State Watch
    Facebook Twitter Instagram
    সর্বশেষ প্রকাশিত
    • গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি
    • ডিভোর্স ডুয়েল: মধ্যযুগে বিচ্ছেদের জন্য পরস্পরকে হত্যার চেষ্টা করতেন স্বামী-স্ত্রী
    • রুশ কারাগারের যে বর্বরতা হার মানায় দোজখকেও
    • মহাকাশে সবচেয়ে বড় নক্ষত্র
    • আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন
    • সমুদ্রের তলায় ১৮ হাজার বছর আগের আগ্নেয়গিরি: জানুন বিস্তারিত
    • জ্বালানির কথা না ভেবেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো হয়েছে
    • ৯ হাজার বছর আগেও চাবানো হতো চুয়িং গাম
    State Watch
    • প্রধান পাতা
    • আইনপ্রয়োগ
      1. গুম-অপহরণ
      2. গ্রেপ্তার-নিপীড়ন
      3. নিপীড়নমূলক আইন
      4. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি
      5. বিচার বহির্ভূত হত্যা
      6. রাষ্ট্রীয় বাহিনী
      Featured
      মার্চ ১২, ২০২৩

      সরকারি অর্থায়নের হাসপাতালে বেসরকারি ফি, বিপাকে রোগীরা

      Recent
      জুন ১, ২০২৩

      উধাও হাসপাতাল: কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত পাউবি

      মে ২৮, ২০২৩

      নিখোঁজ বাবাকে ১০ বছর ধরে খুঁজছে শিশু হৃদি

      মে ১৪, ২০২৩

      বাংলাদেশের এতিমখানায় করা অনুদান তদন্ত করবে চ্যারিটি কমিশন

    • আক্রান্ত জনগোষ্ঠী
      1. আদিবাসী
      2. গণমাধ্যম
      3. ধর্মীয় সংখ্যালঘু
      4. নারী ও শিশু
      5. প্রাণ-প্রকৃতি-কৃষি
      6. ভিন্ন মতাবলম্বী
      7. রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
      8. শ্রমজীবী
      Featured
      ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩

      বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন মনিটর করবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯ রাষ্ট্র

      Recent
      মে ২, ২০২৩

      প্রধানমন্ত্রীর কারণে বাংলাদেশে আতঙ্কে সাংবাদিকরা: দ্য গার্ডিয়ান

      এপ্রিল ২৯, ২০২৩

      ভারতে রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়ায় ২০০০ মুসল্লির বিরুদ্ধে মামলা

      এপ্রিল ১২, ২০২৩

      কেন বান্দরবানে নিজের গ্রাম থেকে পালাচ্ছে বম জনগোষ্ঠির মানুষ?

    • বিশেষায়িত
      1. করোনাভাইরাস
      2. ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট
      3. নির্বাচন
      4. বিশ্ব
      5. মানবাধিকার
      6. রোহিঙ্গা জাতি
      7. সীমান্ত ইস্যু
      Featured
      মার্চ ২৬, ২০২৩

      রাহুল গান্ধীর জেল যাওয়া কি মোদিকে সিংহাসন থেকে নামাতে পারবে?

      Recent
      জুন ৪, ২০২৩

      আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন

      জুন ৩, ২০২৩

      ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা: নিহত ২০৭, আহত ৯০০

      জুন ২, ২০২৩

      সব ডলার শেষ, গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে আমেরিকা! কী প্রভাব পড়তে পারে ভারতে?

    • রাজনীতি-প্রশাসন
      1. অর্থনীতি ও বাণিজ্য
      2. আইন-আদালত
      3. ক্ষমতাসীন দল
      4. জাতীয় সংসদ
      5. রাজনীতি
      6. রাষ্ট্র-সরকার
      Featured
      মার্চ ২৫, ২০২৩

      রমজানেও ব্যবসায়ীদের লোভ-লালসায় দ্রব্যমূল্যের চাপে নিম্নমধ্যবিত্তরা

      Recent
      জুন ৫, ২০২৩

      গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি

      জুন ৩, ২০২৩

      করযোগ্য আয় না থাকলেও দিতে হবে কর, আরো যত অসঙ্গতি

      জুন ২, ২০২৩

      অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নাকি বেহাল পরিস্থিতির সূচনা?

