দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে টানা ১৩ বছরের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন সময় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আর এই কঠিন সময়ে উত্তরণের পথ নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচনের সময় দেড় বছরের কম। এই দেড় বছর সময়টিকে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়।
এই সময়টি স্বস্তিদায়কভাবে পার করাটাই হলো আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নানা কারণেই আওয়ামী লীগ এখন চাপের মধ্যে আছে এবং সামনের দিনগুলো আরও বন্ধুর এবং কঠিন হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এখন আর কোনো লুকোচুরি নেই। এটি দৃশ্যমান, প্রকাশ্য। ডিজেলের মূল্য অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক দম বন্ধ অবস্থা বিরাজ করছে।
এটি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারাই মনে করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও গোপনে বলছেন যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এটি মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
সরকারের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার যে কৌশল, সে কৌশল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট মহাজোটের অন্যতম শরিফ জাতীয় পার্টি দুইদিন ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। বিএনপি যে কর্মসূচিগুলো দিচ্ছে সেই কর্মসূচিগুলোতে এখন লোকসমাগম বাড়ছে বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা স্বীকার করছেন।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের শরীক ১৪ দলীয় জোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এই জোট গঠন করেছিল। কিন্তু এই জোটের শরিকরা এখন আওয়ামী লীগের বহু সিদ্ধান্তের সঙ্গেই একমত হতে পারছেন না।
বরং তারা বলছেন যে, এই সব সিদ্ধান্তের দায়ভার শরিকরা নিবে না। শেষ পর্যন্ত এই জোট থাকবে কিনা এ নিয়েও এখন সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি কঠিন পরীক্ষা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, নির্বাচনের আগে তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রকাশ্যে সরকারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।
সম্প্রতি মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে চলে এসেছে। নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরকম বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল এবং কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আর এই জন্যই আওয়ামী লীগের জন্য সামনের দেড়টা বছর অত্যন্ত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