গণতন্ত্রের অজুহাত দিয়ে বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কোনো রাষ্ট্রে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় জাতিসংঘের ঘোষণায় এটি অগ্রহণযোগ্য। গতকাল মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে ঢাকাস্থ রাশিয়া দূতাবাস এ মন্তব্য করে।
রুশ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা সম্পর্কিত ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ‘কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যা-ই হোক না কেন সেখানে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ হস্তক্ষেপের অধিকার অন্য কোনো দেশের নেই।’
তবে, দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক সময়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি লঙ্ঘনের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
রুশ দূতাবাস আরও জানায়, নিজেদের উন্নত গণতন্ত্র হিসেবে দাবি করা দেশগুলোর মধ্যে আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হচ্ছে। তারা শুধু জাতিসংঘের সার্বভৌম সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপই করে না, বরং নির্লজ্জ ব্ল্যাকমেইলিং, অবৈধ বিধি-নিষেধ ইত্যাদিও অবলম্বন করছে। এর কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সার্বভৌমত্ব বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
যারা নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করছে তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ রক্ষার অজুহাত দিয়ে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করে বিবৃতিতে রুশ দূতাবাস জানায়, এ ধরনের নীতি স্পষ্টতই বিশ্বব্যবস্থার স্থায়িত্ব নষ্ট করে বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় ডেকে আনে। অসম্পূর্ণ তালিকায় আছে যুগোশ্লাভিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তান।
তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া তার নীতিগত অবস্থানে সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ বিদেশি শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে নিজস্ব জাতীয় স্বার্থে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়ন করে রাশিয়া তাদের সমর্থন করে।
পাশাপাশি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ‘সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ আছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মতো যেসব রাষ্ট্র বাইরের শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থে তাদের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি গঠন করে, তারাও (রাশিয়া) একই পন্থা অবলম্বন করে।’
দূতাবাস বলেছে যে, রাশিয়া তাদের আরো উন্নয়নের উপায় স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করতে এবং নব্য-ঔপনিবেশিক পদ্ধতির অধীন নয় এমন একটি ব্যবস্থা গঠনে দেশগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে।
অনেক দেশের সার্বভৌমত্ব অভূতপূর্ব ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমনটি রাশিয়ান ফেডারেশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ফেডারেশন কাউন্সিলের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার অ্যাডহক কমিশন দ্বারা প্রমাণিত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো বহুবিধ এবং এর মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত অ-বাণিজ্যিক একাধিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা বা সমর্থন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা, জনমত গঠনের জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর ব্যবহার, প্রতিবাদকে উস্কে দেয়া এবং ফেডারেল বা আঞ্চলিক নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা।
অনেক দেশের সার্বভৌমত্ব অভূতপূর্ব ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমনটি রাশিয়ান ফেডারেশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ফেডারেশন কাউন্সিলের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার অ্যাডহক কমিশন দ্বারা প্রমাণিত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো বহুবিধ এবং এর মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত অ-বাণিজ্যিক একাধিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা বা সমর্থন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা, জনমত গঠনের জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর ব্যবহার, প্রতিবাদকে উস্কে দেয়া এবং ফেডারেল বা আঞ্চলিক নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা।
এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে কৌশলগত স্বাধীনতা এবং একটি ন্যায্য বিশ্বব্যবস্থার সার্বভৌম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে।
রাশিয়ার এই বিবৃতি মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করেই। বাংলাদেশ নিয়ে গত বছর কয়েকের তুলনায় বেশ চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বেশ তৎপরই মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রায় প্রতিদিনই তাগিদ দিতেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। কেবল সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্যসহ বিশেষায়িত নানা আকাঙ্খা যোগ করেছেন। একথাও বলছেন যে সামনের নির্বাচন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেছেন সমানে। জবাবদিহি ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই- এমন খাসকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পিটার হাস।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ঠেকে যাওয়া দেওয়ালে যেন পিঠ হয়ে দাঁড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। আজকের সম্মেলনকে ঘিরে বেশ তৎপর দেশটি। আওয়ামী লীগের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও ঘটছে।
সম্প্রতি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার রিপোর্টগুলো সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত নিবিড়ভাবে’ পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে বিরোধী দল যখন বড় সমাবেশের আয়োজন করছে তখনই এমন বার্তা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। আর রাশিয়াও যে যুক্তরাষ্ট্রের এই কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কথা বলেছে সেটা কাউকে আলাদাভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার নেই।
এসডব্লিউএসএস/১৮০৫
আপনার মতামত জানানঃ