    • মতামত
      • বিশ্লেষণ
      • সম্পাদকীয়
      • সাক্ষাৎকার
    • গবেষণা ও প্রতিবেদন
      1. বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন
      2. চলতি প্রবণতা
      3. নীতি নির্দেশনা
      Featured
      জানুয়ারি ৩১, ২০২৩

      আবারো অবনমন: সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২

      Recent
      মে ৩০, ২০২৩

      চিন্তা করার ক্ষমতা হারাচ্ছে মানুষ: গবেষণা

      মে ২০, ২০২৩

      মহামারিতে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দেড় কোটি মানুষ: বিআইডিএস

      মে ১৬, ২০২৩

      গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

    • আর্কাইভ
    State Watch
    ইতিহাস

    দিল্লিতে ইতিহাসের যে নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালিয়েছিল তৈমুর লঙ

    ডেস্ক রিপোর্টBy ডেস্ক রিপোর্টনভেম্বর ৬, ২০২২No Comments9 Mins Read

    তৈমুর লঙ দিল্লি আক্রমণ করেন ১৩৯৮ সালে। দিল্লির দিকে রওনা হওয়ার জন্য তৈমুর লঙের ৯০ হাজার সৈনিক যখন সমরকন্দে জড়ো হয়েছিল, তখন গোটা শহর ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল। দিল্লি প্রায় এক হাজার মাইল দূরে। দিল্লি অবধি পৌঁছনোর রাস্তা সেসময়ে ছিল পৃথিবীর সবথেকে কঠিন রাস্তা। হিন্দুকুশ পর্বত পেরিয়ে আসতে হত ওই পথে। আর রাস্তার পাশে যারা থাকত, তাদের তো মহান আলেকজান্ডারও পরাস্ত করতে পারেন নি।

    মাঝে বহু নদী, পাথুরে রাস্তা আর মরুভূমি ছিল, যেগুলো দিল্লি পৌঁছনোর রাস্তা আরও দুর্গম করে তুলত। সেই রাস্তা যদি পেরিয়ে যেতে সক্ষম হত তৈমুরের বাহিনী, তারপরে তাদের মুখোমুখি হতে হত প্রকাণ্ড হাতির দলের। এদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা জানা ছিল না তৈমুরের বাহিনীর। তবে সেই সব হাতিদের সম্বন্ধে অনেক কাহিনী শোনা ছিল সৈনিকদের। হাতির পাল যে শুধু ঘর বা গাছ উপড়ে ফেলত তা নয়, সামনে যদি কোনও দেয়াল পড়ে যায়, তা অনায়াসে ভেঙ্গে ফেলেই নিজেদের পথ করে নিত তারা। তাদের শুঁড় এতই শক্তিশালী ছিল, যে কোনও সৈনিককে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মেরে তারপরে পায়ে পিষে ফেলতে পারত তারা।

    তৈমুর যখন দিল্লির দিকে এগোচ্ছেন, তখন দিল্লির অবস্থা অশান্ত। ১৩৩৮ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পরে বাংলা, কাশ্মীর আর দাক্ষিণাত্য এই তিন ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল পুরো ভারত। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ স্যার জর্জ ডনবার তার বই ‘দা হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’তে লিখছেন, “ফিরোজের মৃত্যুর দুবছরের মধ্যেই দিল্লিতে একের পর এক পাঁচজন বাদশাহ, তার নাতিরা আর তার ছোট ছেলে রাজ্যপাট চালাচ্ছিল। দিল্লির অবস্থা এরকম ছিল যে সেটা যেন কোনও বিদেশী আক্রমণকারীকে আহ্বান জানাচ্ছিল হামলা করার জন্য।”

