দুর্নীতির মামলায় মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে আরও ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির জান্তা কর্তৃপক্ষ। সু চির বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন, এমন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে সোমবার এ খবর জানানো হয়েছে।
সূত্র বলেছে, ‘দুর্নীতির চারটি অভিযোগে সু চিকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
ওই সূত্র একই সঙ্গে আরও বলেছেন, অং সান সু চির শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। সর্বশেষ কারাদণ্ডের ব্যাপারে তিনি এখনো কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি।
মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে সু চির দণ্ডের খবর জানিয়েছে। ৭৭ বছর বয়সী সু চিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রচারে তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ডাও খিন কি ফাউন্ডেশনের তহবিলের অপব্যবহার, সরকারি মালিকানাধীন জায়গা বিশেষ ছাড়ে লিজ গ্রহণ এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়ি তৈরির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চির বয়স এখন ৭৭ বছর। তবে সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার পর থেকে এই প্রথম তিনি দণ্ডিত হলেন না। দুর্নীতি, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি, করোনার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন এবং টেলিকমিউনিকেশন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই তার মোট ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ এনেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। একাধিক মামলায় জান্তা আদালতে সু চির বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে অং সান সু চির কয়েক দশকের কারাদণ্ড হতে পারে।
সূত্র মতে, মিয়ানমারের নোবেলজয়ী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা সরকার দুর্নীতি থেকে শুরু করে নির্বাচনে জালিয়াতিসহ অন্তত ১৮টি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বমোট ১৯০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।
সু চির মামলার শুনানিতে সাংবাদিকদের আদালতে হাজির হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। ফলে তাঁর মামলা এবং এর বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। এমনকি সুচির কোনো আইনজীবীর পক্ষেও মামলা নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার কোনো ধরনের অনুমতি নেই।
পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের দেওয়া হিসাবে, অভ্যুত্থানের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করেন। কয়েক মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ।
অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে সেনাবাহিনী গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ব্যাপক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি জয় পাওয়ার পর সেনা-সমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলো জালিয়াতির অভিযোগ করে। পরে বিরোধীদের এই অভিযোগে সমর্থন জানিয়ে সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী।
জান্তা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির হাজার হাজার মানুষকে কারাবন্দী এবং অসংখ্য মানুষের ওপর সৈন্যরা নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধও সংঘটিত করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সু চির গোপন বিচারকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘মামলার রায় সু চির অধিকারের ওপর ভয়ানক হামলা এবং তাকে ও এনএলডিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ।’
এই মামলার রায়ের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। যদিও এর আগে সু চির মামলা স্বাধীন বিচার বিভাগ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে পরিচালনা করছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে মিয়ানমারের এই নেত্রীর মামলায় বিদেশিদের সমালোচনাকে হস্তক্ষেপের সামিল বলে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১২১৫
আপনার মতামত জানানঃ