আয়তনের বিচারে পশ্চিম এশিয়ার সবচাইতে বড় আরব দেশের নাম ‘সৌদি আরব’। সৌদি আরবের উত্তরে জর্ডান ও ইরাক, উত্তর-পূর্বে কুয়েত ,পূর্বে কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। এছাড়াও এর দক্ষিণ-পূর্বে ওমান ও দক্ষিণে ইয়েমেন অবস্থিত। সৌদি আরবের মরুভূমির বুকে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার হাজারো ইতিহাস।
প্রায় শতভাগ মুসলিমের বসবাস এই সৌদি আরবে। কিন্তু হাজার বছর আগে এখানেও ছিল ভিন্ন মতবাদ ও গোষ্ঠী এবং সামাজিক প্রথার মিলনমেলা। তাই এখানে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন সভ্যতার হাজারো নিদর্শন। তেমনই এক নিদর্শন সৌদি আরবের মরুভূমিতে হঠাৎ জেগে ওঠা মাছ আকৃতির বিশাল এক পাথুরে কাঠামো।
অন্য সময় হলে হয়তো কাঠামোটিকে দৃষ্টিবিভ্রম বা মরীচিকা বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু ফটোগ্রাফার খালেদ আল-ইনাজির ক্যামেরায় দৃশ্যটি বন্দী হওয়ার পর সেটিকে আর কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের আল-উলা অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আল-ইনাজি ড্রোন ব্যবহার করে মরুর বুকে ছবি তুলছিলেন। এমনটি করতে গিয়েই তাঁর ড্রোনের ক্যামেরায় অস্বাভাবিক গঠনের ছবি ধারণ করেন। এই অঞ্চলকে জর্ডানের প্রাচীন পেত্রা শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী চিহ্নিত করে থাকেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
আল-ইনাজি সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমি যখন এলাকাটির দৃশ্য রেকর্ড করছিলাম, তখন আমার সামনে পাহাড়ের মতো একটি দৃশ্য দেখা গেল। এর গঠন মরুর বুকে একটি মাছের ইঙ্গিত দেয়।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সম্ভবত আমি প্রথম ব্যক্তি নই যে এমন গঠনের পাথুরে আকৃতির মুখোমুখি হয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমিই প্রথম এম কৌতূহলোদ্দীপক আকৃতি দেখতে পেয়েছি। কারণ, একজন ফটোগ্রাফারের চোখ সাধারণ মানুষ যা দেখে না তা দেখতে পায়।’
ফটোগ্রাফার আল-ইনাজি কাঠামোটির নাম দিয়েছেন ‘মরুর পাথুরে মাছ’। চলতি বছরের জুনে আল-ইনাজির রেকর্ড করা ড্রোন ফুটেজ থেকে দেখা গেছে—পাথরের কাঠামোটি সোনার বালুর মধ্য দিয়ে সাঁতার কাটছে এমন একটি মাছের মতো। যার পিঠে পাখনাও রয়েছে, যা দেখে মনে হতে পারে—এটি একটি হাঙর হতে পারে, যা তার শিকারকে যেকোনো সময় তাড়া করতে পারে।
ছবিগুলি শেয়ার করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অতি কল্পনাপ্রবণ কথাবার্তায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন খালিদ। এদের দাবি,পাথরগুলি আসলে একটি বিশাল সমুদ্রের প্রাণির দেহাবশেষ।
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন, এটি আসলে মাছ, যা লাখ লাখ বছর আগে জীবাশ্ম হয়ে গিয়েছিল, তবে এটি এমন নয়। এটি বেলেপাথর।’
সৌদি আরবের মরুভূমিতে রয়েছে একটি রহস্যময় দূর্গও। আরব মরুভূমি পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে বিশাল মরুভূমি। এটি ইয়েমেন থেকে পারস্য উপসাগর ও ওমান থেকে জর্ডান ও ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি আরবীয় উপদ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে করে আছে যার মোট আয়তন ২৩,৩০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মরুভূমি এবং এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। উত্তর সৌদি আরবের এ অংশে জনমানবের কোনো চিহ্ন নেই। এমনই এক স্থানে বিশাল এক পাথর খোদাই করে তৈরি করা হয় এক রহস্যময় দুর্গ।
সামনে থেকে দেখলে মনে হবে, এটি শুধুমাত্র বিশাল আকৃতির পাথরের অবয়ব ছাড়া অন্য কিছু নয়। কিন্তু এই পাথর খন্ডের অন্য পাশে গেলেই ধরা পড়ে এর আসল সৌন্দর্য। পাথর খন্ডটির অপর পাশে ধরা পড়ে অসম্ভব দক্ষ হাতের কারুকাজ, যা দেখলে রীতিমত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। বিশাল এই পাথর খন্ডের প্রতিটি ফটকে রয়েছে সুনিপুণ হাতের ছোঁয়া। দক্ষ হাতের কারুকাজ এবং এর বিশালত্ব যেকোনো পর্যটককেই করে তুলতে পারে দ্বিধান্বিত। স্বাভাবিক নিয়মেই মনে প্রশ্ন জেগে উঠতে পারে, কেনই বা এমন জনমানবহীন স্থানে এমন এক দুর্গ তৈরি করা হল? আর কারাই বা এই দুর্গ তৈরি করলেন?
এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে অনেকটা পেছনের দিকে। খ্রিস্টীয় ১ম শতকে, আরব সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের সময়কার যুগ। সেই সময়টিতে ছিল নাবাতিয়ান নামক এক যাযাবর গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য। যদিও ইতিহাসবিদদের কাছে নাবাতিয়ানদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ইতিহাসবিদদের মতে নাবাতিয়ানরা ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাধর এবং পরিশ্রমী জাতি। তাদের হাতের কাজ ছিল অসাধারণ এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা বিশাল বিশাল পাথর খোদাই করে অনন্য স্থাপনা তৈরি করতে পারতেন।
এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে অনেকটা পেছনের দিকে। খ্রিস্টীয় ১ম শতকে, আরব সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের সময়কার যুগ। সেই সময়টিতে ছিল নাবাতিয়ান নামক এক যাযাবর গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য। যদিও ইতিহাসবিদদের কাছে নাবাতিয়ানদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে ইতিহাসবিদদের মতে নাবাতিয়ানরা ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাধর এবং পরিশ্রমী জাতি। তাদের হাতের কাজ ছিল অসাধারণ এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা বিশাল বিশাল পাথর খোদাই করে অনন্য স্থাপনা তৈরি করতে পারতেন।
যাযাবর হলেও তারা পরবর্তিতে ধীরে ধীরে বসতি স্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করতে থাকেন। ঘুরতে ঘুরতে তারা তৎকালীন পেট্রা নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। পেট্রা ছিল মূলত প্রাচীন আরব সাম্রাজ্যের একটি অংশ যা বর্তমানে জর্দান নামেই বহুল পরিচিত। এখানেই নাবাতিয়ান সভ্যতার গোড়াপত্তনের ইতিহাস শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। বিশাল বড় বড় পাথরের উপর অতি অল্প সময়ের মধ্যে খোদাই করে এক অপরূপ সুন্দর নির্মাণশৈলী উপস্থাপন করতে পারতেন এই নাবাতিয়ানরা। ধারণা করা হয়, তাদের হাতেই তৈরি হয়েছে এই দূর্গ।
এসডব্লিউএসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