    এদিকে, তৈমুরের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ৯০ হাজার সৈনিক, তার দ্বিগুণ ঘোড়াদের কোনোভাবে পৃথিবীর ছাদটা পার করে দেওয়া। মধ্য এশিয়ার তিব্বত মালভূমিকেই পৃথিবীর ছাদ বলে অভিহিত করা হয়। জাস্টিন মারোজির বই ‘টেমারলেন, সোর্ড অফ ইসলাম, কনকারর অফ দা ওয়ার্ল্ড (তৈমুর লঙ, ইসলামের তরবারি, বিশ্ব বিজেতা) বইতে লিখছেন, “তৈমুরের সেনাবাহিনী এমন সব এলাকা পেরচ্ছিল, যার আবহাওয়া একরকম নয়। তৈমুরের বদলে অন্য কেউ যদি ওই বাহিনীর নেতৃত্ব দিত, তাহলে ওই আবহাওয়াই তাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।”

    মারোজি লিখেছেন, “সমরকন্দ আর দিল্লির মধ্যে বরফে ঢাকা পাহাড় পর্বত যেমন ছিল, তেমনই আবার শরীর ঝলসিয়ে দেওয়া মরুভূমিও ছিল। আবার এমন এলাকাও ছিল যেখানে কোনও গাছপালা কিছুই নেই, সৈনিকদের খাবার পাওয়ারও কোনও উপায় ছিল না।”

    তার বইতে উল্লেখ রয়েছে, তৈমুরের বাহিনীর পুরো রসদই প্রায় দেড় লক্ষ ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। অগাস্ট মাস নাগাদ তারা কাবুলের কাছে পৌঁছিয়েছিল। আর দুমাসের মধ্যে তারা শতদ্রু নদীর তীরে পৌঁছিয়েছিল।

    সেখানে তাদের পথ রোধ করেন সারঙ্গ খাঁ। সেই লড়াই জিততে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি তৈমুরকে। সেখান থেকে দিল্লি আসার পথে প্রায় এক লাখ হিন্দুকে তৈমুর বন্দী করেছিলেন। দিল্লির একেবারে কাছে পৌঁছিয়ে লোনিতে নিজের শিবির গড়েছিলেন তৈমুর।

    যমুনা নদীর ধারে একটা টিলায় চড়ে দিল্লির পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতেন তৈমুর লঙ। সেই সময়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তিতে ব্যস্ত থাকলেও দিল্লির শক্তি খুব একটা কমে যায় নি তখনও। কেল্লার প্রাচীরের ভেতরে তখনও দশ হাজার ঘোড়সওয়ার সেনা, ২৫ থেকে ৪০ হাজার পদাতিক সৈন্য আর ১২০টি হাতি তৈমুর লঙের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত ছিল।

    জাস্টিন মারোজি লিখছেন, “দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম লড়াইটা বাধল যখন তৈমুরের সাতশো সৈনিকের একটা অগ্রগামী দলের ওপরে মাল্লু খাঁয়ের বাহিনী হামলা করল। সেই সময়ে দিল্লি শাসন করছিলেন মুহম্মদ শাহ, কিন্তু প্রশাসন চালাতেন মাল্লু খাঁ।”

    তৈমুরের একটা আশঙ্কা ছিল যে মাল্লু খাঁয়ের সৈনিকরা যদি তার ওপরে হামলা করে, তাহলে সঙ্গে থাকা প্রায় এক লাখ হিন্দু বন্দী দিল্লির সেনাদের পক্ষ নিয়ে নেবে।

    জাস্টিন মারোজি লিখেছেন, “নিজের বাহিনীর পেছনে পেছনে আসা ওই বন্দীদের নিয়ে তৈমুরের আশঙ্কা এতটাই বেশি ছিল যে সেখানেই এক এক করে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি তার সঙ্গে আসা মৌলানাদেরও আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারাও যেন ওই বন্দীদের নিজেদের হাতে হত্যা করে।”

    ডেভিড প্রাইস তার বই ‘মেময়ার্স অফ দা প্রিন্সিপাল ইভেন্টস অফ মহামেডান হিস্ট্রি’ বইতে লিখেছেন, “এই নিষ্ঠুরতার দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ মানব ইতিহাসে পাওয়া যায় না।”

