শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার কর্মী ডাঃ পাইকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু বলেছেন, বিশ্বের কেন্দ্র ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা থেকে পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। খবর ডনের
তিনি বলেন, ভারতে দীর্ঘকাল ধরে গণতন্ত্র চলছে যখন চীন একটি সর্বগ্রাসী এবং কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, যা দেশটির প্রেসিডেন্টকে আরও একটি মেয়াদ দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যত কী হতে চলেছে? ভারত হয় উদারতাবাদ, গণতন্ত্র এবং সহনশীলতার উদাহরণ হতে চলেছে অথবা চীন কর্তৃত্ববাদের ক্ষেত্রে আরও বিশিষ্ট হতে চলেছে বা তারা একে অপরের মতো আরও বেশি হতে চলেছে। যার অর্থ ভারত আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবে যখন চীন যাচ্ছে আরো গণতান্ত্রিক হতে?
সারাভানামুত্তু আসমা জাহাঙ্গীর সম্মেলনে “দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার: বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের সুযোগ” শীর্ষক একটি অধিবেশনে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের একটি নির্দিষ্ট স্তর বজায় রাখতে হবে। তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে উল্লেখ করেন এবং মানবাধিকার ছাড়া আমাদের গণতন্ত্র থাকতে পারে না বলেও জানান।
সারাভানামুত্তু বলেন, আমাদের বেশিরভাগ সমাজ বৈচিত্র্যের নীতিকে ঘিরে সংগঠিত হয়েছে। কারণ দিন শেষে সমাজটি বিভিন্ন লোকের সমন্বয়ে গঠিত। এখন সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ একটি দেশ, একটি আইনের যুক্তি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে, যা বৈচিত্র্যের ধারণাকে বিলুপ্ত করে। একটি দেশ, একটি আইন কিছু লোকের কাছে আবেদন রাখতে পারে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ নিজেকে জাহির করে।
আমাদের সমাজে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের একটি নির্দিষ্ট স্তর বজায় রাখতে হবে।
ভারতীয় মানবাধিকার কর্মী রীতা মানচন্দা বলেন, “বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে এবং বিশ্বস্তরে পুনর্বিন্যাস ও বিভ্রান্তি রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত সপ্তাহে একটি বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন যে ভারত ও চীনের মধ্যে যা ঘটছে তা আমাদের পরিধির সাথে জড়িত হওয়াকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। পরিধি ব্রিটিশদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি নিন্দনীয় এবং সাম্রাজ্যিক শব্দ।
তিনি আশ্চর্য যে মন্ত্রীর পরিধি বলতে কী বোঝায়, তিনি পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল বা ভুটান বা আফগানিস্তানকে বোঝান কিনা।
মনচান্দা বলেন, ভারত তার ভূমি ও সম্পদের কারণে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তবে, নেপাল এমনকি শ্রীলঙ্কায় অনেকেই তাদের সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী বলে মনে করে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে বিরাট ফ্লাক্সের পরিস্থিতি রয়েছে। আমাদের দেশের পররাষ্ট্র দফতরে কিছু পুনর্বিবেচনা চলছে। দক্ষিণ এশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি ভারতকে ক্রমবর্ধমান শক্তির মধ্যে আখ্যায়িত করেছেন যাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের প্রতিবেশীদের সাথে সম্পৃক্ততার প্রয়োজন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সুশীল সমাজের আরো সম্পৃক্ততার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
নেপালের মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন কমিশনার সুশীল রাজ প্যাকুরেল বলেছেন, ভারত ও নেপালের খোলা সীমান্ত রয়েছে এবং উভয় দেশের মানুষ একে অপরের খুব কাছাকাছি। জেনারেল জিয়ার শাসনামলে যখন জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তিনি একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং তিনি ভারত পেরিয়ে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু এখন তাকে পাকিস্তানের ফ্লাইটে দুবাই যেতে হয়েছে। তিনি তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের জায়গায় সাত ঘন্টায় যান।
তিনি বলেন, আমাদের কাঠমন্ডু থেকে করাচি সরাসরি ফ্লাইট ছিল কিন্তু পরে ভারত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিনি আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ওপর জোর দেন।
চীন ও ভারত দুটি প্রতিবেশী দেশ তাদের হারানো মহত্ত্ব ও গৌরব ফিরে পেতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে , যা তাদের সংঘাতের দিকে নিয়ে আসছে। দেশ দুটোর মূল দ্বন্দ্ব এখানেই যে উভয় রাষ্ট্র-ই তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে অভিলাষী। চীন একধাপ এগিয়ে ভারত মহাসাগরে এককভাবে একচেটিয়া প্রবেশাধিকার ও আধিপত্য স্থাপন করতে চায় যা থেকে অন্য দেশগুলোর এমনটা মনে হয় যে চীন এতটা-ই শক্তিশালী যে এই অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলা করার মতো বা চীনকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অন্য কোনো আধিপত্যকারী শক্তি বিদ্যমান নেই।
চীনের এই এক চোখা মনোভাব ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে নিয়েছে ভারত এবং চীনের এই মনোভাবকে ভারত তার শক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে একটা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করে এবং তাই ভারতও চীনের বিপরীতে এই অঞ্চলে আধিপত্য কায়েমের জন্য সচেষ্ট হয়েছে। ভারত দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো নিয়ে ‘ভারতের নেতৃত্বাধীন ব্লক’ সৃষ্টি করতে সম্ভব সব চেষ্টা করছে। ফলে দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে আধিপত্য স্থাপনের প্রতিযোগিতা এশিয়া-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনীতিকে সংঘাতময় করে রেখেছে। কেননা, চীন মনে করে তার লক্ষ্যার্জনের পথে ভারত-ই মূল অন্তরায় এবং এক-ই ভাবে ভারতও চীনকে-ই তার উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের জন্য প্রধান প্রতিবন্দ্বক মনে করে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৪
আপনার মতামত জানানঃ