১৯৮৩ সালের নভেম্বর। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ১৮ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে বাংলাদেশ। তবে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা সেবারই প্রথম নয়। তার আগে জিয়াউর রহমানের সময়ও চার সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। তবে সম্পর্কের এ অবনত অবস্থার বরফ গলতে থাকে মূলত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার পালাবদলে আবারো অবনতি ঘটে দুই দেশের সম্পর্কের। যদিও গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকার রাশিয়ার সঙ্গে তিক্ত সে সম্পর্ক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সেই বৃত্ত থেকে এখন রাশিয়া বের হয়ে আসতে পারবে কিনা সে প্রশ্নই উঠেছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্ক সবসময় নির্ভর করেছে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা গ্রহণের ওপর। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়ার বিনিয়োগ বরাবরই বেশি এসেছে। বিগত কয়েক বছরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিশ্লেষণ করলে এমনটি বোঝা যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশে রাশিয়ার বিনিয়োগের অনন্য নিদর্শন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে দেশটির যে পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে, তার বৃহৎ অংশই এসেছে শেখ হাসিনা সরকারের সময়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে, স্বাধীনতার পর থেকে রাশিয়া এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোট ১ হাজার ২২৮ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঋণ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে কেবল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য।
এ প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। সেটা মুক্তিযুদ্ধকাল থেকেই। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক, কথাটি একেবারে অসত্য নয়। এখনো আমাদের সম্পর্ক মোটামুটি পর্যায়ে আছে। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখি। সত্তরের দশকে ঘোড়াশালে আমাদের যে পাওয়ার প্লান্ট করা হয়েছিল, তখন রাশিয়ার বাইরে অন্য জায়গা থেকে এগুলো আনার সুযোগ আমাদের ছিল না। এখন আবার নিউক্লিয়ার প্লান্ট যেটা হচ্ছে, সেটাও রাশিয়ার সহায়তায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেকগুলো মিগ-২৯ বিমান কেনা হয়েছিল। সেগুলো কতটা কাজে লেগেছে কিংবা কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা গেছে, সেটা জানি না। তখনো নানা রকম প্রশ্ন উঠেছিল এ চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও মান নিয়ে। এখনো রূপপুর নিয়েও কিন্তু একই প্রশ্ন আছে। দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজনীয়তা ও স্বার্থের বিষয় মনে রেখেই সম্পর্ক করতে হবে। সেক্ষেত্রে উভয় দেশেরই অনেক জায়গা আছে, যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এর বাইরে অন্য উপাদান যদি যোগ হয়, তাহলে এগুলো কিন্তু প্রশ্ন তৈরি করে। রাশিয়ার সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক হবে বলে মনে করছি না। তবে অনেক প্রশ্ন তো তৈরি হচ্ছে। প্রশ্নগুলো উভয় দেশ কীভাবে মোকাবেলা করবে, সেটা বিবেচ্য বিষয়।’
স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা করে রাশিয়া। যদিও এরপর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তেমন বড় কোনো বিনিয়োগে দেশটিকে পাশে পায়নি বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলারে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। ২০০১ সালে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালে আবারো আওয়ামী লীগ সরকারে এলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়।
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৯৬ কোটি থেকে ১২৭ কোটি ডলারের ছিল। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে আমদানি ও রফতানি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ছিল প্রায় সমানে সমান। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আমদানি ছিল, আর বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৪৬ কোটি ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪৮ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করা হয়, বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা হয় ৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য।
২০২০-২১ অর্থবছরে দু’দেশের বাণিজ্য ছিল ১১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে রাশিয়ার। বাংলাদেশে রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেশটি অর্থায়ন করেছে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। এ অর্থের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি রয়েছে (৯০ শতাংশ ঋণ রাশিয়ার)। প্রকল্পে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ৭৮০ কোটি ডলারের ঋণ গ্রহণ করেছে, যা মোট ঋণ গ্রহণের ৬৪ শতাংশ। এ প্রকল্পে অর্থ, প্রযুক্তি ও পণ্য আমদানির সিংহভাগ করছে রাশিয়া। এ ঋণ ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
বাণিজ্যের পাশাপাশি বিগত তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যায় রাশিয়া। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পাঠায় শেখ হাসিনা সরকার। চলতি বছরের মার্চে আটদিনের জন্য রাশিয়া যান তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান ও স্বার্থের ওপর। রাশিয়ার সঙ্গে আগে বড় ধরনের সে রকম কোনো কিছু ছিল না। কিন্তু এবার রূপপুর পারমাণবিক প্লান্ট যেহেতু শেষের দিকে পৌঁছে গেছে, এখানে তো দুই দেশের স্বাভাবিকভাবেই একটি ইন্টারেস্ট আছে। সেদিক থেকে তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করে এটি করতে হবে। আমরা মনে করি কোনো দেশের সঙ্গেই বৈরী সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। দেশের স্বার্থেই কাজ করা ভালো।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় রাশিয়া। যুদ্ধ চলাকালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলে দেশটি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যখন সপ্তম নৌবহর পাঠানোর পাঁয়তারা করছিল, তখনই পাল্টা নৌবহর পাঠায় রাশিয়া। স্বাধীনতার পরও নানাভাবে বাংলাদেশের পুনর্গঠনে পাশে দাঁড়ায় দেশটি। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সে বছরই বঙ্গোপসাগরে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণে সহায়তা করে। সত্তরের দশকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে দেশটি সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। সে সময় সিদ্ধিরগঞ্জ ও ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করে রাশিয়া। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে আর তেমন বড় কোনো সহায়তা রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসেনি।