    এদিকে, ভারতীয় হাতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তৈমুর। আত্মজীবনী ‘মুলফিজৎ তিমুরি’তে তিনি লিখেছেন, “আমার সবথেকে বড় চিন্তা ছিল শক্তিশালী ভারতীয় হাতিদের নিয়ে। সমরকন্দেই ওই হাতির দল নিয়ে অনেক কাহিনী শুনেছিলাম। তবে তাদের কতটা শক্তিশালী সেটা প্রত্যক্ষ করেছিলাম প্রথম লড়াইতেই। ওই হাতিগুলোর পিঠে বড় বড় হাওদা থাকত, আর সেখানে মাহুতের সঙ্গেই বসে থাকত মশাল ছুঁড়ে মারা সৈনিক, তীরন্দাজরা। এরকমও শোনা যেত যে হাতিদের দাঁতে বিষ লাগানো থাকত আর সৈনিকদের শরীরে সেই বিষমাখা দাঁত সরাসরি পেটে ঢুকিয়ে দিত হাতিগুলো। তীর বা বল্লম চালিয়েও হাতিগুলোকে আহত করা যেত না।”

    ভারতীয় হাতিদের কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, সেই পরিকল্পনা করছিলেন তৈমুর। তিনি আদেশ দিলেন সৈনিকরা যেন হাতির মাহুতদের তীরের নিশানা করে।

    ১৭ ডিসেম্বর, ১৩৯৮। মাল্লু খাঁ আর সুলতান মাহমুদের সেনাবাহিনী তৈমুরের সঙ্গে লড়াই করার জন্য দিল্লি দরওয়াজার বাইরে বেরিয়েছিল। হাতির দলকে মাঝামাঝি জায়গায় রেখেছিল তারা। সেগুলোর পিঠে হাতিয়ার নিয়ে বসেছিল সৈন্যরা।

    সবকিছুই তৈমুর লক্ষ্য করছিলেন একটা উঁচু টিলার ওপরে দাঁড়িয়ে। এরপর লড়াই শুরু হল। লড়াই শুরুর কিছুক্ষণ আগে তৈমুর জয়ের জন্য সাজদা করে দোয়া প্রার্থনা করে নেন। যুদ্ধ বাধতেই তৈমুরের তীরন্দাজরা মাল্লা খাঁয়ের বাহিনীকে ডানদিক থেকে আক্রমণ শুরু করল।

    এর জবাবে বাঁদিকে থাকা তৈমুর বাহিনীকে ডানদিকে থেকে হামলা করার আদেশ দিলেন দিলেন মাল্লু খাঁ।

    তৈমুর দেখলেন একটা জায়গায় ভারতীয় হাতিগুলোর জন্য তার সেনাবাহিনীর মধ্যে একটা শোরগোল উঠছে। এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিছু উট তৈরি রেখেছিলেন, যাদের পিঠে শুকনো কাঠ আর ঘাস বাঁধা ছিল। সেই উটগুলোকে এগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি, আর শুকনো ঘাস আর কাঠে আগুন লাগিয়ে দিতে বললেন বাহিনীকে।

    জাস্টিন মারোজি লিখছেন, “হঠাৎই পিঠে জ্বলন্ত কাঠ আর ঘাস নিয়ে উটগুলো হাতি বাহিনীর সামনে চলে আসে। হাতিগুলো ভয় পেয়ে উল্টো দিকে থাকা নিজেদের সৈনিকদেরই আক্রমণ করতে শুরু করে। মাল্লু খাঁয়ের বাহিনীর মধ্যেই তখন হুড়োহুড়ি পরে যায় পালানোর জন্য।”

    ইতিহাসবিদ খানদামিরও তার বই ‘হাবিব উস সিয়ার’-এ এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। “গাছ থেকে নারকেল ঝরে পড়লে যেরকম দেখা যায়, হঠাৎই সেরকমটা দেখা গেল। যুদ্ধক্ষেত্র ভারতীয় সৈন্যদের কাটা মাথায় ভরে উঠছিল।”

