কয়েক দিন আগে গণমাধ্যমে তিন কলামের একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার শিরোনামে ছিল—‘সব সুবিধা খেলাপিদের জন্য’। ওপরে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে পাওয়া একটি গ্রাফ ছিল—‘যেভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে’ (প্রথম আলো, ১৫ নভেম্বর ২০২২)। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত ওই গ্রাফে পাঁচ বছরওয়ারি হিসাব দেখানো হয়েছে। এতে ধারণা পাওয়া যায়, কোন সময় কারা দেশ চালিয়েছে। যেমন ১৯৯০-৯৫ সালের অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তখন খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৯৫-২০০০ সালের বেশির ভাগ সময় দেশ ছিল আওয়ামী লীগের হাতে।
তখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়েছে দ্বিগুণের কিছু বেশি। পরের পাঁচ বছরের (২০০০-২০০৫) আশি ভাগ সময় বিএনপির কবজায় ছিল দেশ। তখন খেলাপি ঋণ বেশ খানিকটা কমেছিল। ২০০৫-২০০৮ মেয়াদে বিএনপি আর এক-এগারোর সরকার ছিল দেশে। ওই সময় খেলাপি ঋণ বেড়েছে সামান্য। ২০০৮ সাল থেকে দেশে আওয়ামী লীগের সরকার। গত ১৪ বছরে দেশে অনেক বড় বড় স্থাপনা হয়েছে। আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। আমরা বিশ্বে রোল মডেল হয়েছি। খেলাপি ঋণ বেড়েছে ছয় গুণ, একেবারে রকেটগতিতে।
এদিকে অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘খেলাপি ঋণের বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে। পাচার হওয়া অর্থ কখনোই ফেরত আসবে না। পাচার হওয়া অর্থে বিদেশে বাড়ি কিনেছেন পাচারকারীরা। সম্পত্তি কিনেছেন। পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে অনেকেই এখন ওই সব দেশে আসা-যাওয়া করছেন। একটা পর্যায়ে তাঁরাও চলে যাবেন। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট, তার নেপথ্যে রয়েছে খেলাপি ঋণ ও দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার বেড়ে যাওয়া।’
সরকার বলে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়। কিছু কিছু লোকের এটা সহ্য হচ্ছে না। তারা শুধু সমালোচনা করেন। সুতরাং তারা উন্নয়ন চান না। কিন্তু এই উন্নয়নের পেছনে যে একটা ভয়ংকর অন্ধকার দিক আছে, সেটি এখন টের পাচ্ছি। প্রায় প্রতিবছর ব্যাংকঋণ রিশিডিউল করা হয়। তখন নানান ছলছুতায় খেলাপিকে খেলাপির খাতা থেকে কেটে ‘বকেয়া’ হিসেবে দেখানোর কসরত চলে। এই খেলা চলছে অনেক বছর ধরে। এখানে একটা প্রশ্ন মনে জাগে, একজন খেলাপি হওয়ার পরও তিনি আবার কী করে ঋণ পান? কোন বিবেচনায় ব্যাংক তাঁকে ঋণ দেয়?
কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এনজিওদের দেওয়া ঋণের উচ্চ হারে সুদ নেওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, এটা অনৈতিক। খুবই ভালো কথা। এনজিওর ঋণ নেন গরিব মানুষ। সুদের পরিমাণ বেশি হলে বছর শেষে দেনা শোধ করার পর নতুন বিনিয়োগের জন্য তার হাতে সঞ্চয় থাকে না। তাঁকে আবার ঋণ নিতে হয়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। এ এক দুষ্টচক্র। এটাকে বলা যায় ‘রিসাইক্লিং অব ডেট’। গভর্নর সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন, পাবলিক এত বোকা কেন? কেন তারা এত উচ্চ সুদে ধার নিতে এনজিওদের কাছে ছুটে যান?
