রাজউক ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারসাজি করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে পূর্বাচলের প্রকৃত অধিবাসীদের ফাইল গায়েব করে প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে কিছু ফাইলে ওই অসাধু কর্মকর্তারা কাটা ছেড়া করে নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। এতে করে প্রায় ৬০০ প্লট দুর্নীতিবাজ ওই সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। যার মূল্য প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আজ বুধবার(৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে অধিকার বঞ্চিত পূর্বাচলের মূল অধিবাসীদের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্তরা এমন অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জের দাউদপুর ও রূপগঞ্জে ২১টি মৌজায় প্রায় ৪৫৮৬ একর ও গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রায় ১৫৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর মূল জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বিতরণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ নিলেও অন্যরা প্রথমে নিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে তারা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে গিয়ে জানতে পারেন প্রায় ৬০০ জনের ফাইল গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে কিছু ফাইলে ওই অসাধু কর্মকর্তারা কাটা ছেড়া করে নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। এতে করে প্রায় ৬০০ প্লট দুর্নীতিবাজ ওই সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। যার মূল্য প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগের অন্ত নেই কোনো। ১৯৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের অংশবিশেষ নিয়ে ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ নামে প্রকল্প শুরু করেছিলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক)। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এসে সেই শহরের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬৭ ভাগ। প্রকল্পের মোট ২৬ হাজার প্লটের মধ্যে ১১ হাজার প্লট এখনো তৈরিই হয়নি।যে ১৫ হাজার প্লট রাজউক এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করেছে, সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ নয়। রাস্তাঘাট হয়নি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ কবে পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। হস্তান্তর করা অনেক প্লটই এখনো খানা-খন্দকে ভরা। এর মধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন প্লট নিয়ে অনিয়মের কারণে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় উচ্চ আদালতে মামলা আছে অর্ধ শতাধিক।
জানা যায়, আইন লংঘন করে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাসেমের পরিবারের সাত সদস্যের নামে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দের বিরুদ্ধে একজন অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ন সচিব হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। আগে দেওয়া ৫০০ প্লটের বরাদ্দ নতুন দুইজনকে দেওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেছেন প্রথম বরাদ্দ পাওয়া ৪৪ জন। পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে রিট করেছেন আরও ৮ জন। কোনো রিটেরই এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে জালিয়াত ও প্রতারক চক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই চক্রে প্রশাসনের রাজউকের লোকজন সাংবাদিকসহ দেশের রথী-মহারথী এবং তাদের স্ত্রী কণ্যা পুত্র কে নেই! যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই দুর্নীতির সুযোগ গ্রহন করেছে। বলা চলে পূর্বাচল প্রকল্পের আগা-গোড়া দুর্নীতি আর অনিয়মে ভরপুর।
বছর কয়েক আগে রাজধানীতে নিজের প্লট থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে একাধিক প্লট নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদার বিরুদ্ধে। এছাড়া পূর্বাচল প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে করা অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের সাবেক সার্ভেয়ার মো. হালিম ভূঁইয়াকে আটক করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারও আগে জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং বরখাস্ত হোন প্রকল্পেরই চার কর্মকর্তা। এমন অসংখ্য জালিয়াতি দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পের সাথে জড়িত অথবা বাইরের অসংখ্যজনের বিরুদ্ধে।
এবার জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ৬০০ জনের ফাইলই গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। ফাইল গায়েব করে প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্লট অন্য লোকদের কাছে বিক্রির পায়তারা করছিলো তারা। এসবের বাইরে ফাইলে কাটা ছেঁড়া করে নামই পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রির চেষ্টাও চলছিল। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তরা পড়েছে উভয় সংকটে। যেখানে বিচার চাইবে, যাদের কাছে বিচার চাইবে আসলে এইসমস্ত জালিয়াতি দুর্নীতির সাথে তাদেরই অধিকাংশের নাম রয়েছে। এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্লেকার্ড আর ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করার বাইরে তাদের যেন আর করবারই কিছু নেই। এইজন্যই হয়তো প্রকৃত অধিবাসীরা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। সেখান থেকে কোনো সমাধান আসবে কিনা তারা আদৌ জানে না।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২৪০
আপনার মতামত জানানঃ