    “ডানদিক থেকে তৈমুরের সেনাপতি পীর মুহম্মদ ভারতীয় বাহিনীকে তাড়া করে দিল্লির প্রাচীর পার করিয়ে দিয়ে তারপরে দম ফেললেন। এরই মধ্যে একটা হাতি আর তার পিঠে থাকা ভারতীয় সেনাদের আটক করে তৈমুরের ১৫ বছর বয়সী নাতি খলিল তার দাদুর সামনে হাজির করালো।”

    আত্মকথায় তৈমুর লিখেছেন, “আমি এক হাতে তলোয়ার আর অন্য হাতে কাটারি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। দুই হাত সমানে চলছিল। দুটো হাতির শুঁড় কেটে ফেলেছিলাম আমি। যে দুটো হাতির শুঁড় কেটে দিয়েছিলাম, সেগুলো হাঁটু ভাঁজ করে একদিকে কাত হয়ে পড়ে গিয়েছিল। ওগুলোর পিঠে বসা সৈন্যরা মাটিতে পড়ে যায়। তখনই বড় বড় গোঁফওয়ালা হিন্দুস্তানি সিপাহীরা আমার রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করে।”

    “আমি দুটো হাতই এত দ্রুত চালাচ্ছিলাম যে নিজেই নিজের শক্তি দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। মোটা গোঁফওয়ালা সিপাহীরা একে একে আমার সামনে লুটিয়ে পড়ছিল আর আমি ধীরে ধীরে শহরের দরজার দিকে এগোচ্ছিলাম,” লিখেছেন তৈমুর লঙ।

    এই সময়ে তিনি আবারও ঘোড়ার পিঠে চেপে বসেন কিন্তু হঠাৎই তার হাত থেকে ঘোড়ার লাগামটা আলগা হয়ে যায়।

    আত্মজীবনীতে তৈমুর লিখছেন, “ঘোড়ার লাগাম কী করে আলগা হয়ে গেল সেটা বোঝার জন্য মশালের আলোয় নিজের হাতের দিকে তাকাতেই বুঝলাম কারণটা। রক্তে আমার হাতটা ভরে গিয়েছিল, আর লাগামটা সেই জন্যই ছুটে যায়। এরপরে বাকি শরীরের দিকে তাকাই। মনে হচ্ছিল যেন আমাকে রক্তের পুকুরে ভিজিয়ে আনা হয়েছে। আমার কব্জি আর দুই পায়ে পাঁচটা চোট লেগেছিল।”

    ততক্ষণে তৈমুরের বাহিনী দিল্লির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফেলেছিল। পরের দিন বিজয়ীর মতো দিল্লিতে প্রবেশ করেন তৈমুর লঙ। এরপর একটা তাঁবু তৈরি করে তৈমুরের দরবার বসানো হয়েছিল। সেই দরবারে সুলতান মাহমুদের সভাসদ আর দিল্লির সম্ভ্রান্ত মানুষদের হাজির করানো হয়েছিল। এর থেকেই বোঝা যায় যে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের দখলে করে নিয়েছেন তৈমুর লঙ। দিল্লির সুলতান মাহমুদ আর মাল্লু খাঁ লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

    জাস্টিন মারোজির কথায়, “একটা একটা করে ১০০ টা হাতি, যেগুলো বেঁচে ছিল, সেগুলোকে তৈমুরের সামনে হাজির করানো হয়। হাঁটু ভাঁজ করে বসে তৈমুরকে সালাম করে ওই হাতিগুলো। তৈমুর সিদ্ধান্ত নেন যে ওই হাতিগুলোকে তিনি তবরিজ, শিরাজ, আর্জিনজান আর শিরওয়ানের রাজকুমারীদের উপহার হিসাবে পাঠাবেন। সঙ্গে দূতও পাঠাবেন ওই সব রাজ্যে, যাতে গোটা এশিয়ায় খবর ছড়িয়ে পরে যে দিল্লি এখন তৈমুর লঙের দখলে।”

