অবৈধ অস্ত্র বিক্রির সময় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এক পুলিশ সদস্য। শুক্রবার(২৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার সিনেমা প্যালেস এলাকার আদর আবাসিক হোটেলে অস্ত্র বিক্রির সময় পুলিশ কনস্টেবল স্বরূপ বড়ুয়াকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। স্বরূপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পুলিশের এই ঘটনাকে পাশে রেখে চলচ্চিত্রপ্রেমিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমায় পুলিশকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগে পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধাকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন, ট্রোল করছেন। পুলিশকে হাস্যস্পদ করে প্রতিবাদ করছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল সৌরভ বড়ুয়া পাঁচ দিন আগে থেকে ছুটিতে রয়েছেন। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল লালদীঘি পাড় এলাকার হোটেল আদরে অভিযান চালিয়ে রিভলবারসহ এক যুবককে আটক করে। অবশ্য পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে ওই যুবক হোটেল থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে সিঁড়ি ঘরের নিচ থেকে আটক করে। গায়ের জ্যাকেটের ভেতরে একটি ব্যাগের মধ্যে কালো রঙের রিভলবারটি রাখা ছিল।পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বরুপ বড়ুয়া জানায়, সে শিল্প পুলিশে কর্মরত একজন কনস্টেবল। আর বিক্রির জন্যই অস্ত্রটি নিয়ে সে হোটেল কক্ষে অবস্থান করছিল। তবে এই অস্ত্রের ক্রেতা কে ছিল তা স্বরুপ বড়ুয়া নিশ্চিত করেনি।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন গণমাধ্যমকে জানান, গ্রেফতার স্বরূপের বিরুদ্ধে নগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার তাকে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার(২৪ ডিসেম্বর) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল আলম (৩২), কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর পিকআপ কেনার জন্য গাজীপুর থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন আবু জাফর। দরদাম না মেলায় বাড়ি ফেরার উদ্দেশে পৌরসভার বাসস্ট্যান্ডে টিকিট কিনে শ্যামলী বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। এসময় পুলিশের তিন সোর্স তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে থাকা ২ লাখ ৮০ হাজার কেড়ে নেয়। অতঃপর মামলা পেয়ে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন সীতাকুণ্ড পুলিশ।
এদিকে সিনেমায় পুলিশকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে ‘নবাব এলএলবি’ ছবির চিত্রনাট্যকার পরিচালক অন্যন্য মামুন এবং অভিনেতা শাহীন মৃধাকে শুক্রবার(২৫ ডিসেম্বর) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ চলচ্চিত্রপ্রেমিরা পুলিশের অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় এবং ছিনতাইয়ের প্রসঙ্গ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করছেন, ট্রোল করছেন। পরপর ঘটা দুটি ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে অনলাইন প্রতিবাদীরা পুলিশের ভাবমূর্তির সামনে একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
সিনেমাপ্রেমিরা অভিযোগ তোলেন, পুলিশ স্বৈরশাসকদের মতো আচরণ করছে। পুলিশকে নিয়ে কে কোথায় কী বললো এই বিষয়ে পুলিশ সদা সোচ্চার, কিন্তু বাস্তবের চিত্র সম্পূর্ণই বিপরীত। পুলিশের ভাবমূর্তী সিনেমায় ঠিক না করে পুলিশকে কাজে কর্মে বাস্তবে করার পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ট্রোল করছেন, বাস্তবের চেয়ে সিনেমায় ভাবমূর্তী ধরে রাখাটাকে পুলিশ উত্তম মনে করছেন এবং একই সাথে বাস্তবকে করে তুলেছেন সিনেমার চেয়েও বড় কিছু। চলচ্চিত্রপ্রেমিরা এসময় ছবির পরিচালক ও অভিনেতাকে উল্লেখিত মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি তোলেন।
আপনার মতামত জানানঃ