কোভিড সনদ জটিলতায় বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। গত ১৫ ডিসেম্বর নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় সৌদি এয়ারলাইনসকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর এতেই চটেছেন সৌদি সরকার। ফলে সৌদি আরবে ফিমেইল ডিপোর্টেশন সেন্টার বা বিভিন্ন সেইফহোমে আটকা পড়া বাংলাদেশি নারীশ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা বিষয়ে নতুন এক সংকট দেখা দিয়েছে। সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতিতে সংকটে পড়তে পারেন প্রবাসী অন্যান্য শ্রমিকেরাও।
জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার পরও গত সোমবার(২১ ডিসেম্বর) সৌদি এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই ২৫৯ জন যাত্রী নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ অমান্যের কারণ জানতে চান। তারা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেবেন বলে সময় চান। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কাগজপত্র দাখিল না করে আবারো যাত্রী নিয়ে আসেন করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই। এ সময় বিমানবন্দরে কর্মরত সৌদি এয়ারলাইনসের স্টাফদেরও আটক করা হয়। পরে সৌদি এয়ারলাইনসের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার বেজায় নাখোশ সৌদি সরকার। তারা কূটনৈতিক চ্যানেলে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে দেশটি অতীতের বিভিন্ন রেফারেন্স টেনে এনে বলেছে এভাবে চলতে থাকলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ব্যাহত হতে পারে। সৌদির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকার বিব্রত।
সৌদি সরকারের কড়া মনোভাব টের পেয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন পুলিশের সৌদি এয়ারলাইনসের ক্রু ও স্টাফদের আটক এবং জরিমানা আদায় সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বাস করে। জর্ডান, লেবাননে থাকলেও সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নারী শ্রমিক রয়েছেন সৌদি আরবে। কভিডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তারা ঐ দেশের ফিমেল ডিপোর্টেশন সেন্টার ও সেফ হোমে রয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কভিড পরীক্ষা করা দরকার। সৌদি আরবের দৃষ্টিতে এসব শ্রমিক আবার অবৈধ। আটকেপড়া এসব নারী শ্রমিকের কভিড পরীক্ষার খরচ তারা বহন করবে না। বেসরকারি পর্যায়ে এসব নারী শ্রমিকের কভিড পরীক্ষা করতে হলে জনপ্রতি সর্বোচ্চ দুই হাজার রিয়াল দরকার। সম্প্রতি সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে এসব নারী কর্মীর কভিড পরীক্ষার কোনো বরাদ্দ নেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্কের তিক্ততায় বাংলাদেশই ক্ষতির মুখে পড়বে। সৌদিতে ফিমেইল ডিপোর্টেশন সেন্টার বা সেইফহোমে থাকা এসব অবৈধ অভিবাসী নারীশ্রমিকদের ফিরিয়ে আনাটা আরো জটিলতর হলো।
প্রতি মাসেই কিছু না কিছু নারী শ্রমিক সৌদি আরব থেকে ফিরে আসেন। ভিটামাটি বিক্রি করে সহায়-সম্বলহীন এসব নারী সে দেশে যান। তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পর্যাপ্ত বেতনভাতা এসব বিষয় মীমাংসা করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক দরকার মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানা যায়, আগামী মাসে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
আপনার মতামত জানানঃ