বরং ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের সময় চারজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে বাংলাদেশ। এ কূটনীতিবিদরা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অত্যাধুনিক যোগাযোগমূলক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিলেন, যা দিয়ে তারা বাংলাদেশীদের মধ্যে নিযুক্ত সোভিয়েত গুপ্তচরদের (বা ‘এজেন্ট’দের) সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলে অভিযোগ এনেছিল বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থা। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার দুই মাস পরই গোয়েন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আরো দুই সোভিয়েত কূটনীতিককে বহিষ্কার করে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড়সংখ্যক অর্থাৎ ১৮ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে ১৯৮৩ সালে।
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বড় ধরনের উন্নতি ঘটেনি। বরং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো থেকেই বিভিন্নভাবে আর্থিক বিনিয়োগ ও সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এ মুহূর্ত পর্যন্ত খারাপ কিছু দেখিনি। নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য হয়তো কখনো খারাপ হয়। মন্ত্রী থাকাকালে দেখেছি তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চেয়েছিল। বিশেষ করে গার্মেন্টসসহ বেশকিছু বিষয়ে তারা আগ্রহী ছিল। কিন্তু ব্যাংকিং সমস্যার কারণে তা করতে পারেনি। আমাদের এখান থেকে পাঠালে ঠিকমতো টাকা পেত না। এদিকে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্পে রাশিয়া ঋণ দিয়েছে। এখন তো সব ধরনের মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা উঠছে বিশেষ করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নিরাপত্তা ও অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়ে অভিযোগ আসছে। এসব ক্ষেত্রে মনে হচ্ছিল কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। কিন্তু এমনিতে তো এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য আছে বলে এ পর্যন্ত মনে হয়নি। তবে সামনের দিনে সম্পর্ক খারাপ হবে না বলেই আমি আশাবাদী।’
দেশের জ্বালানি খাতে রাশিয়ার সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সম্প্রতি টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণকে ঘিরে। রাশিয়ার কাছ থেকে নেয়া ঋণের আসল পরিশোধে বাংলাদেশ থেকে সময় চাওয়া হলেও তাতে সাড়া মেলেনি রাশিয়ার। বরং দেশটি এখন ঋণের সুদ চীনা মুদ্রায় নিতে চায়। ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিগত দুই বছরের বেশি সময় ধরে টানাপড়েন চললেও সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাশিয়ার সঙ্গে অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা বেড়েই চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার রূপপুরসহ বিদ্যুৎ খাতে নানা ধরনের সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে ঋণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একধরনের টানাপড়েন দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে বৃহৎ আকারে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বড় পরিসর শুরু হয় মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করলে ২০১০ সালের জাতীয় সংসদে এ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ২০১১ সালের নভেম্বরে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন, রাশিয়ার ঋণ, প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক চাপ মোকাবেলা, যৌথ সমন্বয় কমিটি সবকিছুই হয় শেখ হাসিনার গত দেড় দশকের শাসনামলে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা-মস্কো আবার মস্কো-ঢাকার মধ্যে ঋণসহযোগিতা পেতে নানা ধরনের দেনদরবার করা হয়। এর ফলে রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ এ অর্থ সহায়তা পায় বাংলাদেশ। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা প্রণয়ন, যন্ত্রাংশ আমদানি, প্রযুক্তিগত সহায়তা, দক্ষ জনবল সরবরাহ, তৈরিসহ নানা খাতে রাশিয়ার সঙ্গে শক্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে শেখ হাসিনা সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত বছর দেশে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়, তাতে আশ্বাসও মেলে।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটাই শাসককেন্দ্রিক। তার মানে এই নয় যে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিস্তৃতি কম। বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা ওখানে পড়ালেখা করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আছে। তবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা অনেক বেশি ব্যাপ্তি পেতে দেখা গেছে ডিজেল ও জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে। রূপপুর পাওয়ার প্লান্টকে কেন্দ্র করেই রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঋণের ভারসাম্য অনেকটা বেড়ে গেছে। এখন এ পাওয়ার প্লান্ট যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, এর পেছনে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, পুরোটাই অপচয় হয়ে যাবে। সরকারের উচিত হবে এটাকে চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। তবে এটাও বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে খুব একটা ছেদ আসবে অথবা খুব একটা ওঠানামা হবে, সে জায়গা নেই। এ পাওয়ার প্লান্টকে কেন্দ্র করেই ভবিষ্যতে বাজার সম্প্রসারণ হতে পারে, সে কেন্দ্রিকই সম্পর্কটা রাখবে। তবে সে জায়গাতে সম্পর্কের ব্যাপ্তি বর্তমানের চেয়ে বেশি হবে বলে মনে হয় না।’
অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে আবারো সংশয় দেখা দেয় নানা মহলে। যদিও আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়া পাশে থাকবে বলে জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দার মান্টিটস্কি। গত ২৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঢাকায় তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে অভিনন্দনও জানান। একই সঙ্গে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ের যৌথ কার্যক্রমগুলোর প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে জ্বালানি, কৃষি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তোলার সম্ভাবনাও তুলে ধরেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
আপনার মতামত জানানঃ