তারা ব্যাংকে যান না কেন? এখানেই কিন্তু আসল রহস্য লুকিয়ে আছে। গরিব মানুষকে ব্যাংক ঋণ দেয় না। তারা ঋণ দেয় টাকাওয়ালাদের। গরিবদের জন্য তারা সময়-সময় বিশেষ প্রকল্প বানায়। গরিবকে ব্যাংকের ঋণ পেতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়, ঋণ পেতে নানা রকম লেনদেনের কথাও শোনা যায়। ফলে কাগজে–কলমে অল্প সুদে ঋণ পেলেও প্রকৃত সুদ হয় অনেক বেশি। সে তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম সুদে এনজিও ঋণ দেয়। এ জন্য তাঁকে এনজিওর অফিসে যেতে হয় না। ওদের কর্মীরা বাড়িতে এসে তাঁদের হাতে টাকা দিয়ে যায়। গভর্নর সাহেব, আপনি ব্যাংকব্যবস্থার প্রধান। আপনারা থাকতে মানুষ আপনাদের কাছে না গিয়ে এনজিওদের কাছে যান কেন? আপনারা এই সেবাটুকু দিলে তো কেউ আর অন্য জায়গায় যেতেন না। তো আপনারা এই সেবাটুকু দিচ্ছেন না কেন?
প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থায় অনেকেই অনেক টাকা ঋণ নেন। এখনকার হিসাব আর কোটিতে নেই। এটা হয়ে গেছে শত শত বা হাজার হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক জানে কে খেলাপি। জেনেশুনেও তারা চেনা মুখগুলোর কাছে দরাজ হাতে তাদের তহবিলের ডালা খুলে দেয়। আমাদের ব্যাংকব্যবস্থাসহ অর্থ খাতে আছে নানান সমস্যা। এসব সমস্যা তাঁরাই তৈরি করেন, যাঁরা এগুলো চালান।
জিন-ভূত এসে এসব করে দিয়ে যায় না। এ নিয়ে কেউ সরব হলে তাঁর কপালে দুঃখ আছে। আমরা তো ভুলে যাইনি, একসময় একটি প্রতিষ্ঠানের হোমরাচোমরারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অফিসে গিয়ে কী করেছিলেন? শুধু গায়ে হাত তোলা বাকি ছিল।
২০১৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দুর্নীতি ছিল একটা বড় সমস্যা। এ জন্য অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে ব্যাংক খাতের সংস্কার ছিল জরুরি। সরকার ওই সময় একটি ব্যাংকে তিন শ কোটি টাকার অনিয়ম পেয়েছিল। তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি বরখাস্ত হয়েছিলেন। সরকার নিয়ম চালু করেছিল, কোনো পরিবার থেকে একটি ব্যাংকে দুজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।
কেউ পরপর দুই মেয়াদের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। দরকার হলে দুই মেয়াদের পর এক মেয়াদ বাদ দিয়ে পরে আবার পরিচালক হতে পারবেন। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে ব্যাংকের কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই স্ত্রী বা আত্মীয় পরিচয়ের সুবাদে কেউ কেউ ব্যাংকের পরিচালক হয়ে গেছেন।
নিজে অল্প কিছু টাকা জমা দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে ব্যাংক চালু করেন। সেখানে হাজার হাজার গ্রাহকের টাকা থাকে। মালিক তো ওরাই। কিন্তু এ দেশে ব্যাংক পরিচালকেরা মনে করেন, তাঁরাই ব্যাংকের মালিক।’ (সূত্র: এক-এগারো: বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮, প্রথমা প্রকাশন)।
যে কথা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, কিন্তু তার বক্তব্যে ঊহ্য ছিল, তা হলো, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের কাণ্ড ঘটে না। আর ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনগণের সম্পদ নিজস্ব গোষ্ঠীর মধ্যেই বিলি-বণ্টন করতে। এ তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। ব্যাংকব্যবস্থা চলে গেছে ঋণখেলাপি ও লুটেরাদের হাতে।
এবার আসি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। ‘ব্যাংকসমূহে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে’, ‘ব্যাংকে টাকার সংকট হলে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক’—সংবাদ সম্মেলন করে এমন ঘোষণাসহ জরুরি বিজ্ঞপ্তি এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) বলেছে, বর্তমানে ব্যাংকব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
এখানে দুটি প্রশ্ন তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কি চাইলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকে নগদ টাকা সরবরাহ করতে পারে? আমানতকারীরা যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ ও সঞ্চয় জমা রেখেছে, তাদের সেবার গ্যারান্টি বাংলাদেশ ব্যাংক আগ বাড়িয়ে কেন দিচ্ছে? কেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরা আমানতের নিরাপত্তার ব্যাপারে গ্রাহক যোগাযোগ করেছে না!