    লড়াইয়ের পরে তৈমুর সেইদিকে মনোযোগ দিলেন, যার জন্য তার দিল্লির ওপরে হামলা করা। তিনি হিসাব করতে লাগলেন যে দিল্লির রাজকোষের পরিমাণ, আর ভাবছিলেন যে তিনি দিল্লি থেকে কী কী লুঠ করে নিয়ে যাবেন। তার সৈনিকরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোকজনকে জানিয়ে আসছিল যে প্রত্যেককে কত অর্থ দিতে হবে তৈমুরের কাছে। শারাফুদ্দিন আলি ইয়াজদির হিসাব মতো সেই সময়ে দিল্লির সীমানা ভেতরে তৈমুরের অন্তত ১৫ হাজার সৈন্য অবস্থান করছিল। কিছু সৈনিক আনাজপাতি লুঠ করতে ব্যস্ত ছিল।

    মুহম্মদ কাশিম ফেরিশতা তার বই ‘হিস্ট্রি অফ দা রাইজ অফ মহামেডান পাওয়ার ইন ইন্ডিয়া’ বইতে লিখছেন, “হিন্দুরা দেখল যে তাদের নারীদের বেইজ্জত করা হচ্ছে আর তাদের ধন সম্পত্তি লুঠপাট করছে, তখন তারা নিজেরাই ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্ত্রী আর সন্তানদের খুন করে নিজেরা তৈমুর বাহিনীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সময়েই দিল্লি দেখেছিল সেই নরসংহার। সব রাস্তায় শুধু মৃতদেহ। তৈমুরের বাকি সৈন্যরাও দিল্লির ভেতরে চলে আসে। দিল্লির বাসিন্দারা কয়েকদিনেই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।”

    মোগল বাহিনী দিল্লির বাসিন্দাদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় পুরনো দিল্লির দিকে। বাসিন্দারা সেখানকার একটা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল। জাস্টিন মারোজির কথায়, “তৈমুরের ৫০০ সেনার এক বাহিনী মসজিদে হামলা চালায়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের এক এক করে হত্যা করে তারা। নিহতদের মাথাগুলো কেটে নিয়ে একটা মিনার বানিয়ে ফেলে সৈন্যরা আর বাকি শরীরগুলো চিল-কাকদের খাওয়ার জন্য ফেলে রাখে। এই গণহত্যা তিন দিন ধরে চলেছিল।”

    গিয়াসুদ্দিন আলি তার বই ‘ডায়েরি অফ তৈমুর’স ক্যাম্পেইন ইন ইন্ডিয়া’তে লিখেছেন, “তৈমুর বাহিনী এমনভাবে দিল্লিবাসীদের ওপরে আক্রমণ করেছিল যেন একটা ক্ষুধার্ত নেকড়ের সামনে একপাল ভেড়া ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফল যা হয়েছিল, ধন সম্পত্তি, গয়না, হীরে জহরত আর আতরের জন্য বিখ্যাত ছিল যে দিল্লি, তা পরিণত হল এক জ্বলন্ত নরকে। চারদিক থেকে পচা গলা মৃতদেহের গন্ধ আসছিল।”

    অন্যদিকে নিজের তাঁবুতে আরাম করছিলেন তৈমুর লঙ। দিল্লিতে যে নরসংহার চলছিল, তার কোনও খবর তার কাছে পৌছয় নি। তার সেনাপতিরা তৈমুরের কাছে এই খবর পৌঁছিয়ে দেওয়ার সাহস করেন নি।

    তবে কোনও কোনও ইতিহাসবিদের সন্দেহ আছে যে তৈমুরের কাছে কী করে কোনও খবর গেল না। তার কারণ, তৈমুরের বাহিনী কঠোর অনুশাসনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ওপরতলা থেকে নির্দেশ না এলে এভাবে তারা লুঠপাট বা গণহত্যা ঘটাতে পারত না।

    লুঠের সামগ্রী নিয়ে তৈমুর বাহিনী ফিরে চলল, রেখে গেল ধ্বংসস্তূপ। লুঠপাটের নির্দেশ এসেছিল কী না তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও দিল্লির সমৃদ্ধি দেখে তাদের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার যোগাড় হয়েছিল।

    চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সোনা, রূপা, গয়না, মুক্তা, দামী পাথর, দামী কাপড় ছড়িয়ে ছিল। তবে এসবের থেকেও তাদের আকর্ষণ ছিল দিল্লির সাধারণ মানুষদের ওপরে। তাদের দিয়ে যা ইচ্ছে কাজ করানো যাচ্ছিল।

    এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৬

    ছড়িয়ে দিনঃ

    আপনার মতামত জানানঃ

    State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
    Donate
    ইতিহাস

    Related Posts

    ডিভোর্স ডুয়েল: মধ্যযুগে বিচ্ছেদের জন্য পরস্পরকে হত্যার চেষ্টা করতেন স্বামী-স্ত্রী

    ৯ হাজার বছর আগেও চাবানো হতো চুয়িং গাম

    ওয়ার অব দ্য বাকেট: বালতির জন্য নিহত কয়েক হাজার মানুষ

    বিজ্ঞাপন

    সর্বশেষ প্রকাশিত
    জুন ৫, ২০২৩

    গুম, খুন, মিথ্যা মামলায় জড়িত ওসি এসপিদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি

    জুন ৫, ২০২৩

    ডিভোর্স ডুয়েল: মধ্যযুগে বিচ্ছেদের জন্য পরস্পরকে হত্যার চেষ্টা করতেন স্বামী-স্ত্রী

    জুন ৫, ২০২৩

    রুশ কারাগারের যে বর্বরতা হার মানায় দোজখকেও

    জুন ৫, ২০২৩

    মহাকাশে সবচেয়ে বড় নক্ষত্র

    জুন ৪, ২০২৩

    আট দশক ধরে স্প্যানিশ ক্যাথলিক চার্চে প্রায় হাজার শিশুকে নির্যাতন

    বিজ্ঞাপন

    সর্বাধিক পঠিত
    • যেভাবে পৃথিবী থেকে উধাও হয়েছিল রহস্যময় জনপদ আনজিকুনি
      জুন ৩, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      ১৯৩০ সালের আগের কথা, কানাডার কিভালিক অঞ্চলে ছিল এক তুষার-স্নিগ্ধ হ্রদ। নাম তার আনজিকুনি। একদিন এক অনুসন্ধিৎসু বৃদ্ধ জেলের আগমন...
    • হাত পাখায় দিলে ভোট, ভোট পাবে আল্লাহ পাক: চরমোনাই পীর
      জুন ১, ২০২৩
      By স্টেটওয়াচ ডেস্ক
      মোহাম্মদ রুবেল বাংলাদেশের গদিনশীল পীরদের মধ্যে চরমোনাই শায়েখ অন্যতম। বিশাল আশেকান গোষ্ঠীর প্রশ্নবিহীন আনুগত্য ও হাদিয়ায় টুইটুম্বুর চরমোনাইয়ের অর্থভান্ডার। এবার...
    • বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: কেন নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র?
      মে ৩০, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে লঙ্ঘন করে বা উপেক্ষা করে বলে যেসব দেশকে মনে করে তাদের বিরুদ্ধেই নিষেধাজ্ঞা বা স্যাংশন আরোপ করে তারা।...
    • জঙ্গলের গভীরে ৪১৭ টি প্রাচীন মায়া শহর আবিষ্কার
      মে ৩০, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      আমাজনের ২ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের বিশাল জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতা, পৃথিবীর ইতিহাসে যা মায়া সভ্যতা নামে...
    • নির্দেশদাতাকেও হত্যা করতে পিছপা হয় না এআই রোবট!
      জুন ৩, ২০২৩
      By ডেস্ক রিপোর্ট
      স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক- বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি একসময়...
    আজকের ভিডিও
    https://youtu.be/1ht6kl7Mly4
    আমাদের সম্পর্কে
    আমাদের সম্পর্কে

    স্টেট ওয়াচ, বাংলাদেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণামূলক একটি প্রয়াস।
    বিস্তারিত...

    ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

    Donate Us!
    statewatch.net (Karigor Media Network), Hamburg, Germany. Email: statewatch.sa@gmail.com © ২০২৩ State Watch. Designed by @.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.