হোমো জেনাস এর আদি গোত্রের প্রাণীদের থেকে হোমো সেপিয়েন্সের উদ্ভব হয়েছে; ডারউইন, ল্যামারক অনেক আগেই তা বলে গিয়েছেন। কিন্তু জানেন কি? এখনো আমাদের দেহে বেশ কিছু প্রমাণ নিয়ে আমরা চলা ফেরা করছি যারা অনবরত ঘোষণা করেই যাচ্ছে বানর শ্রেণির প্রাণী থেকেই আমরা বিবর্তিত হয়েছি! চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।
গায়ের লোম
শীতের সকালে কোন গিনিপিগের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, গিনিপিগটা ফুলে একদম বল হয়ে গেছে। এর কারণ শীতের কারণে তার লোমগুলো ফুলে উঠেছে; মানে লোম কূপগুলো জেগে উঠেছে।
শীতের দিনে আমাদের কমবেশি সবারই কিন্তু গায়ে কাটাশিরা দেয়। যেহেতু আমাদের বড় বড় লোম বিবর্তনের ফলে আর নেই, তাই আমরাও ফুলে উঠি না।
বস্তুত এই লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে কোন উপকারিতা নেই কিন্তু আমাদের। যদি গায়ে বড় লোম থাকত, তাহলে মানা যেত যে শীত নিবারণের জন্য এমন হচ্ছে, যেমনটা বড় লোমযুক্ত প্রাণীদের হয়।
কিন্তু আমাদের এমন হয় কেন? একটাই কারণ, অপ্রয়োজনীয় হলেও আমাদের পূর্বপুরুষ জন্তুদের এই বৈশিষ্ট্য বিবর্তনে বিলুপ্ত না হয়ে থেকে গেছে আমাদের মধ্যে।
পুচ্ছাস্থি বা লেজের হাড়
আচ্ছা মানুষের কি লেজ ছিল? মানুষের পূর্বপুরুষদের তো ছিলই। এজন্যই তো আমাদের দেহে এখনো রয়ে গেছে পুচ্ছাস্থি বা টেইলার বোন। মেরুদণ্ডের এক বারে শেষ প্রাণতে কক্কিক্স নামে এক গুচ্ছ হাড় রয়েছে।
ধারণা করা হয়, বিবর্তনের পথে মানুষে এসে লেজের কোন দরকার হয় নি, তাই লেজ বিলুপ্ত হলেও আমরা লেজের হাড় ঠিকই বহন করছি আমাদের শরীরে। এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক মানব শিশুকেই লেজ নিয়ে জন্মাতে দেখা যায়।
আক্কেল দাঁত
মানুষের উপরের ও নিচের চোয়ালে সর্বাধিক দাঁত থাকতে পারে মোট ৩২টি। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষ জন্তু যেমন শিম্পাঞ্জির চোয়াল আমাদের থেকে বেশ বড়। মানুষের মুখে উপরের ও নিচের চোয়ালে দুই সেট করে মোলার দাঁত থাকলেও আমাদের বিবর্তন পূর্বপুরুষদের ৩ সেট করে ছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় আক্কেল দাঁত নামক এক প্রকার দাঁত বয়ঃসন্ধির সময় বেড়ে উঠতে দেখা যায় অনেকের।
যেহেতু বিবর্তনের ফলে আমাদের চোয়াল আর আগের মত প্রশস্ত নেই, তাই এ নতুন এক সেট দাঁতের জন্য জায়গাও হয় না। সেজন্য আক্কেল দাঁত উঠার সময় অনেক ব্যাথার সৃষ্টি হয়।
অ্যাপেন্ডিক্স
বিবর্তনের পরেও আমাদের শরীরে থেকে যাওয়া আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রত্যঙ্গ। অ্যাপেন্ডিক্স আমাদের শরীরের কোন কাজে লাগেই না বরং এতে সংক্রমণ হলে প্রচণ্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয়, এবং অনেক পর্যায়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডারউইনের মতে মানুষ এবং বানর শ্রেণির প্রাণীগুলোতে বৃহদান্ত্রের শুরুতে অ্যাপেন্ডিক্স প্রত্যঙ্গটি দেখা যায়, যেটি শরীরের কোন কাজে ব্যবহৃত হয় না। আমরা যখন ঘাস খাদক প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে ফল খাদকে রূপান্তরিত হলাম, তখনই অ্যাপেন্ডিক্সের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেলো।
ইদানীংকালে বিজ্ঞানীরা কিছু কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা উদ্ভিদের পাতা বা ঘাস জাতীয় খাবার খায়, তাদের দেহে অ্যাপেন্ডিক্সের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন।
সায়েন্টিফিক আমেরিকানের মতে, এই ক্ষুদ্র অঙ্গাণুটি মানুষের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
কানের পেশী
বন্ধুদের সব আড্ডাতেই এমন একজন লোক পাওয়া যাবেই যে নিজের কানের পেশি নাড়িয়ে সবাইকে চমকে দিতে ওস্তাদ। আমাদের বিবর্তন পূর্ব পুরুষরা কানের পেশি নাড়ায় কোন শব্দ শুনে তার উৎসের সন্ধানে।
আমাদের মস্তিষ্কের এমন কিছু দরকার হয় না। শব্দ শুনে কানের পেশি না নাড়িয়েই আমরা বুঝতে পারি শব্দটি ডান, বাম, উপর না নিচ কোন দিক থেকে আসছে! কিন্তু তবুও বিবর্তনের প্রমাণস্বরূপ এই বৈশিষ্ট্যটি অনেক মানুষের মধ্যেই রয়ে গেছে।
দুধ খাওয়ার ক্ষমতা
চমকে উঠলেন? হ্যাঁ, আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে শুধু শিশুরাই দুধ হজম করতে পারত কারণ তা হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম `ল্যাকটেজ` শিশুদের দেহেই তৈরি হত।
কিন্তু উত্তর ইউরোপ, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পশু পালন শুরু হলে মানুষ আস্তে আস্তে দুধের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলো অর্থাৎ দুধ হজমের জন্য প্রয়োজনীয় জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরি হলো। এখন তাই পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষই দুধ হজমের ক্ষমতা রাখে।
পুরুষের স্তনবৃন্ত
ব্যাপারটি ঠিক বিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে মানবদেহ গঠনের দিকে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় পুরুষের স্তনবৃন্ত দেখে। প্রথম কথা হলো, পুরুষদেহে স্তন কিংবা স্তন বৃন্ত কিছুরই কিন্তু দরকার নেই। কিন্তু কেন এগুলো উপস্থিত থাকে?
ভ্রূণ গঠনের ৬-৭ সপ্তাহ পরে আসলে সেক্স ক্রোমোজোম গুলো (x এবং y) তাদের কাজ শুরু করে। কিন্তু তার মধ্যেই ভ্রূণের নিপল বা স্তনবৃন্ত তৈরি হয়, সে ছেলে হোক বা মেয়ে।
নীল চোখ
আজ থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার বছর আগে, সব মানুষই ছিল বাদামী চোখের অধিকারী। কিন্তু একটি জেনেটিক মিউটেশনের ফলে অনেকেরই আজকাল নীল চোখ দেখা যায়, আমেরিকায় এখন প্রতি ৬ জনে একজন নীল চোখ নিয়ে জন্মায়। যদিও এই ব্যাপারটি শুধু শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এসডব্লিউএসএস/২১১৫
আপনার মতামত জানানঃ