সরকারপ্রধানের আগাম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা, ২০২৩ সালকে কঠিন বছর ঘোষণা করা, বিএনপির সফল বিভাগীয় গণসমাবেশ, দেশের চলমান বিদ্যুৎ-জ্বালানিসংকট, অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, ডলার-সংকটসহ বৈশ্বিক মন্দার আভাস ইত্যাদির সম্মিলিত প্রভাবে ভবিষ্যতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে, এমন ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে ফেলার ভাবনায় তাড়িত হয়ে থাকতে পারেন। এটা ব্যাংকের তারল্য বা নগদের সংকট নয়; বরং আস্থার সংকট।
এমতাবস্থায় নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই বলে সতর্ক করা যে তারা যাতে মাঝারিসহ বড় চেক অনার করার সময় গ্রাহক হয়রানি না করে। যেকোনো নগদায়নকে সহজ করে। কোনো ব্যাংক যাতে প্রবেশপথে বা অর্থ উত্তোলন বুথের সামনে লিখে না রাখে যে, এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে এত কর্মদিবস আগে জানাতে হবে। ৫ লাখ টাকার বেশি নগদায়নে যাতে গড়িমসি করা না হয়, গ্রাহকদের না ঘোরায়। বড় চেক অনারে যে পজিটিভ পে-স্লিপের ব্যবস্থা আছে, সেটার হয়রানিমুক্ত বাস্তবায়ন হয়। মেয়াদি জমা, ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা সঞ্চয়ী স্কিম ভাঙাতে কোনো ব্যাংক যাতে বাধা না দেয়। কোনো ব্যাংকের খারাপ আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব আকারে ছড়িয়ে গেলে আস্থার সংকট গভীর হবে।
খেলাপি ঋণের শীর্ষে যে ব্যাংকগুলো
দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে সরকারের মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। তবে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশই খেলাপি। অবশ্য গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
খেলাপি ঋণে শীর্ষ দশে থাকা জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, নূরজাহানসহ অন্যান্য গ্রুপ মিলে হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত এক বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী—উচ্চ খেলাপি ঋণের হার বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (সাবেক ওরিয়েন্টাল)। এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৮৩ শতাংশের বেশি খেলাপি। এই ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে ২০০৬ সালে সীমাহীন ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। এই ব্যাংকের আমানতকারীদের অনেকেই এখনও আমানতের টাকা ফেরত পায়নি।
পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির বিতরণ করা ৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকাই খেলাপি।
খেলাপি ঋণের শীর্ষ দশে থাকা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ব্যাংকটি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়।
প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংক খাতে গত একযুগ ধরে বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, এসএ গ্রুপ, নূরজাহান, অলটেক্স, সানমুন গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি। এসব ঘটনায় সুদসহ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর পুরোটাই এখন খেলাপি।
খেলাপি ঋণের শীর্ষ দশে থাকা সোনালী ব্যাংকে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (বিডিবিএল) সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের আধিক্য বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ দুটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ ও ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ খাতের অপর ব্যাংক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঋণ।
বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের প্রতিনিধি দল উচ্চ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে তা কমানোর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি রয়েছে ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বেশি থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি বা ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হলেই তা উদ্বেগজনক। কাজেই খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