সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সিলেট থেকে দিরাইগামী যাত্রীবাহী বাসে এক কলেজছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় বাসের হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক বাসের হেলপার আব্দুর রশিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে আসামি আব্দুর রশিদকে আদালতে তুললে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাগীব নুরের আদালতে ঘটনার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আশেক সুজা মামুন জানান, রশিদ আহমদ আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আটক রশিদ আহমদ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের কামরাঙ্গিরচর গ্রামের হাবিব আহমদের ছেলে।
গত ২৭ ডিসেম্বর রবিবার গভীর রাতে সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বাস মালিকের সহায়তায় জেলার ছাতক উপজেলার বুরাইরগাঁও গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে রশিদ আহমদকে আটক করে। তবে বাসের চালক শহীদ মিয়া এখনও পলাতক রয়েছে। শহীদ মিয়া সিলেটের জালালবাদ থানার মোগলগাঁও ইউনিয়নের মোল্লারগাঁও গ্রামের তৌফিক মিয়ার ছেলে।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে সিলেট থেকে দিরাইর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা সিলেট জ- বাস নং ১১০৭২৩ একটি যাত্রীবাহী বাসে আত্মীয়ের বাড়ি লামাকাজি থেকে নিজ বাড়িতে আসার জন্য দিরাইগামী বাসে ওঠেন ওই তরুণী। বাসটি সন্ধ্যায় দিরাই পৌরসভার সুজানগর গ্রামের পাশে আসলে ওই তরুণী ছাড়া গাড়িতে আর কোনো যাত্রী না থাকার বাসের চালক ও হেলপার মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
মেয়েটি প্রাণ ভয়ে বাস থেকে লাফ দিয়ে সড়কে পড়ে যান। গ্রামবাসী আহত অবস্থায় দিরাই হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
খবর পেয়ে নির্যাতিতার স্বজনসহ স্থানীয়রা রাতে দিরাই থানার সামনে বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে।
এঘটনায় শনিবার রাতেই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাসের চালক শহীদ মিয়া ও হেলপার রশিদ আহমদকে আসামী করে দিরাই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়ি দিরাই পৌর শহরের মজলিশপুর গ্রামে। সে দিরাই ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ওই ছাত্রী বর্তমানে সিলেটের এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
এর পর সোমবার ভোরে সুনামগঞ্জ জেলার গোবিন্দগঞ্জ বাজারের বুঙ্গাইরগাঁও থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বাসের হেলপার রশিদ আহমদকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে তিনি ওই তরুণীর বাসে উঠা থেকে শুরু করে লাফ দিয়ে নামা পর্যন্ত পুরো ঘটনার বর্ণণা দেন বলে জানান খালেদ উজ জামান।
হেলপার রশিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, সিলেটের লামাকাজি থেকে ওই কলেজ ছাত্রীকে বাসে তুলে দেন তার বোন জামাই। বাসটি সুনামগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিলো এবং বাসটিতে বিভিন্ন এলাকার মোট ৪৫ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে দিরাই যাওয়ার জন্য ছিলেন ৬ জন। দিরাই যাওয়ার রোড ভিন্ন হওয়ায় ৬ জন যাত্রী দিরাই রাস্তার মোড়ে নেমে গেলেও ওই তরুণী সুনামগঞ্জ চলে যান। পরবর্তীতে বাসটি আবার দিরাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলে বাসে কোন যাত্রী তোলা হয়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি পরিকল্পনামাফিক কাজ। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে বাসে চালক হেলপার ও গেটকিপার থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের চেষ্টার সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। রশিদকে সোমবারই দিরাই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