এসিআই কম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন কৃষকেরা। ভালো ফলনের আশায় বাড়তি দাম দিয়ে বীজ কিনে চারা না গজানোয় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। উচ্চ ফলনের আশায় সরকারী বিধি মোতাবেক বীজ কিনে ক্ষেতে আলোর মুখ অতোটা উজ্জ্বল দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়েছেন কৃষকেরা। এমনিতে বিভিন্ন কম্পানির বীজ ব্যবহার করে কাঙ্খিত ফলন না পেলে অভিযোগ করারও কোনো সাহস পান না তারা। কিভাবে জমি চাষ করেছিলেন, কখন সেচ দিয়ে ছিলেন, কী কী ধরনের সার দিয়ে ছিলেন, কতবার নিড়ানী দিয়েছিলেন, ক্ষেতে ঠিক মতো কীটনাশক দেয়া হয়েছিল কিনা এমন হাজারো প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে মারা হয় কৃষকদের দিকে। এদিকে ভেজাল বীজ সনাক্ত করণের যন্ত্র নেই কৃষকের হাতে। নেই বীজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হাতেও। বীজ বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে বীজ বিক্রি হয় বিশ্বাসের ওপর।
গুণগতমান নিশ্চিত না করেই নিয়মবহির্ভূতভাবে সাধারণ ধান দৃষ্টিনন্দন মোড়কে ভরে বীজ হিসেবে বাজারজাত করছে কথিত কয়েকটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এসব ধানবীজ ব্যবহার করে কৃষকেরা প্রতারিত হচ্ছেন।হিলি বাজারের বিভিন্ন বীজের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি বীজের পাশাপাশি বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের বীজ বিক্রি করা হচ্ছে যাদের নেই সরকারি বীজ প্রত্যয়নকারী সংস্থার সনদ। এমনকি অনেক দোকানদার নিজেরাই বীজ উদ্ভাবন করে তা চমকপ্রদ প্যাকেটে ভরে কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তা কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। এসব দোকান থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।
হাকিমপুরের বোয়ালদাড় গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন ও একরামুল হক বলেন, হিলি বাজারের একটি দোকান থেকে এসিআই কোম্পানির ব্রি-২৯ বীজধান ১৪০ টাকায় কিনি। এরপরে তা নিয়ে গিয়ে তাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিন ভিজিয়ে রাখি। পরে দুদিন জাগ দিয়ে রাখি যাতে কোনো বাতাস না ঢুকে। কিন্তু সব কাজ করলেও দেখি অধিকাংশ ধানের চারা গাজাচ্ছে না। মাত্র ২৫ ভাগ চারার মুখ দেখা গেছে। যার কারণে আবারও নতুন করে বীজ কিনে সেগুলো ছিটাতে হয়েছে। যারা এই কোম্পানির বীজ নিয়েছেন তাদের সবার একই অবস্থা।
বীজ বিক্রেতা আব্দুল করিম সরদার বলেন, ‘আদ্রতা যেখানে ১২ শতাংশ রাখার কথা সেখানে কোনও কারণে হয়তো লিক হয়েছে বা বাতাস ঢুকেছে যার কারণে আদ্রতা ১০ শতাংশ হয়েছে সেক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। তবে তারা যদি এগুলো রোদে শুকিয়ে নিয়ে আদ্রতা ১২ শতাংশতে নামিয়ে আনতে পারে সেক্ষেত্রে এগুলো আবার ফুটতে পারে। তবে গজানো আর না গজানো বীজের ব্যাপার এটি হয়।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, হাকিমপুর উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসি মিলিয়ে ১৯ জন লাইসেন্সধারী দোকানদার রয়েছেন যারা বীজ ও সার বিক্রি করে থাকেন। এর বাহিরে যাদের কাগজ নেই তারাও বীজ বিক্রি করে থাকেন। এছাড়াও কেউ যদি ভেজাল ও নিন্মমানের বীজ বিক্রি করে থাকেন সেটি আমাদের অগোচরে করেই থাকেন। আর কৃষকরাও আমাদের অগোচরেই তারা সরাসরি দোকানদারদের নিকট থেকে বীজগুলো কিনে নিয়ে যান। দোকানদাররা সরাসরি কৃষকদের সঙ্গেই এসব বিষয়গুলো দেখভাল করেন।
তিনি বলেন, তবে বীজ না গজানোর বিষয়ে তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ দিলে কেন বীজ গজাচ্ছে না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এমনটা না হওয়াই উচিত যদি তারা সঠিক বীজ ও ভালো বীজ দেয় তাহলে তো বীজ অবশ্যই গাজাবে।
তিনি আরো যোগ করে বলেন, এছাড়াও বর্তমানে আবহাওয়া এত খারাপ নেই যে বীজ গজাবে না। চলতি বোরো মৌসুমে ৩৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বর্তমানে ৩৪০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। এখনও বীজতলা করা অব্যাহত রয়েছে, তাতে করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১১২০
আপনার মতামত জানানঃ