ইজারাদার ও সেবাদাতারা ক্রমেই কৃষকের জায়গা নিচ্ছেন। আগে কৃষকের জমি ও পুঁজি ছিল কৃষির মূল উপকরণ। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যন্ত্রীকরণের কারণে বাজার থেকে পাওয়ার টিলার, রোপণযন্ত্র ও এমনকি ধান কাটার যন্ত্র পর্যন্ত নিতে হচ্ছে। এগুলো ভাড়াতেও পাওয়া যায়।
গতকাল বুধবার(০৩ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান(বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের পারিবারিক কৃষি হারিয়ে যাচ্ছে’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জিওফ উড। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
কৃষিজমির নিয়ন্ত্রণ এখন আর কৃষকদের হাতে নেই। গত চার দশকে দেশে বর্গা, ভাগ বা ইজারা চাষের জমির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ২০ থেকে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে বিনায়ক সেন বলেন, এদের লক্ষ্য কী সেটিই এখন দেখার বিষয়, এরা কি কৃষি খাত শোষণ করার জন্য এসেছে, নাকি সেটি আরও বিকশিত করতে চায়।
মূল প্রবন্ধে জিওফ উড বাংলাদেশের কৃষিজমির ধরন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষের সঙ্গে জমির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সমাজে ও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকায় এখানকার মানুষ নিরাপত্তা হিসেবে জমি রাখতে চায়। কৃষি খাতে অন্যান্য অংশীজনের আগমনের কারণে বৃহদায়তন খামারও গড়ে উঠছে।
তার মতে, দেশে বৃহদায়তন খামার গড়ে ওঠার পাশাপাশি ছোট ছোট জমির মালিকও থাকবেন। এই দুই ধারার সমন্বয়ে দেশে এক মিশ্র কৃষি ব্যবস্থা তৈরি হবে।
২০৫০ সালের মধ্যে কৃষকের জমিতে কাজ করেন, এমন শ্রমিকেরা দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।
তবে তিনি মনে করেন, ২০৫০ সালের মধ্যে কৃষকের জমিতে কাজ করেন, এমন শ্রমিকেরা দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।
দেশের অধিকাংশ মানুষের এক পা গ্রামে, আরেক পা শহরে। গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে। এ প্রসঙ্গের অবতারণা করে অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ২০৫০–৬০ সালের মধ্যে পুরো বাংলাদেশ শহরে পরিণত হবে।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, দেশের মানুষ একসময় বংশানুক্রমে কৃষিকাজ করত। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই, যাদের হাতে কৃষিজমি আছে, তাদের এখন আর কৃষিকাজ করার ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। বরং কৃষিকাজের নিয়ন্ত্রণ এখন এমন মানুষের হাতে, জমির মালিকানার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই।
তারা বলেন, কৃষিজমির মালিকেরা এখন জমি ইজারা দিচ্ছেন, যারা ইজারা নিচ্ছেন, তারাই কৃষিকাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। অর্থকরী ফসলের চাষ বেড়েছে মূলত সে কারণেই। এতে দেশের কৃষির বাণিজ্যিকায়ন ঘটছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, এই ভাগচাষি বা ইজারদারেরা দেশের কৃষিতে কী মাত্রা যোগ করছেন এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা কী ভূমিকা পালন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি গ্রামের মানুষদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের গৃহহীন মানুষদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে মানুষ ঠিকানা পাচ্ছে।
দেশের কৃষি খাত গবেষকদের নজরের বাইরে চলে গিয়েছিল—অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, পরিবর্তনের ধারায় দেশের গ্রামাঞ্চল আবারও মনোযোগের দাবিদার হয়ে উঠেছে। তবে দেশে যতই বৃহদায়তনের কৃষি খামার গড়ে উঠুক না কেন, ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখনো হারিয়ে যাননি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৩
আপনার মতামত জানানঃ