রাশিয়ার ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) আমদানির পর দেশে এনে সেগুলো পরিশোধনের পর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছে ভারত। শুধু তাই নয়, উৎস লুকিয়ে ফেলতে পরিশোধিত তেল মাঝ-সমুদ্রে নিয়ে জাহাজে লোড করার পর সেগুলো নিউইয়র্কে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভারত এমন কৌশলে জ্বালানি তেল রপ্তানি করছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন।
ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে মতানৈক্যের জেরে প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধে জেরবার বিশ্ব। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্যপণ্য ও তেলের সরবরাহসহ নানা সমস্যায় পড়েছে বিশ্ব। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের সমঝোতার মধ্য ইউক্রেন থেকে ভুট্টা ও গমের চালান বিশ্বে পৌঁছানো শুরু করেছে।
রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারত ও চীন তোপের মুখেও পড়েছে। যুদ্ধের পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর ভারত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল যাচ্ছে বলে দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
দ্য লাইভ মিন্টের খবরে বলা হয়েছে, আমেরিকার দাবি, রাশিয়ার জাহাজ থেকে আনা তেলই পাঠানো হচ্ছে নিউইয়র্কে। আর তেল পাঠানোর কাজ করছে ভারত। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। রাশিয়া পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমেরিকার।
তাদের দাবি, সমুদ্রপথে রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে তা নিউইয়র্কে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আমেরিকায় জ্বালানি তেল আনা হয়েছে, তা গোপন করা হচ্ছে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ভারতকে জানিয়েছে, গভীর সমুদ্রে ভারতের জাহাজ রাশিয়ার তেলের ট্যাংকার থেকে জ্বালানি তেল ভরে গুজরাটের বন্দরে আনছে। সেখানে তেল পরিশোধনের পর তা আমেরিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার আমেরিকার এ দাবির কথা জানিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি গভর্নর (আর্থিক নীতিবিষয়ক) মাইকেল পাত্র।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি গভর্নর মাইকেল পাত্র বলেছেন, মার্কিন রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে— ভারতীয় একটি জাহাজ গভীর সমুদ্রে রাশিয়ার ট্যাঙ্কার থেকে তেল নেওয়ার পর দেশটির পশ্চিমের উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের বন্দরে যায়। পরে সেখানে তেল পরিশোধনের পর আবারও জাহাজে তোলা হয়।
তিনি বলেন, পরিশোধিত তেল সেই জাহাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট কোনও গন্তব্য ছাড়াই সেটি যাত্রা শুরু করে। পরে মাঝ-সমুদ্রে এই জাহাজের গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়। তখন সেটি গতিপথে ফিরে নিউইয়র্কে যায়।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমেরিকার এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন মাইকেল পাত্র। তিনি জানান, আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনোও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে লাইভ মিন্টের খবরে বলা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসনের দায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর আওতায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল, পরিশোধিত জ্বালানি, কয়লা এবং গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে।
তবে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের উদ্বেগের ব্যাপারে ভারতের কোনও কর্মকর্তা প্রকাশ্যে প্রথমবারের মতো এসব কথা বলেছেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি নয়াদিল্লি। এমনকি মস্কো তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আগ্রাসন শুরু করলেও ভারত নিন্দা জানায়নি।
মাইকেল পাত্র বলেন, তাকে বলা হয়েছিল রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করার পর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তৈরির জন্য ব্যবহৃত পাতনে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তবে তিনি ভারতীয় সেই জাহাজ কিংবা শোধনাগারের পরিচয় প্রকাশ করেননি। তিনি বলেছেন, এক্ষত্রে তাই ঘটেছে যেভাবে যুদ্ধ কাজ করে। এটি অদ্ভুত উপায়ে কাজ করে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং ভোক্তা দেশ ভারত। দেশটি অতীতে খুব কমই রাশিয়ার তেল কিনেছিল। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক পশ্চিমা দেশ এবং কোম্পানির রাশিয়ার তেল ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে মূল্য ছাড় দেওয়ায় ভারতীয় তেল শোধনাগার কোম্পানিগুলো রাশিয়া তেলের আমদানি বৃদ্ধি করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৪৬
আপনার মতামত জানানঃ