
পৃথিবীর উপরে চাঁদের প্রভাব অপরিসীম। যার প্রভাবে জোয়ার-ভাটা হয়। নিয়ন্ত্রিত হয় দিন-রাতও। জানেন কি, এমন গুরুত্বপূর্ণ চাঁদ সরে যাচ্ছে পৃথিবীর নাগাল থেকে! আর তার ফলে দিন আর ২৪ ঘণ্টায় আঁটছে না। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তা ২৫ ঘণ্টাও হয়ে যেতে পারে! এমনই সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিষয়টা পৃথিবীর মানুষের কাছে একরকম অদৃশ্য, তাই পৃথিবীর মানুষের জন্য অনুমান করাও বেশ কঠিন। কিন্তু এই দূরে সরে যাওয়াটা সময়ের মতোই চলমান আর কোনোভাবেই থামানো সম্ভব না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অদৃশ্য কিন্তু কার্যকর। লাখ লাখ বছর পরে চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর আর কোনো সম্পর্কই থাকবে না। চাঁদকে দেখাই যাবে না পৃথিবী থেকে।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, যা লক্ষকোটি বছর ধরে নির্দিষ্ট দূরত্বে এর চারদিকে ঘুরছে। সৃষ্টির শুরুতে চাঁদ পৃথিবীর আরও কাছে ছিল। পাথুরে ধ্বংসাবশেষ নিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুড়ে বেড়াত চাঁদ। এখনকার সময়ের চেয়ে চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের ১০ গুণ কাছে ছিল।
চাঁদ ও পৃথিবীর সম্পর্ক বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয়। আর এই নিরীক্ষণের ফলেই ধরা পড়েছে চাঁদ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে পৃথিবীর নাগাল থেকে। হিসাব বলছে বার্ষিক ৩.৮ সেমি অর্থাৎ দেড় ইঞ্চি করে সরছে চাঁদ। আর এর ফলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূপদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডেভিড ওয়ালথাম জানিয়েছেন, ‘এসবই জোয়ারভাটার ফলে হচ্ছে। আর এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি ক্রমেই কমছে।’
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য ছিল ১৩ ঘণ্টা। সেই দৈর্ঘ্য ক্রমেই বেড়েছে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে প্রতি শতাব্দীতে ১.০৯ মিলি সেকেন্ড করে সময় বাড়ছে। অন্য একটা হিসাবে এই বৃদ্ধি ১.৭৮ মিলি সেকেন্ড। এই ভাবে বাড়তে থাকলে একসময় দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে ২৫ ঘণ্টাও হয়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলে, এই ধ্বংসাবশেষ পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহের আকারের বড় কোনো বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষের পর সৃষ্টি হয়েছিল। কসমিক ওভেন থেকে বের হওয়ার পর পর চাঁদ গরম আর গলিত অবস্থায় ছিল। রং ছিল লাল, পৃথিবী থেকে এখন সূর্যকে যেমনটা দেখা যায়, রাতের আকাশে চাঁদেরও সেই রং ছিল। সেই সময় থেকে প্রতিবছর পৃথিবী থেকে ৮ ইঞ্চি করে দূরে সরছে চাঁদ। এখন অন্য গ্রহ চাঁদকে আকর্ষণ করছে। সেই গ্রহের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় বেশি।
পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের মতো, সব গ্রহের উপগ্রহের নিজস্ব মাধ্যার্কষণ শক্তি আছে। নিজ নিজ গ্রহের ওপর এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে, যেসব গ্রহে পানি থাকবে, সেসব গ্রহে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বেশি। আমাদের পৃথিবীতে চাঁদের প্রভাবেই জোয়ার-ভাটা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদ পৃথিবীকে মহাসাগরের দিকে টানছে, কিন্তু সেই মহাসাগরগুলো পেছনে টানছে, তাই চাঁদ তার কক্ষপথে গতি বাড়চ্ছে।
এসডব্লিউএসএস১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