ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র ৩৬নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক জমশেদ আলী রানা (৭০) আটদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১৬ই ডিসেম্বর বগুড়ায় মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে রাজধানীর মহাখালী বাসস্টান্ড থেকে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
এরপর থেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও, হাতিরঝিল থানায় ঘুরেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। ডিবি অফিসও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। নিখোঁজের জন্য সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী সুলতানা বেগম।
তিনি জানান, জমশেদ আলী রানা বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। ১৬ই ডিসেম্বর দুপুরে মহাখালী থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে তার সঙ্গে তাদের ভাড়াটিয়া হৃদয় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি নিজে সাক্ষী- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডিবি পুলিশ রানাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা হন্য হয়ে বিভিন্ন থানায় গেলেও কেউ তার স্বামীর খোঁজ দিচ্ছে না।
তার স্বামী বিএনপি করে এমনটা বলার পর হাতিরঝিল থানা পুলিশ তাদের সঙ্গে অকথ্য আচরণ করেছে, হুমকি দিয়েছে। জিডি করার জন্য এক থানা থেকে আরেক থানায় বারবার পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনো থানাই জিডি গ্রহণ করেনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানেন না তার স্বামী কোথায়।
মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, জমশেদ আলী রানা একজন বয়স্ক মানুষ। বিএনপি’র একজন নিবেদিত কর্মী। ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে তাকে নিখোঁজ করা হয়েছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বর্তমান স্বাধীনতার অবস্থা।
রাজনীতি করা তো কোনো অপরাধ নয়। এভাবে গুম করে, নিখোঁজ করে শেষ রক্ষা হবে না। এর জবাব একদিন এই সরকারকেই দিতে হবে। অবিলম্বে জমশেদ আলী রানাকে জনসম্মুখে ফেরত দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এক সংবাদ সম্মেলনে জমশেদ আলী রানার সন্ধান দাবি করে বলেন, যারাই এ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়, তাদের লুটপাটের প্রতিবাদ করতে চায়, তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নিখোঁজ করা হচ্ছে। গুম-খুন করে বিরোধী দলকে দমনের যে নীতি আওয়ামী লীগ নিয়েছে তা সভ্যতা বহির্ভূত।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা আগেই এ বিষয়ে সাবধান করেছিল। তারা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে গেছে মনে হলেও আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কমে গেলে এবং আগামী ’২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরও ভয়াবহভাবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের কথাই সত্য হচ্ছে।
দেশে গুমগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের কয়েকজন ফিরে এলেও তারা ভয়ে কোনো কথা বলেন না। গুমের মাধ্যমে দেশে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। গত নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন গুম হওয়ার ভয়ে অনিয়ম দেখেও তারা কোনো বাধা দিতে পারেননি। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কমে গেলেও আগামী নির্বাচনের আগে আবারও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর গুম কমেছে। এই পরিণাম আরও ভয়াবহ। কেননা সরকার জনগণের কথা চিন্তা করেনি। বরং সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যক্তিগত ক্ষতির আশঙ্কা থেকে গুমের ঘটনাকে কমিয়ে দিয়েছে। তিনি আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো ভূরাজনৈতিক কারণে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তবে আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশে আবার গুমের মতো ঘটনা ঘটবে।
উল্লেখ্য, গুমের মাধ্যমে মানুষের বিরুদ্ধে মতকে দমন করে সরকার নির্বাচনকে অস্বীকার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। সরকার নিজেদের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নগ্নভাবে ব্যবহার করছে। ফলে জনগণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। রক্ষক হয়ে উঠছে ভক্ষক।
এসডব্লিউএসএস/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