জসিম মুহাম্মদ রুশনী : সংবাদপত্রকে বলা হতো আধুনিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তখন গণমাধ্যম বলতেই সংবাদপত্রকে বোঝানো হতো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ধারণা পাল্টালো, রেডিও আর টেলিভিশন এসে গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী করলো। তারপর প্রযুক্তি এসে সেটাকে করে তুললো বৈপ্লবিক গণমাধ্যম। যুগটাকেই বলা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির যুগ।
তথ্যপ্রযুক্তি সত্যকার অর্থেই বিপ্লব এনেছে সমাজে। সোস্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এসে গোটা দুনিয়াকেই মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিলো। প্রতিজন শিক্ষিত মানুষই এখন বিশ্বনাগরিক। তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় এটাকে বলা হচ্ছে নেটিজেন।
নেটিজেনরা সবসময় আপডেট থাকতে অভ্যস্ত। ঘুম ভাঙলেই ফ্রেশ হয়ে খবরের কাগজ কিংবা রেডিও টেলিভিশন নিয়ে বসতে অভ্যস্ত ছিলো যারা, তারা এখন ঘুম ভাঙলেই বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় -ই ঢুকে পড়ে খবরের দুনিয়ায়। বলা চলে – গোটা বিশ্বকে জেনে নেয়ার পরেই মানুষ নিজস্বতা নিয়ে ব্যস্ত হয়।
সমাজে বিপ্লব এসেছে। তরতর করে এগুচ্ছে সবকিছু। ঠিক এই গতির সাথেই পাল্লা দিয়ে সমানে দৌঁড়ুচ্ছে একটি বিশেষ ফড়িয়া শ্রেণি। ওরা আগে যেমনটা ছিলো, এখন তারচেয়েও অগ্রসরমাণ হয়ে ধাপ্পাবাজি করছে গণমাধ্যম নিয়ে। প্রতিমুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন মিডিয়া ট্রুপ। সেইসব ভুঁইফোড় মিডিয়েটররা বিছিয়ে দিচ্ছে অভিনব প্রতারণার নিত্যনতুন জাল।
ফেসবুক ওয়ালে হাজার হাজার আইপি টিভি ও নিউজপোর্টালের লিঙ্ক ও পেজ ভেসে উঠছে। বাহারি ভাষায় সেগুলোতে প্রতিনিধি নিয়োগের বিজ্ঞাপনও থাকছে। কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেই তাকে সাংবাদিক বানিয়ে দেয়ার মোহে ফেলে আইডিকার্ড ধরিয়ে দেয়ার জন্য দাবি করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। চর্চাবিমুখ ও স্বপ্নবিলাসী প্রজন্ম সেসব লুফেও নিচ্ছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে – একই প্রতিষ্ঠানের একই পদের আইডিকার্ড ব্যবহার করছে একাধিক ব্যক্তি। ওরা জানেও না যে তাদেরই মতো টোপ গিলিয়ে অন্য অনেকজনকে তাদেরই মতো কার্ড ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি হাস্যকরভাবে কোনও কোনও ব্যক্তি একে অপরকে একই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব দেখিয়ে দাপটও দেখাচ্ছে।
এটা মিডিয়া সন্ত্রাস। নিঃসন্দেহে এটা ঘোরতর ক্রাইম। অথচ এই ক্রাইমের হর্তাকর্তারা দিব্যি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সেজে উচ্চপর্যায়ের সাথে দহরমমহরম রেখে চলেছে। ওরা উপরতলায় বসে সুবিধা নিচ্ছে আর নীচের স্তরের অতিউৎসাহীদেরকে নামিয়ে দিচ্ছে মিডিয়া ক্রাইমে।
মিডিয়া ক্রাইমের মহামারী শুরু হয়েছে। এই মহামারী রুখতে না পারলে “ফোর্থ স্টেট”খ্যাত পাবলিক মিডিয়া তার গাম্ভীর্য্য হারিয়ে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
লেখক : জসিম মুহাম্মদ রুশনী – সংবাদ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মী
আপনার মতামত জানানঃ