সরকারি হিসাবে এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সারাদেশে ৯ লাখ কৃষকের সত্তর হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলের জমি। সবমিলিয়ে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মধ্যে ১১ কোটি টাকার কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে এর কয়েকদিন পর গতকালই বাড়ানো হল ইউরিয়া সারের দাম।
বিশ্বব্যাপী ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধিকে বিবেচনা করে, কৃষকদের জন্য প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা করেছে সরকার।
গতকাল সোমবার ( ১ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিশ্ববাজারে মূল্য বাড়লেও দেশের কৃষকদের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম বাড়াতে চান না বলে পাঁচদিন আগেই জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তারপরই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলো।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুসারে, ডিলার পর্যায়ে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের দাম আগে ১৪ টাকা হলেও, এখন থেকে তা ২০ টাকা হবে।
চলতি বছরে ইউরিয়া সারের চাহিদার প্রক্ষেপণ রয়েছে ২৬ লাখ টনের। এরমধ্যে সাড়ে ১০ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে দেশের কারখানাগুলোয়; বাকীটা আমদানি করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি মাসে আমন ধান রোপণের জন্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টন ইউরিয়া প্রয়োজন।
গত ২০ জুলাই কৃষিমন্ত্রী জানান, চাষবাসের জন্য অতি-দরকারি ইউরিয়া সার কেনার বিকল্প উৎস সন্ধান করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এসময় তিনি জানান, বিশ্ববাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের দাম ৭০-৮০ টাকা হলেও- স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সারের দাম ১৯ টাকা।
ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষক
এবার তিন দফার বন্যায় ৩৭টি জেলায় সব মিলিয়ে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির ৩৩৪ কোটি টাকার আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির ৩৮০ কোটি টাকার আমন ধান এবং সাত হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২৩৫ কোটি টাকার সবজি এবং ২১১ কোটি টাকার পাটের ক্ষতি হয়েছে।
প্রথম দফায় ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ১৪ জেলায় বন্যায় ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বন্যায় ৩৩৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি এবং ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ১১ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় ৩৪টি ফসলের এক লাখ ১৬ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৪ কোটি টাকা, আর ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৩৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মাত্র ১১ কোটির সহায়তা
বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি জেলার কৃষকদের মধ্যে ১১ কোটি টাকার কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট এক লাখ ৮৫ হাজার কৃষককে প্রায় ১১ কোটি টাকার বীজ, সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
গত শনিবার (৩০ জুলাই) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রথম ধাপে ৯৪ হাজার কৃষককে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার আমন বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৪টি জেলা- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৭০০ কৃষককে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার নাবি জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) আমন বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে ৯০ হাজার কৃষকের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকার পুনর্বাসন সহায়তা বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এরমধ্যে প্রত্যেক কৃষককে ৫ কেজি করে উচ্চফলনশীল আমন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়ার কাজ চলমান আছে।
এছাড়া, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে আগাম শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি বীজ সহায়তার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১২১৫
আপনার মতামত জানানঃ