মেরামতের কথা বলে বুধবার নর্ড স্ট্রীম-১ পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় বুধবার (৩১ আগস্ট) সকাল ৫ টা থেকে আগামী তিন দিন (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে গ্যাজপ্রমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে শীত প্রধান ইউরোপের দেশগুলোতে। গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে দেশগুলো আসন্ন শীতে বেকায়দায় পড়বে নিঃসন্দেহে।
বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ডে গ্যাসের জোগান এর মধ্যেই বন্ধ করেছে রাশিয়া। অন্যান্য পাইপলাইনেও জোগান কমিয়েছে। ফলে শঙ্কিত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। পশ্চিমা দুনিয়া রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এক সময় পাল্টা গ্যাসের জোগান বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মস্কো।
একাংশের প্রশ্ন, বিভ্রাটের যুক্তিতে পাইপলাইন বন্ধ থাকার মেয়াদ বাড়লে গ্যাসের দাম আরও চড়ারও আশঙ্কা। যা মূল্যবৃদ্ধিকে আরও ঠেলে তুলবে।
আগস্টে ইউরোপীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশের মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাইয়ের (৮.৯%) চেয়ে বেড়ে হয়েছে ৯.১%। রাশিয়া প্রযুক্তিগত কারণ দেখালেও জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হেবেক-এর দাবি, ওই পাইপলাইনটিতে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি নেই।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চড়া মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়েছিল বিশ্ব। নানা ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তেল-গ্যাসের বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। কখনও উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে জ্বালানির জোগান সঙ্কট ও দাম বৃদ্ধি নিয়ে, কখনও মন্দার আশঙ্কায় তেলের দাম ফের তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার উপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলো। বিপরীতে রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ তুলনামূলক অনেক কমিয়ে দেয়।
রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে শীত প্রধান ইউরোপের দেশগুলোতে। গ্যাস সরবরাহ কমে গেলে দেশগুলো আসন্ন শীতে বেকায়দায় পড়বে নিঃসন্দেহে।
দুই সপ্তাহ আগে গ্যাজপ্রম সরবারহ বন্ধের ইঙ্গিত দিলেও জার্মান সরকার এটিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হওয়ায় তেমন একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলিতে গ্যাস প্রবাহ প্রত্যাশিত মাত্রার থেকেও ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত জুলাই মাসে নির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছিল এবং ১০ দিন পরে সেটি পুনরায় শুরুও হয়েছিল, তবে এর পরিমাণ ছিল মোট সরবরাহ সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ। সরবরাহ কমার কারণ হিসেবে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে জার্মানির অত্যাবশ্যক সরঞ্জাম ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়াকে দায়ি করেছে মস্কো। কিন্তু মস্কোর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিষয়টিকে ‘নাটক’ বলে অভিহিতি করেছে জার্মান সরকার। তাদের দাবি, নর্ড স্ট্রিম ‘পুরোপুরি কার্যকর’ এবং কোন প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের নেতৃবৃন্দের আশঙ্কা, রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করলে গ্যাসের দাম আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। হয়েছেও তাই, গত কয়েক মাসে ইউরোপে গ্যাসের দাম ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকলে ইউরোপে বিশেষত আগামী শীতকালে জীবনযাপনের ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সরকারগুলোকে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইউরোপের রপ্তানি হওয়া গ্যাসের একটা অংশ কিনছে চীন। এর কারণেই সাম্প্রতিক দিনগুলিতে রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ গ্যাস পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে জার্মানিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে পানি এবং এনার্জি সেভিংস শাওয়ার হেড, বৈদ্যুতিক কম্বল এবং ক্যাম্পিং গ্যাস কুকারের বিক্রি বেড়েছে। কারণ জার্মানরা তাদের গ্যাসের ব্যবহার কমাতে এবং ক্রমবর্ধমান ইউটিলিটি বিল নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৬
আপনার মতামত জানানঃ