শিশু যৌন নির্যাতন ব্রিটেনে মহামারি রূপ নিয়েছে এবং লাখ লাখ শিশু এর শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি গণ তদন্ত।খবর ডনের
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনকোয়ারি ইন চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ (আইআইসিএসএ) বলেছে, প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিবিদরা তরুণদের কল্যাণের জন্য তাদের সুনাম রক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছিল। যার অর্থ, ভয়ঙ্কর কাজগুলো কয়েক দশক ধরে আড়ালে ছিল। যদিও সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও অপর্যাপ্ত।
ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল তদন্তটি বলেছে, এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সংকট। জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
এর চেয়ারম্যান অ্যালেক্সিস জে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা শিশুদের যে নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছি তার প্রকৃতি ও মাত্রা মর্মান্তিক এবং গভীরভাবে বিরক্তিকর। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক বিকৃতি নয় যা কয়েক দশক আগে ঘটেছিল, এটি ক্রমবর্ধমান।
একের পর এক যৌন কেলেঙ্কারির পর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তদন্তটি শুরু হয়। যার মধ্যে কয়েকটি কয়েক দশক আগের, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রয়াত বিবিসি টেলিভিশন তারকা জিমি স্যাভিল। ২০১১ সালে তার মৃত্যুর পর তাকে ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রবল যৌন অপরাধীদের একজন বলে প্রকাশ করা হয়।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ৩২৫টি শুনানির সময় ৭২৫ সাক্ষীর কাছ থেকে তদন্তটি শুনেছিল।
তদন্তটি ১৫টি তদন্ত এবং অন্যান্য ডজন ডজন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ক্যাথলিক চার্চ, ইংল্যান্ডের চার্চ এবং ওয়েস্টমিনস্টারে ব্রিটেনের রাজনৈতিক কেন্দ্রসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুর যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর বিবরণ তালিকাভুক্ত করেছে।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, রাজনীতিবিদ, গির্জার ধর্মগুরু এবং স্থানীয় সামাজিক সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তারা অপরাধীদের খ্যাতি রক্ষার জন্য অভিযোগগুলোকে উপেক্ষা করেছে এবং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
রাজনীতিবিদ, গির্জার ধর্মগুরু এবং স্থানীয় সামাজিক সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তারা অপরাধীদের খ্যাতি রক্ষার জন্য অভিযোগগুলোকে উপেক্ষা করেছে এবং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
জে বলেন, এ বিষয়ে প্রায়শই কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য এবং নেতৃস্থানীয় পাদ্রীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। যাদের কাজ ছিল অভিযোগের তদন্ত করা। এমনকি যখন তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার চেষ্টা করেছিল, তখন প্রায়ই তাদের উর্ধ্বতনরা তাদের পিছু হটতে বলেছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ৩০ লাখের বেশি শিশু নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা সভ্য জগৎ ব্যবস্থার প্রতি কঠোর কশাঘাতস্বরূপ। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নারীকে পদে পদে হেয় বা অবমাননা করা, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা, নারীর অর্জন বেহাত করা, জোর খাটানো, গৃহস্থালিতে সম্পৃক্ত নারীর কাজের অবমূল্যায়ন, অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়া, যৌন ও অন্যান্য নির্যাতন-নিপীড়নের পাশাপাশি নারী তথা মানব সভ্যতায় সহিংসতার সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়ংকর রূপ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে ধর্ষণ।
এদিকে ব্রিটেনের অন্তত ৫৬ এমপির বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। পার্লামেন্টের অভিযোগ তদন্তকারী আইসিজিএস-এর কাছে এসব অভিযোগ রিপোর্ট করা হয়েছে। সানডে টাইমসের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ওই ৫৬ এমপির বিরুদ্ধে প্রায় ৭০টি যৌন অসদাচরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে গুরুতর অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে কনজার্ভেটিভ দলের এমপি ডেভিড ওয়ারবারটনও নারীদের শারীরিকভাবে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
এছাড়া গত বছর ধর্ষণের অভিযোগে অজ্ঞাত এক কনজার্ভেটিভ এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দেশটিতে।
সাবেক কনজার্ভেটিভ এমপি চার্লি এলফিকের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ‘মিটু আন্দোলনের’ প্রেক্ষিতে বৃটিশ এমপিদের এ ধরণের ব্যবহার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যে নারীদের প্রতি যে সহিংসতা মহামারি আকার ধারণ করেছে তা বন্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। জানা গেছে গত বছর যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ১০৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। যার অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই পুরুষরা জড়িত।
গতবছর যুক্তরাজ্যে ১৫ লাখের বেশি নারী অভ্যন্তরীণ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ লাখের বেশি নারী তাদের স্বামী, বয়ফ্রেন্ড,অথবা সাবেক স্বামীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় ৮৮৮ জন নারী তাদের বর্তমান পার্টনারের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, সম্পর্ক ছেদের প্রথম মাসে নিহত হয়েছেন ১৪২ জন নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি উন্নত ও মানবাধিকারসম্পন্ন নিরাপদ পৃথিবী গঠনের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধগুলোর প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা অত্যন্ত জরুরি। এ কথাও সত্য যে, সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার পরও অন্য যে কোনো অন্যায় বা অপরাধের মতো আমরা হয়তো যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ পুরোপুরি প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে পারব না; তবে সচেতনতা, সতর্কতা, সামাজিক ও আইনি প্রতিকার এ সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৩৭
আপনার মতামত জানানঃ