পুলিশি হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে ইরানে। টানা ১১ দিনের মতো এই বিক্ষোভে ইরানি বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএইচআর আগে ৫৭ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু গতকাল তারা এ সংখ্যা বাড়িয়ে হালনাগাদ করে।
তবে ইরানের কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্য আছেন বলে তারা উল্লেখ করেছে।
ইরানের কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সোমবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা তেহরান ও আরও অনেক রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছে। তেহরানে বিক্ষোভকারী ‘একনায়কের মৃত্যু’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। তারা দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলী খামেনির তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা শাসনের সমাপ্তি চান।
নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গ্রুপ বিক্ষোভের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাবরিজ শহরে চলা বিক্ষোভে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে।
আইএইচআর বলেছে, ইরানি বাহিনীর অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৭ জন।
এদিকে দেশটিতে এই বিক্ষোভ দমাতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অঙ্গীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চক্রান্তকারী এই বিক্ষোভ উসকে দিচ্ছে। এছাড়া দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভ হটাতে হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শতশত বিক্ষোভকারী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের বাহিনী।
হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাহশা আমিনি। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। পরিবার ও বহু ইরানির দাবি, পুলিশের নির্যাতনে আমিনির মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে আমিনির মৃত্যুর পরেই হাজার হাজার মানুষ ইরানজুড়ে বিক্ষোভে নামে। দেশটির ৮০টির বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ।
গার্ডিয়ান বলছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শতশত বিক্ষোভকারী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের বাহিনী। তবে এরপরেও ইরানজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
অনেক নারী বিক্ষোভকারী বিক্ষোভের সময় তাদের হিজাব খুলে পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাদের চুলও কাটছেন। অনেকে আবার নারী, জীবন, মুক্তি বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সানন্দাজ এলাকায় নারীরা হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গাড়ি চালকেরা হর্ন বাজাচ্ছেন।
বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এদিকে, ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে জার্মানি। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোগাদ্দাম বলেন, বিক্ষোভকারীদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধে দ্ব্যর্থহীন ও ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
মাহমুদ আমিরি আরও বলেন, যেসব ভিডিও ফুটেজ ও মৃত্যুসনদ আইএইচআরের হাতে এসেছে, তাতে প্রতীয়মান হয়, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। পুলিশের গাড়ি ও সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মাজান্দারান প্রদেশে প্রায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেশী গিলানে গত শনিবার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় আরও কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ সাংবাদিক।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৩৩
আপনার মতামত জানানঃ